Tuesday, October 14, 2025

ভালোবাসা দিবস উৎস, ইতিহাস ও উদযাপন

Date:

Share post:

স্বীকৃতি বিশ্বাস:

ভালোবাসা মানুষের জীবনের এক অনন্য অনুভূতি, যা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব কিংবা পোষ্য প্রাণীর প্রতিও গভীর স্নেহ ও মমতার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। ভালোবাসার আবেগ নিঃস্বার্থ, প্রতিশ্রুতিপূর্ণ এবং মানবিক, যা আত্মিক বন্ধনের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে সমৃদ্ধ করে।

ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি সম্পর্কে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাহিনীটি জড়িয়ে আছে তৃতীয় শতাব্দীর রোমান ধর্মযাজক ও চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে। রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লদিয়াস বিশ্বাস করতেন, অবিবাহিত সৈন্যরা বেশি দক্ষ, তাই তিনি সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিয়ে নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এই অন্যায় আইন মেনে নিতে পারেননি এবং গোপনে প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিবাহ সম্পন্ন করাতেন। এটি জানাজানি হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

একটি ভিন্ন কাহিনিতে বলা হয়, কারাগারে থাকাকালীন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এক অন্ধ মেয়েকে সুস্থ করে তোলেন, যিনি এক কারারক্ষীর কন্যা ছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি মেয়েটিকে একটি চিঠি লিখেছিলেন, যার শেষে লেখা ছিল “লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন”। এই চিঠিই পরবর্তী সময়ে ভালোবাসার প্রতীক হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে পঞ্চম শতাব্দীতে পোপ গেলাসিয়াস এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে ঘোষণা করেন।

ভালোবাসার মতো আবেগের কোনো জাত, ধর্ম বা ভৌগোলিক সীমা নেই। তাই পশ্চিমা বিশ্ব থেকে এই দিবসের প্রচলন ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে সাংবাদিক শফিক রহমান ভালোবাসা দিবসের প্রচলন করেন। তিনি লন্ডনে পড়াশোনার সময় পশ্চিমা সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসেন এবং দেশে ফিরে ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার মাধ্যমে ভালোবাসা দিবসের ধারণা প্রচার করেন। এ কারণেই অনেকেই তাকে “বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের জনক” বলে থাকেন।

বাংলাদেশে ১৪ ফেব্রুয়ারি শুধু ভালোবাসা দিবসই নয়, একই দিনে বসন্ত উৎসবও পালিত হয়। বসন্তের আগমনী উৎসবের সঙ্গে ভালোবাসার উদযাপন মিলেমিশে এক আনন্দঘন আবহ তৈরি করে। তরুণ-তরুণীরা এই দিনটিতে বিশেষভাবে সাজগোজ করে, ফুল ও উপহার বিনিময় করে এবং প্রিয়জনের সঙ্গে দিন কাটায়। শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাই নয়, বন্ধু-বান্ধব, স্বামী-স্ত্রী, এমনকি মা-সন্তানের মধ্যেও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে। পার্ক, ক্যাফে ও বিনোদনকেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়, যেখানে সবাই আপনজনের সঙ্গে সময় কাটাতে আসে।

ভালোবাসা শুধু একটি দিনের জন্য নয়, এটি সারা বছর জুড়েই জীবনের প্রতিটি পরতে বহমান থাকা উচিত। ভালোবাসা দিবস কেবল উদযাপনের উপলক্ষ, কিন্তু প্রকৃত অর্থে ভালোবাসার প্রকৃত মূল্যবোধ বোঝা ও পালন করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

মণিরামপুরে আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

‎মণিরামপুর প্রতিনিধিঃ সমন্বিত উদ্যোগ,প্রতিরোধ করি দূর্যোগ! এ প্রতিপাদ্যকে বাস্তবায়নে সারা দেশের ন্যায় যশোরের মণিরামপুরে আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস...

আজ ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হল বিজয়া সম্মেলনী

কলকাতা থেকে নিউজ দাতা মনোয়ার ইমাম: আজ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের বিষ্ণুপুর এর আমতলায় জেলা...

রৌমারীতে ক্লাস চলাকালিন সময়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানব’বন্ধন

লিটন সরকার রৌমারী কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : রৌমারী উপজেলার বাইটকামারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস চলাকালিন সময়ে মানববন্ধন করানোর...

বগুড়ায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে সবুজ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার

বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ বগুড়া সদর উপজেলার বারুইপাড়া এলাকায় “বারুইপাড়া সোনালী উন্নয়ন সংঘ”-এর উদ্যোগে “বৃক্ষ বিতরণ অনুষ্ঠান ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার...