বাজারে উঠতে শুরু করেছে পানিফল আগাম চাষে লাভবান বগুড়ার কৃষকরা!

লেখক: Rakib hossain
প্রকাশ: 1 week ago

মোঃ রিপন বগুড়া প্রতিনিধি:

বগুড়ার বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে ‘পানিফল শিঙাড়া’। আগাম চাষ করা ফল বিক্রি করে লাভের আশা করছেন চাষিরা। অন্য ফলের পাশাপাশি পানিফল বাজার দখল করতে শুরু করায় চাহিদাও বাড়ছে। ফলটি সবার পছন্দের, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। তবে এটি আঁশ জাতীয় খাবার। মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা য়ায়, জেলায় পানিফলের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে এক দশক আগে। পানিফল জলজ উদ্ভিদ। জলাশয় ও বিল-ঝিলে ফলটি জন্মে। পানিফলের একেকটি গাছ প্রায় ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। স্থানীয়দের কাছে পানিফলের আরেক নাম ‘পানি শিঙাড়া’।

জেলার পানিফল চাষিরা জানান, পানিফল চাষ শুরু হয় ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। ফল সংগ্রহ করা হয় অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে। পানিফল কচি অবস্থায় লাল, পরে সবুজ এবং পরিপক্ব হলে কালো রং ধারণ করে। ফলটির পুরু নরম খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিণ্ডাকার বা ত্রিভুজাকৃতির নরম সাদা শাঁস। কাঁচা ফলের নরম শাঁস খেতে বেশ সুস্বাদু। পানিফল কাঁচা খাওয়া হয়, তবে সেদ্ধ করেও খাওয়া যায়।

বগুড়া সদর উপজেলার সামগ্রাম দক্ষিণপাড়ার পানিফল চাষী আব্দুর রহিম, আনছার আলী, মোহাম্মদ মুসা ও শফিকুল ইসলাম জানান, তারা চারজন মিলে দোবিলা বিলে ১৫ বিঘা জমিতে পানিফলের চাষ করেছেন।

১৫ বিঘা জমিতে তাদের খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। ১ থেকে দেড় মাসে এখান থেকে তারা প্রায় দুই লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারবেন। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ মন করে পানি ফল বাজারে বিক্রি করেন। পাইকারি বাজারে প্রতি মন পানিফল বিক্রি করেন ৬’শ থেকে ৭’শ টাকা। খরচ কম হওয়ার তাদের মতো বাণিজ্যিকভাবে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই। আগামী বছর তারা আরও বেশি জমি নিয়ে চাষ করবেন বলেও জানান।

হায়দার আলী নামে আরেক চাষি বলেন, কয়েক বছর ধরে পানিফল চাষ করে আসছি। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি ১৫-২০ মণ ফলন পাচ্ছি। প্রথমে মানুষের মাঝে তেমন সাড়া পাওয়া না গেলেও দিন দিন চাহিদা বাড়ছে।

অন্যান্য ফসলের চেয়ে এ ফলের খরচ অনেক কম। পরিচর্যাও তেমন করতে হয় না। তিনি আরো বলেন, ফল চাষের জমি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডোবা, বদ্ধ জলাশয় বা মাছের ঘেরের সুবিধাজনক স্থান। সামান্য লবণাক্ত ও মিষ্টি পানিতে পানিফল চাষ করা যায়। পানিফল গাছ কচুরিপানার মত পানির উপরে ভেসে থাকে।

এদিকে বগুড়ার বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি পানি ফল বিক্রি করছেন ৪০টাকা কেজি দরে। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুন হওয়ায় পরিবারের জন্য অনেকেই কিনছেন এই ফল। স্থানীয় বাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

পাইকারি পানিফল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, চাষের মৌসুম আসার আগে তিনি চাষির মাঝে অর্থ বিনিয়োগ করেন। পরে ফলন আসার পর বাজারদর অনুযায়ী উৎপাদিত ফসল কেনেন। এভাবে ১০-১২ বছরের বেশি সময় তিনি পানিফল ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় এ ফল সরবরাহ করেন। বর্তমান জেলার বাইরে বাজারভেদে পাইকারি বিক্রি করেন।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, গত বছর জেলায় ৪১ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। চলতি বছরেও একই পরিমান জমিতে পানি ফল চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা থেকে ১ হাজার ২৩০ মেট্রিকটন ফল উৎপাদন হবে। এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৩০ হেক্টর জমি। কর্তন হয়েছে ৮ হেক্টর জমি। ফলটি জেলার গাবতলী, নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় বেশি চাষ হয়ে থাকে। তিনি জানান, অন্য ফসলের চেয়ে পানিফল চাষে কষ্ট কম হয়। কীটনাশক ও সার কম ব্যবহার হওয়ায় এটি পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাবার। পানিফল শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধরাও খেতে পছন্দ করেন। আর খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় চাহিদাও বেশি।

কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম আরো জানান, পানিফল কৃৃষিখাতের চাষ হিসেবে ধরা না হলেও দ্রুত চাষের খাতে আনা হতে পারে। অন্য বছরের তুলনায় আবাদ বেড়েছে। চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। ফলটি চাষাবাদে খরচ কম ও অল্প পরিশ্রমে বেশ লাভবান হওয়ায় প্রতি বছর আগ্রহ বাড়ছে জেলার পানিফল চাষিদের।

error: Content is protected !!