মো:মিজানুর রহমান বিদ্যুৎ
নার্সিং সেক্টরে ভর্তির আগে নার্সিং ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের এবং অভিভাবকদের যে সকল বিষয় অবগত হওয়া উচিত তা নিয়েই আজকের আলোচনা-
ইতিমধ্যেই এবছরের নার্সিং ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ফলাফল প্রকাশ হয়েছে।যারা সরকারিতে চান্স পেয়েছেন, তাদের জন্য শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
আর যারা চান্স পাওনি, তাদের উদ্দেশ্যে আমি বাস্তব লুকায়িত কিছু তথ্য শেয়ার করছি।
নার্সিং ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের পুরো পোস্টটি পড়ার অনুরোধ রইল-
নার্সিংয়ে ক্যারিয়ার:সত্যি বলতে নার্সিং সেক্টরটাকে বাইরে থেকে যতোটা চাকচিক্য দেখা যায়। ভিতরে আসলে ততোটা চাকচিক্য নয়।
আপনারা হয়তো ভাবতেছেন যে নার্সিং পড়লেই সরকারি চাকরি আপনার বাড়িতে এসে ধরা দিবে বা চাকরি নিয়ে কোনো টেনশন করতে হবে না, এমন চিন্তা ভাবনা সম্পূর্ণ ভূল।
নিম্নে কিছু কারণ বর্ণনা করা হলো:
১.নার্সিংয়ে সরকারি চাকরি:সবাই ভাবতেছেন যে,নার্সিং পাশ করলেই সেকেন্ড ক্লাস(১০ম গ্রেড) সরকারি জব পাওয়া যায়।আসলে বিষয়টা এতোটা সহজ নয়।
প্রথমত বিষয় হচ্ছে নার্সিং সেক্টরে সরকারি চাকরির সার্কুলার সময় মতো হয় না।গত পরিসংখ্যান গুলা লক্ষ্য করলে দেখা যায়,আড়াই-তিন বছর বা তার থেকেও অধিক সময় পর সরকারি সার্কুলারের দেখা মেলে।
তাতে নার্সিং শিক্ষার্থীর পরিমান বাংলাদেশে এতোই বেশী হয়েছে যে,গত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সিনিয়র স্টাফ নার্সের সার্কুলারে ৮৮ টি পদের জন্য পরিক্ষার্থী ছিলো ২৫ হাজার(প্রায়)
তারপর,নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তরের এর সিনিয়র স্টাফ নার্স-২০২২ এর সার্কুলারে ২৩৬৭ টি পদের জন্য পরিক্ষার্থী ছিলো ৩১ হাজার(প্রায়)।গত ২ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই সার্কুলারের নিয়োগ এখনো সম্পন্ন হয়নি।তাহলে বুঝতেই পারছেন যে নার্সিংয়ে সরকারি জবের কতোটা আকাল পড়েছে।
এছাড়া কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী BSMMU(স্বায়ত্ব-স্বাশিত প্রতিষ্ঠান)-তে সিনিয়র স্টাফ হিসেবে চাকরি পেয়ে থাকেন।
মিডওয়াইফারী সেক্টরের দিকে তাকালেও দেখা যায়,৩-৪ বছর পরেও একটা সরকারি সার্কুলারের দেখা মেলে না।দীর্ঘ ৪ বছর সময় পর ২০২৩ সালে মিডওয়াইফ নিয়োগের ৪০১ টি পদের জন্য একটা সার্কুলার হয়েছে। যেখানে আবেদন করেছে প্রায় ৮ হাজার(প্রায়)।গত এক বছর সময় অতিবাহিত হলেও সেই সার্কুলারের প্রিলিমিনারী পরীক্ষারই তারিখ এখনো প্রকাশ হয়নি।
বর্তমানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী নার্সিং কোর্স শেষ করে বসে থাকলেও সরকারি চাকরি পাওয়া প্রার্থীর সংখ্যা খুবই নগন্য।
২.বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি:
বেসরকারি হাসপাতালে চাকরির ক্ষেত্রেও হতাশার হাতছানি ।কারণ নার্সিং পাসকৃত শিক্ষার্থীর পরিমান বাংলাদেশে এতোই বেশী হয়েছে যে,নার্সিং পড়াশোনা শেষ করে ৮-৯ হাজার টাকার চাকরি পাইতেও অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে।কারণ সস্তায় পাওয়া গেলে বেশী বেতন দিয়ে চাকরিতে নেয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।
৩.এছাড়া এনজিও এবং বিভিন্ন প্রজেক্টে কিছু সার্কুলার হয়, যা নার্সিং শিক্ষার্থীর সংখ্যার তুলনায় খুবই নগন্য।
এমতাবস্থায়,যারা বেসরকারি নার্সিং কলেজ বা ইন্সটিটিউটে ভর্তি হতে চাচ্ছেন, তারা বিষয়গুলা একটু একটু চিন্তা ভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েন।কারণ এরকম একটা হতাশাপূর্ণ অনিশ্চিত ক্যারিয়ারে আসার জন্য ৪-৫ লক্ষ টাকা খরচ করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না । এর থেকে আপনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কোনো সাবজেক্টে অর্নাস করলেও অনেকটা উপকৃত হতে পারবেন।দিনশেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্নাস শেষ করা শিক্ষার্থীটা অন্তত বাংলাদেশের জেনারেল সেক্টরের সকল সরকারি জবের সার্কুলারে আবেদন করার যোগ্যতাটা হবে
কিন্তু নার্সিং ডিপ্লোমা এবং মিডওয়াইফারী কোর্স এইচ এসসি সমমানের হওয়ায় এই কোর্স গুলা শেষ করার পর নার্সিং চাকরি ব্যতিত কোনো জেনারেল সরকারি চাকরিতে(স্নাতক সমমানের চাকরিতে) আবেদন করতে পারবেন না।
তাছাড়া বিএসসি ইন নার্সিং(বেসিক) শেষ করে অর্নাস সমমানের প্রায় চাকরিতে আবেদন করা গেলেও কিছু সীমাবদ্ধতা থেকেই যায়। যেমন:কলেজ নিবন্ধন,স্কুল নিবন্ধন, টেকনিক্যাল ক্যাডার বা শিক্ষা ক্যডারের মতো বিষয় ভিত্তিক কিছু চাকরি থেকে বঞ্চিত হবেন।আর নার্সিং এ টেকনিক্যাল ক্যাডার আদৌ হবে কিনা তার কোনোই সম্ভাবনা দেখা যায় না।
তাই আমার মতে, বর্তমানে সরকারি নার্সিং কলেজ বা ইনস্টিটিউটে যাদের চান্স হয়েছে। তাদেরই শুধুমাত্র নার্সিং পড়া উচিত বলে আমি মনে করি।তাছাড়া টাকা পয়সা খরচ করে বেসরকারি নার্সিং কলেজ বা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে এতো প্যারা নেয়ার কোনো মানে নাই।
এতোকিছু জানার পরও যদি কেউ বেসরকারি নার্সিং কলেজ বা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতেই চান। তাহলে নিজে সবগুলা কলেজের খোজ খবর নিয়ে দেখেশুনে ভর্তি হবেন।কারণ বেসরকারিতে ভর্তির ক্ষেত্রে দালালের অভাব নাই।
আর উত্তর বঙ্গে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চার বছরের বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স শেষ করতে ৬ বছর লেগে যাচ্ছে।তাই উত্তর বঙ্গে বেসরকারি নার্সিং কলেজ গুলাতে বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সে ভর্তি না হওয়াই উত্তম।
২০২৩-২৪ সেশনের নার্সিং ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সতর্ক করার জন্য নার্সিংয়ের লুকায়িত কিছু বাস্তব সত্য কথা শেয়ার করলাম।আমার লেখনীতে কোনো ভূল ত্রুটি হলে মাফ করবেন এবং ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
সংগ্রহ : জাবির আহম্মেদ জিহাদ