হাড় কিপটে শশুর

লেখক: Rakib hossain
প্রকাশ: 1 year ago

মোঃ বুলবুল হোসেন:

নবীন ঠিক করছে এবার ঈদে কিছুতেই শ্বশুর বাড়ি যাবেনা। নবীনের বউ রোজিনা তিনদিন অনশন করার পরেও রাজি হয়নি নবীন শ্বশুর বাড়ি যেতে । আর হবেই বা কেন। রোজিনা তার শ্বশুরের একমাত্র মেয়ে। সেই হিসেবে নবীন তার একমাত্র জামাই। নবীন এবার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে মেম্বার পদপ্রার্থী । সে এবারে নির্বাচনে একশত ভোটে জিতেছে। তার একটা প্রেসটিজ নেই। সবাই ঈদে শ্বশুর বাড়িতে কি রকম মজা করে। শ্বশুর বাড়িতে কিরকম রাজা মহারাজের অ্যাপায়ন করেছে শুনেছে লোকের মুখে । কিন্তু সেই নবীনের শ্বশুর শফিক কিছুতেই পাত্তা দেয়না। বছরে একবার যায়, কোথায় কচি খাসির ঝোল, ইলিশ মাছের ঝাল, খাওয়াবে তা নয় কচুশাক, মরিচ ভর্তা । হাড় কিপটে শশুর । এদিকে পুকুরে মাছ, গোয়াল ভরা গরু, কচি খাসিগুলো তো সামনে ঘুরে বেড়ায়। এবার একটু শিক্ষা দেওয়া দরকার শশুর কে। শাশুড়ি মন্দনা। কিন্তু শফিকের সঙ্গে পেরে ওঠেনা। উনিও আধপেটা খেয়েই থাকেন। রোজিনা মাঝে মাঝে এটা ওটা রান্না করে পাঠায় শশুর বাড়িতে । এক গ্রামে বাড়ি হওয়ায় লোকের কাছে বলতে পারেনা শ্বশুর বাড়ি কি খেয়েছে। এক বাজারে গ্রামের সবাই বাজার করে। ওদিকে রোজিনা কেঁদে কেঁদে অস্থির। এই তো বছরে একবার বাপেরবাড়ি যায় । অন‍্য সময় তো বাপ এসেই খবর নেয় না। কাছে থাকার সত্ত্বেও প্রয়োজন ছাড়া যেতে পারে না। শশুরের সাথে দেখা হলে বলে, পথে ঘাটে দেখা হয়। খাওয়াটাই বড় হলো।

নবীনের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। রোজিনা কিছু করার আগে ওকে গিয়ে বলে,
শোনো, তোমাদের বাড়িতে সেই শাকপাতা গিলতে হবে । এত বছরে তো এসব বদলালো না। তুমি বরং তোমার বাবাকেই আমাদের বাড়িতে আসতে বল ছেলে মেয়েদের দেখে যাবে। শ্বশুর কে জামাই আদর করি। দেখুক আদর কাকে বলে। রোজিনার কথাটা মনে ধরলো। ছুটে গিয়ে বাবাকে বলে এলো। শফিক তো মহাখুশি। এতদিনে নবীনের তবে বুদ্ধি খুলেছে। সেই ফাঁকে কব্জি ডুবিয়ে খাবো। কাকডাকা ভোরেই হাজির শফিক। সেখানে গিয়ে বলল জামাই তোমার শাশুড়ি আসতে চাইলো না। নিজের জামাইকে একদিন ভালো মন্দ খাওয়াতে পারেনা। তার বাড়ি গিয়ে তিনি নাকি খেতে পারবেনা। সে না আসুক। সকালের চা দিয়েই শুরু করবে শফিক। তা সে নাহি পেলো। কিন্তু সকাল থেকে জামাইয়ের পাত্তা নেই। এদিকে রোজিনা কোন রান্নাবান্না করে না। শেষে বেলা বারোটায় আর থাকতে না পেরে শফিক বলল, চললুম রে মা। অনেক আদর করে খাইয়েছিস। এরপর পেটে ছুঁচোর বদলে খাসি দৌড়াবে। বাড়ি গিয়ে চাট্টি ডালভাতই মুখে দিই।

 

রোজিনা বলল, তোমার জামাইয়ের আক্কেল দেখো। তার তো কোন দেখা নেই। চলো আমিও যাই তোমার সঙ্গে। আমিও তো রান্না করিনি। তোমার জামাই এই বাজার করে আনবে ভেবে। বাপ বেটি বাড়ি পা দিয়েই চমকে ওঠে। গন্ধে ম ম করছে চারিদিক। শফিক এর গিন্নি মানে নবীনের শাশুড়ি তাকে জামাই আদরে খেতে দিয়েছে। শফিক কে দেখেই নবীন বলল, আরে কোথায় ছিলেন বাবা। এখানে আমি সব ব‍্যবস্থা করে বসে আছি আর আপনার দেখা নেই। রোজিনা তুমি বলোনি এবার আমি ঈদের সকল ব‍্যবস্থা করবো বলেছিলাম। রোজিনা তার বাবার শফিকের পাশে বসে বলল,
আমি তো বলেছিলাম বাবাকে এবার ঈদে তোমার জামাই সকল ব্যবস্থা করবে। নবীন বলল, গ্রামের লোক শুনলে কি ভাববে। বাবাকে কিপটে বলবে। তা কি পারি আমি। বাবা দাঁড়িয়ে রইলেন কেন বসে পড়েন। আমি সকালে চিঁড়ে দই আর আম খেয়ে, মায়ের রান্নার গন্ধে পেটে খাসি দৌঁড়াচ্ছে।

শফিক ভেবেছিল দুচার কথা শুনিয়ে দেবে কিন্তু জামাই ব‍্যবস্থা করেছে শুনে খেতে বসে পরলো।
শফিকের গিন্নি এক এক করে পদ আনছে আর নবীন বলছে, এই ঘি টার গন্ধ দেখেছেন বাবা। মা নিজের হাতে বানিয়েছে । কবে আবদার করে বলে গেছি। আপনাদের কালো গরুর দুধ আর ঘি সারা গ্রামে বিখ‍্যাত। গ্রামের লোকজন এগুলো কত দাম দিয়ে কিনে। আরে শশুরের সুন্দর মুখটা যা হয়েছে না মা। ভাগ‍্যিস ভোরবেলা আপনার পুকুর থেকে রুই মাছ ধরে আনলাম। এত সুন্দর হয়েছে না। ইলিশ মাছের ঝাল কি যে সুস্বাদু দেন তাড়াতাড়ি। ইলিশ কিন্তু আমার আনা বাবা। আপনার পুকুরের রুই মাছ বিক্রি করে। ইলিশের ঝালটা বাবাকে দাও। যতই হোক বাবার পুকুরের মাছ বিক্রি করে আনা।

শফিক খাবে কি। মুখ শুকিয়ে গেছে। চোয়াল ঝুলে গেছে। মাংস আসতেই বলল, এটা কি?
নবীন বলল,দাওয়াত করে তো খাওয়ান না ঠিকমতো। তাই আমিই আপনার খামার থেকে ছালাম কষাইকে ডেকে দিয়ে দিলাম একটা খাসি। যতই হোক এবার ব‍্যবস্থা আমি করবো বলেছি। ত্রুটি রাখি কি করে? খান খাওয়া এখানেই শেষ নয় আরো পায়েস মিষ্টি আছে।
শফিকের তখন মাথায় হাত। চোখের সামনে একবার মাংসের বাটি। আর এবার নিজেকেই খাসি মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে তিনিই যেন ব‍্যা ব‍্যা করছেন নবীনের সামনে। নবীন তখন বলে চলেছে। পরের বারেও আমিই ব‍্যবস্থা করবো বাবা। ঈদের দিন জামাই না খাওয়াতে পারুন আমি যতদিন বেঁচে আছি। ততদিন এভাবেই ঈদের দাওয়াত খাওয়াবো। কোনো চিন্তা করবেন না। মা মাংসটা আর একটু দাও বাবার পাতে । কচি খাসির ঝোল। যা রেঁধেছেন না। শফিক তখন কান্নাকাটি করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

error: Content is protected !!