
শাহিদুর রহমান দিরাই প্রতিনিধি:
দিরাই-শাল্লা আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন রোববার, হাওরাঞ্চলে আনন্দের জোয়ারপ্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্বপ্নের বহুল প্রত্যাশিত দিরাই-শাল্লা আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণ কাজের শুভসুচনা হতে যাচ্ছে আগামীকাল রোববার। সুরঞ্জিত পত্নী ড. জয়া সেনগুপ্তা এমপি আনুষ্ঠানিকভাবে এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করবেন।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পর দিরাই-শাল্লা সংযোগ সড়ক স্থাপিত হওয়ার খবরে হাওর অধ্যুষিত দুই উপজেলাবাসির মধ্যে বইছে আনন্দের জোয়ার।উক্ত সভায় ‘মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলসুখা-আজমিরীগঞ্জ জেলা মহাসড়ক (জেড-২৮০৭)-এর দিরাই-শাল্লা অংশ পুনঃনির্মাণ’ প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়।
সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)।প্রকল্পে দিরাই-শাল্লা অংশের ২০ কিলোমিটারসহ মোট ২২ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, ১২টি সেতু ও ১৫ টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।
জানা যায়, একনেকে অনুমোদিত প্রকল্প অনুযায়ী দিরাই-শাল্লা সড়কসহ প্রকল্পে মোট ২২ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার সড়কের কাজ করা হবে। এর মধ্যে দিরাই-শাল্লা সড়কের ২০ কিলোমিটার ও দিরাই-মদনপুর সড়কের ২ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
দিরাই-মদনপুর সড়কের দিরাই বাস টার্মিনাল, নোয়াখালী বাজার ও পাথারিয়া বাজার এলাকায় আরসিসি ঢালাই করে নতুন করে সড়ক নির্মাণ করা হবে। পুরো সড়কটি নির্মাণ হবে ৩২ দশমিক ০৫ ফুট প্রস্থ করে। এর মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্যে থাকবে ২৬ ফুট এবং বাকিটুকু সড়কের উভয়পার্শ্বে থাকবে মাটির সড়ক। দিরাই-মদনপুর সড়কের বৃহৎ কাঠইর সেতু, বগলাখাড়া সেতু ও দরগাহপুর সেতু নির্মাণ হবে এ প্রকল্পে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১ সালে প্রকল্প প্রস্তাবনা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অভ্যন্তরীণ যাচাই-বাছাই করে কমিটিকে সড়ক নির্মাণের জন্য ৫৫১ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা নির্ধারণ করা হয়। পরে ডিজাইন সেকশন থেকে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রকল্প প্রস্তাবনা ৮৫৭ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। প্রকল্প ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ দল সরেজমিন সড়কটি পরিদর্শন করেন। এরপর প্রকল্প ব্যয় কমিয়ে ৬২৮ কোটি নির্ধারণ করা হয়।
দুই উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উপমহাদেশের প্রখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান, জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের উদ্যোগে ২০১০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে দিরাই-শাল্লা সড়কের কাজ শুরু হয়। ৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯১ কোটি টাকা। ২০১০ সালে কাজ শুরুর পর সড়কের মাটির কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ করা হয়। ১০ কিলোমিটার পুরোপুরি পাকাকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সড়কের অনেক জায়গার মাটি প্রবল ঢেউয়ে হাওরের সাথে মিশে যায়। পাকা অংশ ভেঙে তৈরি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। অনেক সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হলেও নির্মাণ হয়নি সংযোগ সড়ক। ফলে সড়ক যোগাযোগ আর পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি।
প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পত্নী ও দিরাই-শাল্লার সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা সড়কটি নির্মাণে একাধিক বার জাতীয় সংসদে দাবি উত্থাপন করেন। জয়া সেনের দৃঢ় প্রচেষ্টায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্বপ্নের এই সড়ক নির্মাণ বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। উল্লেখিত সড়কটি নির্মাণ হলে নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সাথে দিরাই-শাল্লাবাসি তথা সুনামগঞ্জবাসির যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। এছাড়াও সড়কটি হাওরাঞ্চলের পর্যটনের ক্ষেত্রে উক্ত সড়ক মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে বলে সচেতন মহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রমানিক জানান, দিরাই-শাল্লা সড়কে একেবারে নতুন করে নির্মাণ করা হবে ৯টি সেতু ও ১৫টি বক্স কালভার্ট। দিরাই বাস টার্মিনাল থেকে শাল্লা উপজেলা সদরের কলেজের সম্মুখ পর্যন্ত সড়কটি বর্তমান সড়কের স্থানেই নির্মাণ হবে। তবে পারিপার্শ্বিক দিক বিবেচনায় একটু এদিক-ওদিকও হতে পারে।



