মোঃ বুলবুল হোসেন
তুহিন গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। তুহিনের সংসারে দুই ভাই ,বাবা-মা তাদের সংসার কোন রকম চলে । কখনো এক বেলা খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে। তাদের থাকার ঘরটি কাঠের তৈরি । ছন দিয়ে ছাউনি প্রায় দুই তিন বছর হয়ে গেছে । এখনো মেরামত করা হয়নি ঘরের চালে বৃষ্টির পানি পড়ে। তুহিনের মা তুহিন তার ছোট ভাইকে নিয়ে ঘরের এক কোণে বসে থাকে। আর অপেক্ষা করতে থাকে কখন বৃষ্টি শেষ হবে। বৃষ্টি শেষ হলে আবার ঘরের পানি গুলো তুহিনের মা পরিষ্কার করে। তাদের ঘরে থাকার মত সেরকম আসবাবপত্র নেই । ঘরে মেঝেতে খড়কুটা বিছিয়ে তার উপরে একটা পাটি দিয়ে থেকে রাত্রি যাপন করে। তখন গ্রামে বিদ্যুৎ নেই বললেই চলে। তাদের ঘরে কোন হারিকেন ছিল না। তুহিনের অনেক দিনের ইচ্ছা হারিকেনের আলোর নিচে বসে পড়বে। এমন অবস্থায় তুহিন এর মাকে তুহিন বলল মা আমাকে একটি টেবিল কিনে দাও না। ভাঙা একটা আমাদের চেয়ার আছে এতে চালিয়ে নিব। তুহিনের মা কোন কথা না বলে ছেলেকে সান্ত্বনা স্বরূপ বলল, বাবা আমরা গরীব মানুষ কি করে তোরে টেবিল কিনে দেবো । একবেলা খেয়ে আরেক বেলা না খেয়ে থাকি। তুহিন কিছু না বলে নিরবে সে ঘরের এক কোণে বসে কাঁদতে থাকে। এমন অবস্থায় তুহিনের বাবা পরের জমিতে কাজ করে বাসায় এসেছে। তুহিন এর মা বাবাকে বলল দেখো ছেলে বায়না ধরেছে একটা টেবিল কিনে দিতে হবে। কিন্তু আমাদের কাছে টেবিল কেনার টাকা পয়সা নেই। তুহিনের বাবা বলল কেন আমাদের যে মোরগ দুটা আছে ওগুলো বিক্রি করে যা পাবো। একটা টেবিল আর কিছু বাজার সদাই করে নিয়ে আসবো। তুহিনের মা বলল তুমি ঠিক কথাই বলেছ তাহলে সামনে সোমবারে হাটে গিয়ে একটা টেবিল নিয়ে এসো।
তুহিনের বাবা তুহিনের মার কথামতো পরের দিন হাটে চলে গেল। হাটে গিয়ে মুরগ দুইটা বিক্রি করে একটা টেবিল আর একটি হারিকেন
কিনে নিয়ে আসলো। কারণ তুহিনের বাবা জানতো তুহিন হারিকেনের আলোতে বসে পড়বে এটা তার অনেক ইচ্ছে। তাই তুহিনের বাবা আসার সময় হারিকেন আর টেবিলটি মাথায় করে নিয়ে তিন কিলো পথ এসেছে। কারণ ভ্যান ভাড়া দিয়ে এই জিনিসপত্র আনতে গেলে যে টাকা লাগবে। সেই টাকা দিয়ে অন্য একটা কাজ করতে পারবে । তাই সে মনে মনে ঠিক করল এটা আর কত কেজি ওজন মাথায় করে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করি। যেমন কথা তেমন কাজ । তুহিনের বাবা বাড়ির পথে হাঁটা শুরু করে দিল। এদিকে তুহিন অপেক্ষায় আছে যে কখন তার বাবা টেবিল নিয়ে আসবে। কিন্তু তুহিন জানতো না টেবিলের সাথে তার হারিকেন নিয়ে এসেছে । তুহিন অনেক দূর খেয়াল করল একটি টেবিল মাথায় করে নিয়ে কে আসতেছে। তুহিন দৌড়ে কাছে গিয়ে দেখে তার বাবা। তুহিন কে দেখে বাবা বলল তোর জন্য চমক আছে। বাবা কি চমক আমার জন্য তো টেবিলে নিয়ে এসেছো।
ধুর বোকা এভাবে কেউ বলে। আমি যদি পারতাম তোর জন্য চাঁদটা এনে দিতে তাহলে সত্যি তোকে এনে দিতাম । এরপর তুহিনের বাবা তুহিনকে হারিকেন টা ধরিয়ে দিয়ে বলল, এই যে হারিকেন নে এবার মন দিয়ে পড়াশোনা কর। তুহিন হারিকেন পেয়ে এত খুশি হয়েছিল যে বলার মত ভাষা ছিল না। খুশিতে তুহিন কেঁদে দিয়েছে। ঘরের এক কোনে চেয়ার টেবিল আর হেরিকেন টা বারবার মুছে পরিষ্কার করে। চেয়ারটাও কাউকে ধরতে দেয় না যেন তার আত্মা। তুহিন চেয়ারটাকে খুব যত্ন করতো আর হারিকেনের আলোতে পড়তে তুহিনের অনেক ভালো লাগে । তাই প্রথম দিন তুহিন রাত্রি বারোটা পর্যন্ত পড়ে। এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি তুহিন এতটা খুশি হয়েছিল যে বলার মত ভাষা ছিল না। পরদিন সকালে তুহিনের বাবা মাঠে চলে গেল । এদিকে মা বলল তোর বাবার জন্য কিছু খাবার নিয়ে যা। তুহিন তার মায়ের কথা মতো বাবার জন্য খাবার নিয়ে যায়। বেশ কিছুদিন তুহিনদের সংসার ভালোই চলতেছে। হঠাৎ করে মাঝে প্রচন্ড খরা কারণে সকল ফসল নষ্ট হয়ে গেল। তুহিনদের সংসার একদিন কাজ না করলে অচল হয়ে যায় । এদিকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বসে আছে। ঘরে যা ছিল তাই কোন রকম খেয়ে বেঁচে আছে। কিছুদিন পর ঘরে কোন চাউল নেই । ছোট ভাইটাও কান্নাকাটি করছে মা-বাবা ও তার সাথে কান্নাকাটি করছে। কারণ কে দিবে তাদের অন্ন । তুহিনের বাবা খাবারে সন্ধানে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করতে থাকে। কিন্তু কোথাও খাবার মিলে না, এমন সময় তুহিন এর বাবার মনে হল ফকির বাড়ি আমি না দশটা টাকা পাবো। এরপর তুহিনের বাবা তুহিনকে ফকির বাড়ি পাঠালেন দশটা টাকার জন্য তুহিন ফকির বাড়িতে গিয়ে দশটি টাকা নিয়ে আসে ।
এসে তার বাবার হাতে দেয়। এতে বাবা বলে আমি না তুমি বাজারে গিয়ে দশ টাকার আটা নিয়ে এসো। আমি দেখি পাশের গ্রামে যাই একটা কাজ পাই যদি তোমরা খেয়ে নিও। এই বলে তুহিনের এর বাবা চলে গেল । তুহিন এর মা বলল বাবা তুমি বাজারে যাও ,বাজারে গিয়ে দশ টাকার আটা নিয়ে এসো তোমার ভাই অনেক কান্নাকাটি করেছে। তুহিন বাজারে গিয়ে দশ টাকার আটা নিয়ে আসল। এসে মার হাতে দিলো মা আটা দিয়ে জাই রান্না করলো। জাই খেয়ে তুহিন তুহিনের ভাই কোনরকম দিন চলে যায়। এভাবেই চলতে থাকে তুহিনের সংসার। কিছুদিন পর তুহিনের বাবা যখন মাঠে কাজ করতে ছিল, হঠাৎ জমিদারের কিছু লোক এসে তুহিনের বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু তুহিন এর বাবা জানে না কোন অপরাধে তাকে জমিদারের বাড়িতে যেতে হলো। জমিদার বাড়ি যাওয়ার পর তুহিনের বাবা বলল হুজুর আমাকে ডেকেছেন ? হ্যাঁ আমি তোকে ডেকেছি কারণ তুই আমাদের কোন খাজনা দেস না। তুহিন এর বাবা বলল হুজুর আমরা গরিব মানুষ কি করে খাজনা দিব। আমাদের নুন আনতে পান্তা শেষ।জমিদার মশাই তার কোন কথা পাত্তা না দিয়ে তাকে নির্মমভাবে আঘাত করতে থাকে। এদিকে তুহিন, তুহিনের মা খবর পেয়ে দৌড়ে জমিদার বাড়ি গিয়ে জমিদারের হাতে পায়ে ধরে।