
তুহিনুর রহমান তালুকদার, স্টাফ রির্পোটার :
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী মাইকিং করে ডাকাডাকির পর উভয় পক্ষের ভয়াবহ সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন দুই সন্তানের জনক এক কৃষক যুবক। এতে, উভয় পক্ষের কম হলেও অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হয়েছেন।
(২ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার সকাল থেকে বেলা অনুমান ১০টা পর্যন্ত উপজেলার ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নের জামার গাঁও- রাধাপুর ও ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের কাকুরা-করিমপুর গ্রামের লোকজনের মধ্যে শৌলার পাড় নামকস্থানে এ সঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷
সহস্রাধিক গ্রামবাসীর মধ্যে টানা সংঘর্ষে রক্তাক্ত হয়ে প্রাণ হারান জামার গাঁও-রাধাপুর গ্রামের আব্দুর রউফ মিয়ার পুত্র কৃষক সাব্বির মিয়া (৩৫ নামের এক ব্যক্তি৷ আহতদের মধ্যে ২০জনকে সিলেট এম,এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ও অপর আহতদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে৷
খবর পেয়ে থানা পুলিশ নবীগঞ্জ থানা ওসি আখতারুজ্জামান ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বানিয়াচং ক্যাম্পের মেজয় ফয়ছল আহমদ তাদের সঙ্গিও ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন৷ উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে৷
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান উভয় পক্ষের লোকজন একদিন আগে মাইকে ঘোষনা দিয়ে পরদিন (২ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার সকাল অনুমান ৭টা থেকে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে দেশীয় অস্ত্র শস্র নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন৷
কাকুড়া করিমপুর গ্রামের লোকজনের সাথে স্থানীয় বিবিয়ানা চৌ-রাস্থায় টমটম ও সিএনজি চলাচল নিয়ে গত ১৫/২০ দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।এতে,
কাকুড়া- করিমপুর গ্রামের পক্ষে নেতৃত্ব দেন, মাখন মিয়া ও ইলিয়াছ মিয়া গংরা। রাধাপুর- জামারগাও গ্রামের নেতৃত্ব দেন সাবেক মেম্বার আব্দুল বারিক রনি, ফখরুল ইসলাম ও বর্তমান ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন গংরা।
এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি সদস্য ফখরুল ইসলাম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের কয়েকটি গ্রামের মানুষকে গত কয়েকদিন ধরে কাকুড়া- করিমপুরে লোকজন রাস্তায় পেলেই মারপিট করে আসছিল।
গতকাল রাতে ফয়সল আহমদ নামে একজন ব্যবসায়ী বাড়ি যাওয়ার সময় পথরোধ করে তারা মারপিট করে তার সাথে থাকা টাকা- পয়সা লুটপাট করে নেয়। এসব ঘটনায় আমরা প্রতিবাদ করেছি। তারা আমাদের গ্রামের কৃষক সাব্বিরকে একা পেয়ে মারপিট করে নিহত করেছে। আমরা এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে কাকুড়া গ্রামের মাখন মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের টমটম চালক রাশেদ, সিএনজি চালক মোহাম্মদ আলীকে রাধাপুর ও জামারগাও গ্রামের লোকজন মারপিট করেছে। এমনকি আজকে সকালে আমাদের গ্রামে এসে লাটিসোটা নিয়ে আক্রমণ করেন। এতে আমাদের গ্রামবাসী সহ তাদের সাথে সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হয়েছেন বলে জানাযায়৷
স্থানীয়রা আরো জানান, সকালে কৃষি কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময় সংঘর্ষের তোপের মুখে পড়েন জামার গাঁও গ্রামের কৃষক সাব্বির মিয়া। এসময় প্রতিপক্ষ কাকুরা গ্রামের লোকজন সাব্বিরের উপর হামলা চালিয়ে তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এমন কি মারামারি করার জন্য একটি ট্রাক যোগে ইট ও কনকিট নিয়ে যাওয়ার সময় সাব্বিরের পায়ের উপর দিয়ে তুলা হয়েছে বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতক্ষদর্শীরা জানান।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় উত্তেজনা থাকলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং নিহত সাব্বিরের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকে রাধাপুর গ্রামের বাতাসে বাতাসে শুধু কান্নার সুর বইছে। স্বজনদের বুক ফাটা আহাজারিতে চারপাশের মানুষের চোখে অশ্রু দেখে ধর্য্য ধরা খুবই কঠিন হয়ে যায়।
সবচেয়ে হৃদয় বিদারক দৃশ্যটি নিহত সাব্বিরের দুই অবুঝ ছোট্ট শিশু সন্তান। মাত্র দেড় বছর বয়সী মাহদি হোসেন কিছুই বুঝে উঠতে না পারলেও তার বাবাকে যে হত্যা করা হয়েছে সেটা সে ভালো করেই বুঝেছে৷ এ সময় শিশুটির কান্নায় যেন আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠছিল। বড় সন্তান মাহমুদ যেন নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাবার নিথর দেহের দিকে। অবুঝ শিশু দুটি বাবার জন্য কান্না করে বারবার মূর্ছা যাচ্ছে। পুরো গ্রাম কাঁদছে তাদের সঙ্গে।
স্থানীয় অনেকেই বলেন, রাধাপুর থেকে যাওয়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (টমটম) কাকুরা এলাকায় পৌঁছালে সেখানে থাকা সিএনজি চালকগণ যাত্রিদের জোরপূর্বক নামিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জের ধরে এই সংঘর্ষ ঘটেছে।
এ ব্যাপারে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাব্বির ছিলেন শান্তশিষ্ট একজন কৃষক। পরিবার চালানোর জন্য প্রতিদিন মাঠে কাজ করতেন তিনি।
আজ তার লাশের পাশে শোকে পাথর হয়ে বসে আছে তার স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয় স্বজন শোকের মাতমে রাধাপুর গ্রাম এখন অচল।
এই রক্তাক্ত ঘটনার পর গ্রামজুড়ে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, অপরাধীদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।