
এস এম তাজাম্মুল,মণিরামপুরঃ
দেশের অন্যতম বৃহত্তর উপজেলা যশোরের মণিরামপুরের ১৭ ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে সরকারি সেবা অব্যাহত রাখতে মধ্যবর্তী সরকারের তত্বাবধানে চেয়ারম্যান অনুুপস্থিত থাকা সাপেক্ষে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে চলেছে।
তথ্য মোতাবেক,যে সমস্ত ইউনিয়ন প্রশাসককে দায়িত্ব প্রদান করা হচ্ছে তারা প্রত্যেকেই এক একটা সরকারি দপ্তরের প্রধান। পরিষদের কার্যক্রম ও জনগণের সেবা চলমান রাখতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগে চলছে ইতিবাচক-নেতিবাচক নানান সব সমালোচনা। দাপ্তরিক প্রধানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্বের কার্যক্রম সম্পর্কে কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে আলাদা আলাদা ভাবে কথা হলে তারাও ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের কাছে। উল্লেখ্য,হাসিনার নিশি রাতের সরকারের ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে চেয়ারম্যানের চেয়ার দখলকারী সৈরাচারী দোসররা তাদের দীর্ঘ শাষনামলে জনগনের সব ধরনরের সেবায় গাফিলতি করে পরিবারতন্ত্র রীতি বাস্তবায়ন করে চলেছিলো। প্রকৃত সেবা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে জনগনকে কি দিয়েছে আর কি পেয়েছে জনগন!অনুসন্ধানের সরেজমিনের তথ্য বলছে,বেশিরভাগ চেয়ারম্যান(জনপ্রতিনিধি) সকল সরকারি সেবা তার পরিবার ও নিকটতমদের চাহিদা পূরন করে নাম মাত্র পৌছাতো প্রকৃত দাবীদার সেবা গ্রহিতাদের পর্যন্ত।
সম্প্রতি উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়ের প্রতিবন্ধী কার্ড এক কেন্দ্রীক ইস্যুর বেপারে বিভিন্ন পত্র পত্রিকাতে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে।উপজেলার আরেক পরিবারতান্ত্রিক সৈরাচারী দূর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান ৯নং ঝাপা ইউনিয়নের সামসুল হক মন্টু ও তার ভাইদের অপরাধী সিন্ডিকেটের দৌরাত্বে জনগন ফুসলে উঠেছিলো। এরকম ঘটনা অহরহ ঘটেছে প্রত্যেক সেবার ক্ষেত্রে যার ভুক্তভোগী সাধারণ জনগন!তবে আগের চেয়ে ভালো সেবা পাচ্ছেন ইউনিয়ন বাসী, এমনটাই উঠে আসা এক জন জরীপের এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের কাছে সচ্ছতার বেপারে স্পষ্ট আভাসও দিয়েছে যশোর জেলা প্রশাসক কর্তৃপক্ষ।জনগন সেবা প্রাপ্তির পরও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির আক্ষেপ অর্থাৎ নির্বাচন চাচ্ছে সাধারণ মানুষ,যুব সমাজ,রাজনৈতিক সহ বিভিন্ন মহল।
প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক,মধ্যবর্তী সরকারের জনসেবা নিশ্বিত করতে যশোর জেলা প্রশাসক মোঃ আজহারুল ইসলামের স্বাক্ষরিত আলাদা আলাদা অফিস আদেশের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী,উপজেলার ১০নং মশ্বিমনগর ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ পেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না,৯নং ঝাপা ইউনিয়নে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল হক,১৪নং দূর্বাডাংগা ইউনিয়নে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মুহাঃ আলমগীর হোসেন,১নং রহিতা ইউনিয়নে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রনজিৎ দাস, ২নং কাশিমনগর-উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা,১১নং চালুয়াহাটি ইউনিয়ন পরিষদ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম শোভন,১৫ নং কুলটিয়া ইউনিয়ন -উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা মোঃ রাজু আহম্মেদকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র বলছে, ছাত্র-জনতার ১দফা আন্দোলনে জুলাই গনঅভ্যুথানের পর বিভিন্ন কেলেংকারি,মামলা,গ্রেফতার ও নিজেদের নিকৃষ্ঠতম কাজের দায়ে নিজে থেকেও অনেক চেয়ারম্যান আত্বগোপনে যাওয়ায় স্থানীয় সরকারের (ইউপি আইন) ২০০৯ এর ১০১ ও ১০২ ধারার আলোকে ১৭ ইউনিয়নের মধ্য ১নং রহিতা,২নং কাশিমনগর,৯নং ঝাপা,১০নং মশ্বিমনগর,১১নং চালুয়াহাটি,১৪ নং দূর্বাডাংগা,১৫ নং কুলটিয়া এই ৭টি ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ ও তাদের সেবার মান নিয়ে আজকের এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সাধারন জনগনও মতামত প্রকাশ করেছে।
তথ্য আছে,উপজেলার বাকি ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব,ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ক্লিন ইমেজে থাকা জনপ্রতিনিধিদের সেবায় চলছে কার্যক্রম।তবে ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যদের (মেম্বার) একটি বড় অংশ ফ্যাসিস্টদের তালিকার লিস্টে থাকায় তারা নিজেরায় কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
চেয়ারম্যানের চেয়ারে সরকারি প্রশাসকের সেবার মানে ক্ষোভের চেয়ে সন্তোষ প্রকাশের ভাগটা একটু বেশিই পাওয়া গেছে মণিরামপুর উপজেলার ৭ ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের দেওয়া স্বাক্ষাতকারে।অনেকেই জানিয়েছেন সরকারি বরাদ্ধের সমস্ত কিছুই সঠিক যাচাই-বাচায়ে শতভাগই পাচ্ছে জনগন।তবে পরিষদের প্রধানের স্বাক্ষরভিত্তিক কাজগুলো দ্রুত সময়ে পেতে একটু বিলম্ব হচ্ছে।
এদিকে প্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়া কয়েক জন কর্মকর্তার মধ্য উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মুহাঃ আলমগীর হোসেন ১৪ নং দূর্বাডাংগা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জানান,দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে তেমন কোন সমস্যা না হলেও পরিষদের কার্যক্রমে জনগনের জন্য বরাদ্দকৃত ব্যবস্থার বিপরীতে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়ে প্রকৃত যাচাই-বাছাই করে সেবা দিতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে।তিনি আরো জানান,যদি স্থানীয় ইউপি সদস্যরা(মেম্বার) সহযোগিতা করে তাহলে আরো ভালো সেবা দেওয়া সম্ভব।
চলতি মাসের ১ম সপ্তাহে উপজেলার ১১ নং চালুয়াহাটি ইউনিয়নের প্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়াকে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের কথা জানিয়ে জনগনের সেবা শতভাগ প্রদানের সর্বোচ্চ চেষ্টার আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন মণিরামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ সাইফুল ইসলাম শোভন।
উপজেলা প্রশাসনের দাপ্তরিক কাজ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিয়ন প্রশাসকের সেবাদান এ ২টি বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের স্বচ্ছতা বজায় রেখে উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্বশীল হিসাবে প্রমান দিতে উপজেলা প্রশাসনের স্ব স্ব দপ্তরেই নির্ধারিত ইউনিয়নের সমস্ত বিষয়াদির সেবার দরজা ইউনিয়ন বাসীর জন্য উন্মুক্ত করেছেন প্রশাসনিক এ সমস্ত কর্মকর্তারা।
উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বভার,বর্তমান প্রেক্ষাপট,জনগনের সুযোগ-সুবিধা,সেবার মান সহ সাধারণ জনগনের স্থানীয় নিরাপত্তা জনিত বিবিধ সহায়তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ছাড়া আপেক্ষিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে সাধারণ জনগন হতে সমস্ত মহলের কাছে।
এদিকে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ও জনগনের মৌলিক,গনতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি(চেয়ারম্যান) নির্বাচন অতিব জরুরী বলে জানান মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এড শহীদ মোঃ ইকবাল হোসেন। এ সময় তিনি আরো বলেন,সবার আগে জনগন! জনগনের প্রাপ্য সেবা সঠিক বন্টন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সর্ব প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিকল্প কিছু নাই।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না’র সাথে যোগাযোগ করা হলে নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যাস্ত থাকায় যশোর জেলা প্রশাসক মোঃ আজহারুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ হলে এ প্রতিবেদককে তিনি স্পষ্ট জানান,শূন্য থাকা সাপেক্ষে দায়িত্বে দেওয়া প্রশাসকের কোন ধরনের অসঙ্গতি পেলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে জনগনের সেবা শতভাগ দিতে জেলা প্রশাসন মধ্যবর্তী সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক চলমান থাকবে।