Tuesday, October 14, 2025

৫ অক্টোবর ভবদহ দিবস উপলক্ষে মশিয়াহাটীতে গণসমাবেশ

Date:

Share post:

স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ

যশোরের দুঃখ হিসাবে পরিচিত ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর অভয়নগরের যশোর-খুলনা মহাসড়কে অনুষ্ঠিত জনসভায় তৎকালীন সরকারের পেটুয়া পুলিশ জলাবদ্ধ এলাকার নিরীহ জনগণের উপর হামলা করে।

এতে অনেকেই মারাত্মক আহত হয়ে স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকেই।দিবসটি স্মরণ করে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি ভবদহ দিবস হিসেবে পালন করেন।

তারই ধারাবাহিকতায় দিবসটি স্মরণ করে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে এক গণসমাবেশের আয়োজন করে।

আজ বিকাল ৪ টায় ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে মশিয়াহাটী মন্দির চত্বরে গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ।
সংগঠনের আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা জনাব ইকবাল কবির জাহিদ ,সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক গাজী আব্দুল হামিদ, সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল,ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি বাংলাদেশ এর আহ্বায়ক ডা. অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, সংগঠনের উপদেষ্টা তসলিম উর রহমান।

সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন এর নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু, কপোতক্ষ নদ বাঁচাও আন্দোলন এর নেতা এড আমিনুর রহমান হিরু, মুক্তেশ্বরী সংস্কার আন্দোলন এর নেতা আলাউদ্দিন, জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রদের যশোরের সমন্বয়ক রাশেদ খান, চেয়ারম্যান মনোজিত বালা, মাসুদ শেখ, আব্দুল মান্নান মোল্লা, বাপার আবু সাঈদ প্রমুখ।

২০১৬ সালের ৫ সালের পুলিশি হামলায় আহতদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। মঞ্চে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন তিসা চামেলি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শেখর বিশ্বাস ও শিবপদ বিশ্বাস। সমাবেশ শেষে বাউল গান পরিবেশিত হয়।

উল্লেখ্য হামলা মামলা নিপীড়ন নির্যাতন উপেক্ষা করে ভবদহ অঞ্চলের জলবদ্ধ মানুষ দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে বর্তমান সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে জনগণের যুক্তিসঙ্গত দাবি সমূহ বাস্তবায়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে আমডাঙ্গা খাল সংস্কার, ৮১ কিলোমিটার নদী খনন, ভবদহ স্লুইস গেটের ২১ ভেন্টের ১২টি গেট খুলে দেওয়া ও পর্যায়ক্রমে বিলে বিলে টিআরএম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করেছে। তার ফলাফল লক্ষ্য করা যাচ্ছে, মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছে। এই মহতী উদ্যোগ গ্রহণে আমরা সরকার, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়,ও পানি উন্নায়ন বোর্ডকে অভিনন্দন জানানো হয়।

কিন্তু গৃহীত এসকল সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা ও কিছু অসংগতি প্রকল্প সমূহের লক্ষ্য অর্জনে অন্তরায় সৃষ্টি করছে যা দূর করা জরুরি। তাই এই সমাবেশ নিম্নোক্ত প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে -১। আমডাঙা খাল সংস্কারের টেন্ডার হয়ে গেলেও জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা খাল সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করে রেখেছে ফলে দ্রুত জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করা,২। আমডাঙা খালের স্লুইস গেটের গেটম্যান নাই, গেট ওঠানামা করানো হচ্ছে না, ফলে যে পরিমাণ পানি নিষ্কাশিত হতে পারতো তা হতে পারছে না, এই মুহূর্তে গেটম্যান নিয়োগ ও গেট উঠানামার সুবন্দোবস্ত করা,৩।

২০১২ সাল থেকে কায়েমী স্বার্থবাদী মহলের চক্রান্ত ও তৎকালীন সরকারের গণবিরোধী নীতির কারনে ভবদহ স্রুইস গেটের ২১ভেন্ট ও ৯ ভেন্ট সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে ভবদহ স্লুইস গেট থেকে বড়আউড়িয়া মোহনা পর্যন্ত ৫০-৬০ কিলোমিটার নদী ভরাট করে ফেলেছিল এবং নদী কাটার নামে লুটপাটের কারণে জলবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল।

বর্তমানে ২১ ভেন্টের ১২ টি গেট খুলে দেওয়ায় প্রবল পানি প্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে এবং দ্রুত পানি নেমে যাচ্ছে। এই মৌসুমে বিলে বিলের উল্লেখযোগ্য অংশে ফসল করার জন্য এখনই ২১ ভেন্ট এবং ৯ ভেন্টের সকল গেট খুলে দেওয়া,টেকা ব্রিজের সংস্কার কাজে বাইপাস সড়কে সংকীর্ণ সেতু পানি প্রবাহে প্রবল বাধার সৃষ্টি করছে তাই এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা সেটি প্রশস্ত করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছেনা। অবিলম্বে এই সংকীর্ণ কাঠের ব্রিজ অপসারণ করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা,৪।

এই অঞ্চলে নদী কাটার ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের কাজের মান সম্পর্কে মানুষের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে ৮১ কিলোমিটার নদী খননে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছে। ঠিকাদারদের মাধ্যমে নয়, সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খনন কাজ করা। নদীর সম্পদ উদ্ধার, নদীতট আইন বাস্তবায়ন, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ও খননের মাটি নদী তটের বাইরে ফেলতে হবে।সকল সংস্কার কাজে স্থানীয় শ্রমশক্তিকে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করা।, ৫। নদী খননের পাশাপাশি যুগপৎ টিআরএম চালুর উদ্যোগ নিতে হবে তা না হলে নদী খননের সুফল পাওয়া যাবে না।আবার ভরাট হয়ে যাবে। ৬।বিলে বিলে পর্যায়ক্রমে টিআরএম বাস্তবায়নের উদ্যোগকে দ্রুততর করা এবং তা বাস্তবায়নে যেকোনো প্রতিকূলতা নিরসনে সরকারের কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং উজানে নদী সংযোগের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া, ৭। ঘের নীতিমালা বাস্তবায়ন ও তার আইনি অধিকার নিশ্চিত করা। নদী -খালের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা,৮।৫ই অক্টোবর ২০১৬ ভবদহ আন্দোলনরত নারী-পুরুষের উপর নওয়াপাড়ায় হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচার করা এবং জলবদ্ধ জিইয়ে রাখার জন্য কায়েমি স্বার্থবাদী মহল ও সংশ্লিষ্টদের বিচার করা।

উপরোক্ত প্রস্তাব বাস্তবায়নে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ভবদহের ২১ ও ৯ ভেন্টের সকল স্লুইসগেট খুলে দেওয়া এবং আমডাঙা খাল এর জমি অধিগ্রহণ ও গেট ম্যান নিয়োগ গেট উঠানামার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। এ কাজ সম্পন্ন করতে পারলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এবারই বিলে বিলে ফসল করতে সক্ষম হবে।

১৫ দিনের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন না হলে ২১ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেওয়া হয় ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

মণিরামপুরে আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

‎মণিরামপুর প্রতিনিধিঃ সমন্বিত উদ্যোগ,প্রতিরোধ করি দূর্যোগ! এ প্রতিপাদ্যকে বাস্তবায়নে সারা দেশের ন্যায় যশোরের মণিরামপুরে আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস...

আজ ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হল বিজয়া সম্মেলনী

কলকাতা থেকে নিউজ দাতা মনোয়ার ইমাম: আজ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের বিষ্ণুপুর এর আমতলায় জেলা...

রৌমারীতে ক্লাস চলাকালিন সময়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানব’বন্ধন

লিটন সরকার রৌমারী কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : রৌমারী উপজেলার বাইটকামারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস চলাকালিন সময়ে মানববন্ধন করানোর...

বগুড়ায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে সবুজ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার

বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ বগুড়া সদর উপজেলার বারুইপাড়া এলাকায় “বারুইপাড়া সোনালী উন্নয়ন সংঘ”-এর উদ্যোগে “বৃক্ষ বিতরণ অনুষ্ঠান ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার...