দূর্গাপুরে ১৬৪০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষে অনিশ্চিয়তা

লেখক: Rakib hossain
প্রকাশ: 6 hours ago

মুন্না ইসলাম আগুন দূর্গাপুর প্রতিনিধিঃ

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় চলতি বছরে ১৬৪০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন দূর্গাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বীজের চাহিদা রয়েছে ২৪৩০ মেট্রিক টন ।

এই চাহিদা স্থানীয় কৃষকদের সংরক্ষিত হিমাগারের বীজ, সরকারি বীজ ছাড়াও ব্রাক সিড সহ অন্যান্য কোম্পানির বীজ চাহিদার অতিরিক্ত আছে বলে জানা যায়।

তবে দুঃখের বিষয়,এই বছর আলুর দাম স্বর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠার কারণে কৃষকের সংরক্ষিত বীজের আলু,খাদ্য আলু হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছেন অনেক কৃষক । তাই দুর্গাপুরের বাজারে বীজ আলুর সংকট পড়ে গেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা আরও বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির যে সকল ডিলার আছেন তারা স্থানীয় কৃষকদের বীজ না দিয়ে অধিক মুনাফার লোভে বীজ অন্যত্র বিক্রি করছেন। বিশেষ করে ব্রাক সিড কোম্পানির দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়ছেন কৃষকরা ।

উক্ত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট সাংবাদিকদের একটি টিম গত ২০.১১.২০২৪ ইং তারিখ হইতে‌ ২৫.১১.২৪ ইং তারিখ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করে এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে।

দুর্গাপুর উপজেলার সব থেকে বেশি আলুর বীজ নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করে বীজ সঙ্কট, নির্ধারিত মূল্যের বেশি মূল্য আদায় এবং আরো অধিক মুনাফার লোভে ব্রাক সিড এর টিএসও আমিনুর ও জয়নগরের ব্রাক সিড ডিলার মিঠু একত্রিত হয়ে সিন্ডিকেট তৈরি ও দুর্নীতি করে কৃষকদের ক্ষতির সম্মুখীন করেছেন ।

উল্লেখ্য, ব্রাক সিড দুই ধরনের বীজ বাজারে বিক্রি করছে কোম্পানির নির্ধারিত মূল্য ৭৯ ও ৮৩ টাকা কেজি প্রতি । কিন্তু ডিলার মিঠু দাম নিচ্ছেন ১১০ ও ১১৫ টাকা কেজি প্রতি। ৩১৬০ টাকা ব্যাগ নিচ্ছেন ৩৫০০ টাকা এবং ৩৩২০ টাকা ব্যাগ নিচ্ছেন ৩৮০০-৩৯০০ টাকা স্থানীয় কৃষকদের কাছে । আবার এই আলু অন্যত্র বিক্রি করছেন ৫০০০-৫৫০০ টাকা ব্যাগ।

এলাকা বাসী জানান, মিঠু ১০-১২ বছর থেকে ব্রাক সিডের ডিলার। পূর্বে তার অর্থনীতিক অবস্থা ভাল ছিল না এখন প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের বীজ সিন্ডিকেট করে অবৈধ ভাবে গত কয়েক বছরে কোটি-কোটি টাকা আয় করেছেন ব্রাক সিড কর্মকর্তার সহায়তায় । গত ২০.১১.২০২৪ ইং তারিখে তথ্য সংগ্রহ কালিন অবস্থায় মিঠুর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য তাকে কল করা হলে তার দোকানের কর্মচারী বলেন, তিনি(মিঠু) বাহিরে আছেন এবং অন্য আরেকটি নাম্বার দেন। সেই নাম্বারে কল করা হলে তার স্ত্রী ফোন রিসিভ করে বলেন, তিনি (মিঠু) ঘুমাচ্ছেন। ১৫-২০ মিনিট পর একই নাম্বারে কল করা হলে এবার মিঠু বলেন, আমি শ্যামপুর অথচ জয়নগর থেকে শ্যামপুরের দূরুত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। ঘুমের মানুষ কি করে সম্ভব?? স্থানীয় গ্রামবাসী জানান ঐদিন মিঠু তাহেরপুরে বীজ বিক্রি করেন। পরবর্তীতে তিনি হাট কানপাড়া জিয়ার চায়ের দোকানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন ।

ব্রাক সিডের টিএসও আমিনুর সাহেবের সাক্ষাৎকার বা বক্তব্য নেওয়ার জন্য কয়েক দিন যোগাযোগ করলেও তিনি বিভিন্ন কৌশলে বিষটি এড়িয়ে যান।

এই বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহানা পারভিন লাবনী বলেন,
দুর্গাপুরে এই বছরে ১৬৪০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হবে এবং এই জমিতে বীজের চাহিদা রয়েছে ২৪৩০ মেট্রিক টন।

যে তথ্য আমাদের কাছে আছে তাতে আমরা এই চাহিদা পূরণ করতে পারবো । সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জয়নগরের ব্রাক সিডের ডিলার মিঠুর অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি এবং গত ১৮ ও ১৯ শে নভেম্বর আমার কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বীজ বিতরণ করিয়েছি তবে তা কৃষকের চাহিদার তুলনায় খুবই কম ছিল। তিনি আরো বলেন, ব্রাক সিড সরকারী কোন প্রতিষ্ঠান নয় আমি চাইলেই আইনি ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে আমি টিএসও আমিনুর সাহেব কে আমার সাথে সাক্ষাৎ এর জন্য অনুরোধ করেছিলাম তিনি সাক্ষাৎ করেন নি।

কৃষি কর্মকর্তা সাহানা পারভিন লাবনী সম্পর্কে সাধারণ কৃষকরা বলেন, তিনি অত্যন্ত ভাল ও দায়িত্বশীল অফিসার। তিনি সারের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া পর কেউ বেশি নিতে পারে না। তিনি নিয়মিত তদারকি করেন ।

কোথাও কোন অনিয়ম হলে তাঁকে জানালে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মিডিয়া, কৃষি কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জন্য আমরা জয়নগরের কৃষকরা আমাদের ফুলকপি নষ্টের ক্ষতি পূরণ পেয়েছি।

ব্রাক প্রতিষ্ঠানের কাছে কৃষকদের দাবি ব্রাক সিডের ডিলার মিঠুর ডিলারশীপ বাতিল করে নতুন ডিলার দেওয়া এবং ব্রাক সিড টিএসও আমিনুরের অপসারন করানো ।

error: Content is protected !!