শিরোনাম:
শিরোনাম:
জাককানইবি সাংবাদিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত নড়াইলে আ.লীগের অঙ্গসংগঠন ও সাংবাদিকসহ ৭২ জনের নামে মামলা কুষ্টিয়া পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে  বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার রৌমারীতে রাস্তার কাজ বন্ধ দুর্ভোগে এলাকাবাসি আওয়ামী লীগ নেতা তুষার কান্তি ৭ দিনের রিমান্ডে ইদে মিলাদুন্নাবী (স) উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও রেলি অনুষ্ঠিত  দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রয়েছে ওলী আউলিয়াদের, কলকাতার খিদিরপুর খানকা শরীফের ছোট পীর সাহেব সতীঘাটা কামালপুর চাষের মাঠে আমন ধানে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা  ভবদহের স্থায়ী জলাবদ্ধতার সমাধানে টিআরএম চালুসহ নদী রক্ষার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন  সবাই মিলে যদি হই একজোট বাল্য বিবাহ হবে প্রতিরোধ কেশবপুরে এনসিটিএফ এর মনোসামাজিক সহায়তা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত জরুরি বিজ্ঞপ্তি ক্ষমতার পালাবদল হয়ে কি মানুষের ভাগ্যের উন্নতি হচ্ছে ? নড়াইলে চাঞ্চল্যকর আমেনা বেগম হত্যার আসামী আসিফ মোল্লা গ্রেফতার যশোরে নতুন সংগঠন “বৈষম্য বিরোধী সনাতন সমাজ”-এর আত্মপ্রকাশ আমাদের মূল লক্ষ্য জনগণের গণতন্ত্র এখনও ফিরে পাইনি খুলনায় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে ডি‌সির মতবিনিময় নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় খাগড়াছড়িতে মধু পূর্ণিমা উদযাপন ভারতে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে এক বিশাল জৌলুস মিছিল ভবদহ এলাকার অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত শ্রীনগরে ঈদ -ই মিলাদুন্নবী ( সাঃ) উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল নড়াইল লোহাগড়া উপজেলায় ১০২ জনের নামে মামলা অজ্ঞাত ১৫০ যশোরের  ভারী বৃষ্টিতে বিলহরিণার মাঠে কয়েক হাজার বিঘার ধান পানির নিচে  বাংলাদেশ স্থলবন্দরের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ ছোট্ট খোকা মাহিম রৌমারীতে নিখোঁজের ২৭ ঘন্টা পর মরদেহ উদ্ধার কেশবপুরে উপড়ে পড়েছে মধু কবির স্মৃতি বিজড়িত “কাঠ বাদাম” গাছটি রৌমারীতে গোসলে নেমে এক ভাই বেঁচে ফিরলেও অপরজন নিখোঁজ পাঁচ চিকিৎসকে চলে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সতীঘাটায় ভারী বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি প্লাবিত আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার 

দেশের বৃদ্ধাশ্রম হোক নিরাপদ ও শান্তিময়

উপজেলা / জেলা-প্রতিনিধি / ২৯ বার পড়া হয়েছে
সময় বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন

মুহা. মোশাররফ হোসেনঃ

মা বাবা তাদের সন্তানদের উন্নত জীবন লেখাপড়া করিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জীবনের আরাম-আয়েশ সব কিছু ত্যাগ করে থাকেন, জীবনের কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে অকাতরে খরচ করে।‌ দেখা যায় সেই মা-বাবাকে
বৃদ্ধ বয়সে এসে সন্তানের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তখন মা-বাবার নীরবে নিঃশব্দে দু’চোখের পানি ফেলানো ছাড়া কিছুই করার থাকে না। অনেক সন্তান তার বৃদ্ধ মা-বাবাকে অবহেলা ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। মা-বাবা সন্তানের অপমান লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে অনেক সময় স্বেচ্ছায় বেদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে আশ্রয় নেয় অথবা সন্তানরা নিজেরাই রেখে আসেন। এছাড়াও কিছু হতদরিদ্র মানুষ যৌবনের উচ্ছলতা হারিয়ে জীবনের পড়ন্ত বেলায় অচল। এই মানুষগুলোকে দেখার মত আত্মীয় পরিজন কেউই নেই। ঘরবাড়ি ছেলে সন্তানের খবর নেই। বিভিন্ন শহরে স্টেশনে রোডে, মাঠে-ঘাটে পড়ে থাকে তাদের অনেকের বৃদ্ধাশ্রমে স্থান হয় আবার অনেকের হয় না। খুব বিভীষিকাময় জীবন যাপন করে থাকে এই মানুষগুলো। এর কিছু কিছু খবর মিডিয়াতে আসে কিছু আসে না। এসব মনোবেদনার খবর পড়ে মানুষ আবেগাপ্লত হলেও করার কিছু থাকে না। আমাদের দেশে অনেক সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠেছে। সে সমস্ত প্রতিষ্ঠান সন্তানদের অবহেলা জর্জরিত ও পথে ঘাটে পড়ে থাকা অসহায় বৃদ্ধ মানুষকে আশ্রয় দিয়ে থাকে।

জীবনের শেষ সময়ের আবাসস্থল আশ্রমে স্থান হলেও মানবেতর জীবন কাটাতে হয় অনেকে বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে। সেখানে ভালো থাকবে সেই আশায় অনেকেই আশ্রয় নিতে তে আসে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই বৃদ্ধাশ্রমের নামে দেখা যাচ্ছে ব্যাবসা এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা দেখা যাচ্ছে মানবসেবার আড়ালে মিল্টন সমাদ্দারের ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামে বৃদ্ধাশ্রমে চলছে মানব সেবার নামে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে চিকিৎসার নামে পাশবিক নির্যাতন। কিডনি বিক্রির মতো ঘটনা ঘটেছে। এখানে রাস্তা থেকে অসুস্থ, অসহায় ভবঘুরেদের তুলে নিয়ে এসে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও করে সাহায্যের জন্য ফেসবুক এবং মিডিয়াই একাধিক মোবাইল নাম্বার এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দিয়ে সাহায্য পেতে প্রচার করতেন। এমন মানবিক আবেদনে সাড়া পেয়ে দেশ-বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা জমা হত। এমনকি তার এই প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনেক বিত্তশালী মানবিক মানুষ অনুদান দিয়ে আসতেন। তার এই মানবিক কাজের জন্য তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছে মিল্টন সমাদ্দার।

কিন্তু মানবিকতার আড়ালে ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন তিনি। প্রকৃতপক্ষে তিনি যে কয়জনকে লালন-পালন করছেন, তার চেয়ে প্রচার-প্রচারণা করছেন কয়েক গুণ বেশি। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে মিল্টনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার নামে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ।

ধীরে ধীরে মিল্টন সমাদ্দারের ব্যক্তি জীবনেও নৈতিকতা বা মানবিকতার খবর বেরিয়ে আসছে।
কিশোর বয়স থেকেই ছিলেন অর্থলোভী। প্রতিবেশী, চিকিৎসক কিংবা সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময় তার কাছে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এমনকি নিজের জন্মদাতা পিতাকেও বেধড়ক মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে মানবসেবার অন্তরালে যে নির্মম ও বর্বরোচিত চিত্র ফুটে উঠেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ ও ন্যক্কারজনক। মানবসেবা পরম ধর্ম, কিন্তু মানবসেবার নামে মুখোশের আড়ালে রাস্তা থেকে অসুস্থ, অসহায় ও নিরীহ মানুষকে তুলে এনে চিকিৎসার নামে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি তা অত্যন্ত ভীতিকর, ন্যক্কারজনক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

আশ্রমে গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালে না নিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে আটকে রাখা, ভুয়া ডাক্তার দিয়ে মৃত্যু সার্টিফিকেট তৈরি করা কিংবা মরদেহের শরীরে কাটাছেঁড়ার যে তথ্য মিডিয়াতে উঠে এসেছে তার যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করি। যদিও মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের মামলায় মিল্টন এখন ডিবির হেফাজতে রিমান্ড আছেন। এর মধ্যে তার অপকর্মের অনেক ভয়াবহ রোমহর্ষক ঘটনার
তথ্য পেড়িয়ে আসছে। তার সাথে যারা জড়িত তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনা হোক। মিল্টন সমাদ্দারের বিচার দেখে যারা এমন অমানবিক কাজ করছে তারাও যাতে সংশোধন হয় সেভাবেই কঠোর বিচার করা দরকার।

ঘরছাড়া অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের নাম বৃদ্ধাশ্রম। এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্যোগ ছিলো শান রাজবংশের। খ্রিষ্টপূর্ব ২২০০ শতকে পরিবার থেকে বিতারিত বৃদ্ধদের জন্য আলাদা এই আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে ইতিহাসে আলাদা জায়গাই দখল করে নিয়েছে এই শান রাজবংশ। পৃথিবীর প্রথম প্রতিষ্ঠিত সেই বৃদ্ধাশ্রমে ছিল বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আরাম-আয়েশের সব রকম ব্যবস্থাই। ছিল খাদ্য ও বিনোদনের সব ধরনের শু-ব্যবস্থা।

বৃদ্ধদের আরাম আয়েশ ও বিনোদনব্যবস্থা নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের শুরু হলেও, আজো বৃদ্ধাশ্রম নামটি শুনলেই চোখের সামনে ধরা দেয় ক্রন্দনরত মায়ের মুখ, ম্রীয়মান বাবার দুর্বল চাহনি। মনে পড়ে যায় নচিকেতার বিখ্যাত সেই গানটি- ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার/ মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার/
নানান রকম জিনিস, আর আসবাব দামি দামি/
সবচেয়ে কম দামি” ছিলাম একমাত্র আমি/
ছেলের আমার, আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম/ এই গানটির কথাগুলো অনেককে করেছে মর্মাহত। এটা ঠিক যে, গানের এই চিত্র দেখতে পাওয়া যায় প্রায় প্রতিটি বৃদ্ধাশ্রমের প্রত্যেক সদস্যদের।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গড় আয়ু বেড়ে দেশের মোট জনসংখ্যার সাত ভাগ প্রায় সোয়া এক কোটি এখন প্রবীণ জনগোষ্ঠী। ২০৫০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হবে প্রায় ২০ ভাগ। কিন্তু এই সংখ্যাটা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বেড়ে যাচ্ছে হতাশাও।

একটি জরিপে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের শতকরা ৮৮ শতাংশ বৃদ্ধের এক বা একাধিক সন্তান বাইরে থাকে। অর্থাৎ, তাদের সাথে তাদের পিতামাতার যোগাযোগ খুব তেমন একটা নেই। আর শতকরা ২০ জন, দরিদ্র প্রবীনদের শতকরা ৩৭ জন একাকী থাকেন অথবা কেবল স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে থাকে।

এদিকে, সরকার প্রবীণদের জন্য বয়স্ক ভাতা চালু করাসহ বেশ কিছু সুবিধা চালু করেছে। এছাড়া, সরকার কর্তৃক সহায় সম্বলহীন প্রবীণদের জন্য ৬টি বিভাগে ৬টি বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও বেশ কয়েকটি বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উড়েছে। তবে দেশে মোট কতজন প্রবীণ এই বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে বসবাস করছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান সরকারিভাবে নেই।

তবে বেসরকারি সংস্থা প্রবীণ হিতেষী সংঘের হিসাবে, দেশের এক কোটি ১৭ লাখের বেশি প্রবীণের মধ্যে অনেকেরই নেই জীবন যাপনের নিশ্চয়তা। ২০৫০ সালে প্রবীণের সংখ্যা হবে সাড়ে চার কোটি, জনসংখ্যার প্রতি পাঁচ জনের একজন হবে প্রবীণ।

প্রবীণদের হতাশা, অনিশ্চয়তা দিনদিন বেড়েই চলেছে। নিজেদের নিয়ে শঙ্কা বা সংশয় কোনোটিরই নিশ্চয়তা নেই দেশের এই ১৭ লাখ প্রবীণের কাছে। সমাধানও জানা নেই। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশকে এই শঙ্কা থেকে মুক্ত করতে পারে, তবে প্রয়োজন শুধুমাত্র মানসিকতার পরিবর্তন।

পরিশেষে বলবো, দেশের বৃদ্ধাশ্রম হোক নিরাপদ ও শান্তিময় সেই প্রত্যাশায় দেশে যতগুলো বৃদ্ধাশ্রম আছে সেগুলোর দিকে নজর দিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সাথে সাথে এই মিল্টন সমাদ্দারের সকল তথ্য তদন্ত করে তাকে আইনের আওতায় এনে এমন শ্বাস্তি দেওয়া হোক যাতে করে এই মিল্টন সমাদ্দারের মত আর কোন লোক সমাজে যেন গড়ে উঠে এমন নির্মম বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড করতে না পারে।

লেখক: কবি, কলামিস্ট ও সাংবাদিক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

একাধিক নিউজ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
error: Content is protected !!