সুমন হাসান,কয়রা(খুলনা)প্রতিনিধি:
জৈষ্ঠ্য মাসের শুরুতে প্রচন্ড খরতাপ ও ভ্যাপসা গরমে খুলনার কয়রা উপজেলায় তীব্র গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন তাপমাত্রা বাড়ছেই। সোমবার (৫ই মে) তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। গরমের দাপটে মানুষ কাহিল হয়ে পড়ছে। সেই সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং মানুষের এই দুর্ভোগের মাত্রাকে আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়েছে। নাভিশ্বাস বাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। শ্রমজীবি মানুষেরা প্রচন্ড তাপদাহে করতে পারছেনা কোন কাজ কৃষকেরা পড়ছেন বিপাকে। বিশেষ কাজ ছাড়া ঘর থেকে বেরচ্ছে না অনেকে। গরম থেকে রক্ষায় একটু প্রশান্তি পেতে শ্রমজীবি মানুষেরা কর্মের ফাঁকে ছায়ায় যেয়ে নিচ্ছেন বিশ্রাম। অনেকে কলের পানি, ডাবের পানি, লেবুর পানিতে খুজছেন স্বস্তি। শীতল বাতাস পেতে অনেকে গাছের তলে এবং তাল পাতার পাখার বাতাস খেয়ে গরম থেকে রক্ষায় চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সকালে একটু বেলা গড়ানোর পরই পথঘাট উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এ কারণে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কমে যাচ্ছে। খুব প্রয়োজন না হলে কেউ এমন তাপপ্রবাহের ভেতর বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন না। দুপুরের আগেই অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায় কয়রার পথঘাট। একটু প্রশান্তি পেতে শিশু-কিশোরেরা ঝাঁপাঝাঁপি করছে পুকুরে। অন্যদিকে মানুষ রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হওয়ার কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। আবার রোদের তাপে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আম কাঁঠাল ও নানা প্রকারের সবজি। প্রচন্ড খরতাপে পানির স্তর নিচে নামায় স্যালোমেশিনে ঠিক মতো পানি না ওঠার কারণে ক্ষেতে সেচ দিতে পারছেন না চাষিরা। ফলে তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন। গ্রামের টিউবওয়েলগুলোতে অল্প পানি উঠছে। পানি সংকটে মানুষ বিপাকে রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস সুত্রে যানা গেছে, আজ সোমবার (৫ই মে)কয়রার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। রবিবার কয়রায় তাপমাত্রা ছিলো ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শনিবার ছিলো ৩৯ দশমিক ৩ডিগ্রি সেলসিয়াস, শুক্রবার ছিলো ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা অব্যাহত থাকার কারণে দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজ করছে। শ্রমজীবী মানুষ একদম হাফিয়ে উঠছেন। যেনো গরমে জনজীবন ত্রাহি অবস্থা। কোনো কাজ না করলেও ঘামে শরীর ভিজে যাচ্ছে। তার মধ্যে ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং মানুষের এই দুর্ভোগের মাত্রাকে আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়েছে। একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে যাবার কারণে মানুষের প্রান ওষ্ঠাগত। শহর এলাকায় দুই তিন ঘন্টা লোডশেডিং হলেও,গ্রামে নামাজের সময়ও বিদ্যুৎ থাকে না। ঘন্টার পর ঘন্টা চলছে লোড শেডিং।
কয়রার দিনমজুররা জানান, সূর্যের তেজ যেমন তেমনি বালু মাটির একই রকম ঝাঁজালো তেজ চোখেমুখে লাগছে। মনে হচ্ছে গরম হাড়ি থেকে বাষ্প বের হয়ে চোখ-মুখ পুড়িয়ে দিচ্ছে। মাথায় করে মালামাল উঠানামা করতে পারছি না। মাঝে মধ্যে বিশ্রাম নিয়ে আবারো কাজ করছি। কাজ না করলে সংসার চালাবো কি ভাবে। কয়রা সদরের ভ্যান চালক আব্দুল্লাহ বলেন, প্রখর রোদ ও তাপে ভ্যান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। যাত্রীরও আমাদের খোলা ভ্যানে উঠছে না। সকালের দিকে ২/১ টি ভাড়া পেলেও ১১ টার পর থেকে কোন ভাড়া নেই। তাই গাছ তলায় শুয়ে আছি। আছোরেরপরে তাপ কমলে তখন ভাড়া খাটবো।
মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, তীব্র গরম ও তাপদাহে নষ্ট হচ্ছে সবজি ক্ষেত। নিয়মিত সেচ দিতে না পারায় অনেকের সবজি ক্ষেত ফেটে চৌচির। পানির অভাবে সবজি শুকিয়ে গেছে। ভরা মৌসুমে সবজি নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা বিপাকে রয়েছেন। কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে গরমের কারনে বেড়েছে রোগব্যাধি। গত ৭দিনের ব্যবধানে জর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়া, হাপানী নিয়ে শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। বিভিন্ন ক্লিনিকেও বাড়ছে রোগী। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন রোগীরা। তবে তেমন গুরুতর রোগী নেই বলে জানান হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।