
আবদুল কাদির জীবন, সিলেট :
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিবিসিসিআই) নির্বাচনে ২০২৪-২০২৬ সেশনের জন্য ডিরেক্টর জেনারেল পদে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের কৃতিমান ব্যক্তি, সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়ন পানাইল গ্রামের সন্তান সলিসিটর দেওয়ান চৌধুরী মাহদি।
গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন ২০২৪) বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিবিসিসিআই এর ডিরেক্টর জেনারেল পদের দায়িত্ব পান তিনি।
৩০ বছরেরও বেশি আগে প্রতিষ্ঠিত, বিবিসিসিআই বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই সংগঠন। চেম্বারটি বিভিন্ন ধরণের শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করে এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার উন্নয়নে কাজ করে। বর্তমানে, বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যে ৪০০টিরও বেশি আইটেম রপ্তানি করে, যার বাণিজ্য মূল্য £3 বিলিয়ন ছাড়িয়েছে।
বিবিসিসিআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে দেওয়ান মাহদির নির্বাচন সংগঠনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং নেতৃত্ব যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্কের আরও বিকাশ ঘটবে এবং চেম্বারের সদস্যদের এবং বৃহত্তর ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সেবা করার লক্ষ্যে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেওয়ান মাহদির পেশাগত যাত্রায় নেতৃত্বের ভূমিকা রেখেছেন বিশাল। তিনি ২০২১-২০২২ অধিবেশন চলাকালীন উল্লেখযোগ্য ব্রিটিশ বাংলাদেশী ঐতিহ্যের আইনজীবীদের একটি নেতৃস্থানীয় সংগঠন “সোসাইটি অফ ব্রিটিশ বাংলাদেশ সলিসিটরস”র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে, তিনি ৭৫,০০০ হাজারেরও বেশি ভোটারের একটি সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা Dagenham and Rainham “কনজারভেটিভ অ্যাসোসিয়েশন”র চেয়ারম্যান হিসাবে তার রাজনৈতিক দক্ষতা প্রদর্শন করেছিলেন।
আইনি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রবেশের আগে মাহদি কর্পোরেট সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। ২০০৯ সালে, তিনি যুক্তরাজ্যের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় টেলিকম অপারেটর ০২-তে যোগদান করেন। সেখানে তার সাফল্য তাকে স্যার অ্যালান সুগারের অধীনে পাম সেলস অ্যাপ্রেন্টিস প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান তিনি।
মাহদির কমিউনিটি সেবা এবং নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশে তার শিকড় পর্যন্ত প্রসারিত। তিনি সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের সোসাইটির আজীবন সদস্য। ২০০৬-২০০৭ সময়কালে, তিনি রোটার্যাক্ট ক্লাব অব সিলেট সুরমার নেতৃত্ব দেন, যেখানে তার গতিশীল নেতৃত্বে ক্লাবটি বাংলাদেশের সেরা ক্লাবের খেতাব অর্জন করে। তিনি ২০০৬ সালে ভারতে সাউথ এশিয়ান রোটারি ইয়ুথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
কর্মজীবনের প্রথম দিকে দেওয়ান মাহদি সিলেট স্কোলারসহোম কলেজের কম্পিউটার সাইন্সের প্রভাষক এবং সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তিনি সাহিত্য সংস্কৃতির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ও সাংবাদিকদের তাদের কাজের মূল্যায়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন “দেওয়ান আহবাব-কেমুসাস স্বর্ণপদক”। এটার মাধ্যমে প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখকদের স্বীকৃতি প্রদানের একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা । সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের প্রতি যে তাঁর ভালোবাসা এটা বড় উদাহরণ।
দেওয়ান মাহদি সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়ন পানাইল গ্রামের সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারের সন্তান। তাঁর পিতা দেওয়ান গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মাতা আলিয়া চৌধুরী সুনামগঞ্জ হরিনাপার্টি জমিদার কন্যা। দেওয়ান চৌধুরী মাহদির দাদা সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, ভাষাসৈনিক, বিদ্যাবিনোদ দেওয়ান আহবাব চৌধুরী ছিলেন আসাম বিধানসভার সদস্য (১৯৩৭) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ও সিনেটের সদস্য (১৯৪৪)।
দেওয়ান মাহদি পড়াশোনা করেছেন, সিলেট এইডেড হাইস্কুল থেকে এসএসসি, মদনমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি, লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সাইন্স বিভাগে বি.এসসি (সম্মান) ডিগ্রী, লন্ডন ইউনিভার্সিটি অব ল থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশ উভয় ক্ষেত্রেই ক্যারিয়ার এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেওয়ান মাহদি বিবিসিসিআইকে সমৃদ্ধি এবং সহযোগিতার নতুন যুগে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
উল্লেখ্য ; যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে রফিক হায়দার, ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল হায়াত মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, আতাউর রহমান, ডিরেক্টর জেনারেল পদে দেওয়ান চৌধুরী মাহদি ও ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল এমদাদ আহমেদ, ফাইন্যান্স ডিরেক্টর হেলাল উদ্দিন খান, লন্ডন রিজিওনাল প্রেসিডেন্ট মনির আহমেদ, ডিরেক্টর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স মঈন উদ্দিন, ডিরেক্টর মেম্বারশিপ মো. আবদুল মুমিন, ডিরেক্টর কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স আহমেদ হাসান ও ডিরেক্টর প্রেস পাবলিসিটি মিসবাহ আহমেদ বিএস চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন।
এই নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। এ ছাড়া মোহাম্মদ খালেদ নুর ও লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়েরসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের অধীনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচন–পরবর্তী এক্সেলের ক্রাউন প্লাজা হোটেলের হলরুমে আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম, বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীসহ বিভিন্ন বারের মেয়র, কাউন্সিলর, সাংবাদিক ও কমিউনিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।