রংপুর,স্টাফ রিপোর্টারঃ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সবজ বিক্রেতা সাজ্জাদ হোসেন হত্যা মামলায় রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর হাজীরহাট থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদুল আরেফিন মিলনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রবিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-১ম আদালতের বিচারক মো. সোয়েবুর রহমান তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন একই হত্যা মামলায় আরেক আসামি মহানগর কোতয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. সুমন ওরফে রেডিও সুমনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার দুপুরে পুলিশি নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মিলন ও সুমনকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খালেদ উদ্দিন আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। এ সময় আসামিপক্ষ জামিন আবেদন জানালে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে মিলনের পাঁচ এবং সুমনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।
একই মামলায় হাজতি আসামি রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডলকে পূর্ণ গ্রেপ্তারের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। এর আগে, গত ২১ আগস্ট নিহত সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী জিতু বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন।
ওই মামলায় শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাতে রংপুর নগরীতে অভিযান চালিয়ে ওয়াজেদুল আরেফিন মিলন ও মো. সুমন ওরফে রেডিও সুমনকে গ্রেপ্তার করে কোতয়ালি থানা পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রংপুর সিটি বাজার-সংলগ্ন রাজা রাম মোহন মার্কেটের সামনে গুলিতে নিহত হন সাজ্জাদ হোসেন।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী হাছানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ও আওয়ামী লীগ নেত্রী অপু উকিলসহ ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া আরও ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। বাদী জিতু বেগম এ হত্যা মামলায় ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করলেও পরবর্তীতে আদালতে এফিডেভিটের মাধ্যমে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ছয় কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের নাম মামলা থেকে প্রত্যাহার করে নেন।
তারা হলেন, আরপিএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার (বাধ্যতামূলক অবসর) মো. মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার উত্তম কুমার পাঠান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার উৎপল রায়, পরশুরাম থানা জোনের এসি ইমরান হোসেন, কোতয়ালি থানা জোনের এসি আরিফুজ্জামান আরিফ, কোতয়ালি থানার এসআই আকমল হোসেন, মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি এম এ মজিদ, মো. সুমন ওরফে রেডিও সুমন, মিঠাপুকুরের লতিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস আলী, আব্দুস সালাম, ইদ্রিস আলী, মানিক অধিকারী ও আশরাফুল ইসলাম সজিব।
মামলার আবেদনে বলা হয়, নিহত সাজ্জাদ হোসেন একজন ব্যবসায়ী। গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রংপুর নগরীর রাজা রাম মোহন মার্কেটের সামনে ১ থেকে ১০ নম্বর আসামির নির্দেশে অন্য নামীয় ও অজ্ঞাত আসামিদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়।
এ সময় সাজ্জাদ হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। নিহত সাজ্জাদের মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়ার পথে আসামিদের বাধার মুখে পড়েন বাদী।
পরে বাধ্য হয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই সাজ্জাদের মরদেহ দাফন করা হয়। দাফনের ৪৪ দিন পর আদালতের নির্দেশে ও তদন্তের স্বার্থে গত ২ সেপ্টেম্বর আবার মরদেহ উত্তোলন করা হয়।