
লুৎফর রহমান লিটন, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে আসিফ হোসেন (১৮) নামে এক কলেজছাত্রকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী ও তানভীর শাকিল জয়সহ ৩৭৭ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রোববার (২৩ মার্চ) নিহত আসিফের মা আসমানী খাতুন সিরাজগঞ্জ সদর থানা আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় হেনরী ও জয়সহ ৭৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, পাশাপাশি আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। নিহত আসিফ সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার একডালা পুনর্বাসন মহল্লার নজরুল ইসলামের ছেলে এবং সিরাজগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র।
সিরাজগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর কর্নেল জানান, বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম শাহরিয়ার শহীদ বাপ্পী মামলাটি আমলে নিয়ে সদর থানার ওসিকে এটি এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমন্বয়কদের আহ্বানে আন্দোলনে অংশ নিতে শহরের চৌরাস্তা মোড়ে যায় আসিফ। সেখানে দুপুর ২টার দিকে ভিক্টোরিয়া কোয়ার্টার থেকে সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরী ও তানভীর শাকিল জয়ের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা নিয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়।
এ সময় ছাত্র-জনতা ছোটাছুটি করতে থাকলে, আসিফ হোসেন ও তার বন্ধু শাহীন শেখকে ধরে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয় এবং হত্যা করা হয়। পরে তাদের মরদেহ সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বাড়ির বাথরুমে লুকিয়ে রাখা হয় এবং গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
নিহত আসিফের মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়। পরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হলে, গত ৪ মার্চ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরী, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি তানভীর শাকিল জয়, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর বারী শেখ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাকিম, কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী এবং কাজিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল হান্নান তালুকদার।
এই মামলার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।