Monday, June 2, 2025

লাইলাতুল বরাত এক পবিত্র রজনীর তাৎপর্য

Date:

Share post:

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ইসলামে বিশেষ কিছু রাত রয়েছে, যেগুলো অসীম ফজিলত ও বরকতময়। তন্মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত হলো লাইলাতুল বরাত, যা শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাতকে বোঝায়। এ রাতকে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের রাত বলা হয়। এই রাতে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ দয়া বর্ষণ করেন এবং তাদের গুনাহ ক্ষমা করেন।

লাইলাতুল বরাতের তাৎপর্য ও গুরুত্ব

১. গুনাহ মাফের রাত:
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“শাবান মাসের মধ্যরাতে (১৪ তারিখের রাত) আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার কাছাকাছি আসমানে নেমে আসেন এবং বনু কালব গোত্রের ভেড়ার লোমের সংখ্যার চেয়েও বেশি লোকের গুনাহ মাফ করে দেন।” (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

এ থেকে বোঝা যায়, এ রাতে আল্লাহ বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন এবং তাদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ করেন।

২. তাকদির লিপিবদ্ধের রাত:
অনেক ইসলামী পণ্ডিতের মতে, লাইলাতুল বরাতে আগামী বছরের তাকদির (নিয়তি) নির্ধারণ করা হয়। তবে এ বিষয়টি সরাসরি কুরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা নিশ্চিত নয়, কিন্তু কিছু আলেম সূরা আদ-দুখান-এর ৩-৪ আয়াতের ব্যাখ্যায় এই ধারণা প্রকাশ করেছেন।

৩. রহমত ও বরকতের রাত:
এ রাতে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রতি দয়া বর্ষণ করেন এবং তাদের জন্য দোয়া কবুল করেন। এটি এমন এক রাত, যখন মুমিনদের উচিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, দোয়া করা ও নফল ইবাদতে লিপ্ত থাকা।

লাইলাতুল বরাতের ইবাদত ও আমল

এ রাতে বিশেষ কিছু আমল ও ইবাদত করা সুন্নত নয়, তবে নফল ইবাদতের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। কিছু সুপারিশকৃত আমল হলো:

নফল নামাজ – কেউ চাইলে ২, ৪ বা ৮ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে পারে।
কুরআন তিলাওয়াত – এ রাতে কুরআন পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
দোয়া ও ইস্তেগফার – গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং দোয়া করা।
রোজা রাখা – পরদিন (১৫ শাবান) রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) উৎসাহিত করেছেন।

কিছু ভুল ধারণা ও বিদআত থেকে সতর্কতা

অনেক জায়গায় লাইলাতুল বরাত উপলক্ষে বিশেষ মিছিল, আতশবাজি, খাবার বিতরণ ও সমবেত দোয়ার আয়োজন করা হয়, যা ইসলামের মূল শিক্ষা অনুসারে করা হয়নি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বা সাহাবাদের দ্বারা এ জাতীয় কার্যক্রমের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই এ রাতে শুধু ব্যক্তিগত ইবাদত ও দোয়ার প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত।

লাইলাতুল বরাত হলো এক রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির রাত। এ রাতে আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, নফল ইবাদত করা এবং নিজের তাকওয়া বৃদ্ধি করা। তবে কেবল একটি রাতের ইবাদতই যথেষ্ট নয়, বরং সারা বছর ধারাবাহিকভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলাই প্রকৃত সফলতা।

আসুন, এই রাতের বরকত কাজে লাগিয়ে আমাদের জীবনকে আল্লাহমুখী করি!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

ঢাকুরিয়া বাজারে ঈদুল আযহা উপলক্ষে জমজমাট গরু-ছাগলের হাট স্থায়ীকরণের সিদ্ধান্ত 

এমদাদুল হক মনিরামপুর প্রতিনিধিঃ  আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া বাজারে বসেছে বিশাল গরু-ছাগল ও মহিষের...

কালীগঞ্জে জিয়াউর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী  উপলক্ষ্যে আলোচনা দোয়া ও খিচুড়ি বিতরণ

হুমায়ুন কবির, কালীগঞ্জঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল...

রামনগর পবিত্র ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে অতিদরিদ্রদের মাঝে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ 

মোঃ ওয়াজেদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার: যশোর সদর উপজেলা রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের পবিত্র ঈদ - উল আযহা উপলক্ষে অতিদরিদ্র ও...

যশোরের অভয়নগরে অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্টের মানবিক সহায়তা

স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের ডহর মশিয়াহাটীতে কৃষক দলের নওয়াপাড়া সভাপতি তরিকুল ইসলাম ঘের সংক্রান্ত...