স্টাফ রিপোর্টারঃ
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের আয়োজনে ও খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ক সেমিনার আজ (রবিবার) সকালে খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোসাম্মৎ হোসনে আরা। অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দেশব্যাপী কার্যক্রমের জন্য ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। ভোক্তার অধিকার নিশ্চিতে ক্রেতাদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীরা হলো সমাজের দর্পন, তারা সচেতন হলে সমাজ বদলে যাবে। দেশের মার্কেটিং ব্যবস্থা ক্রমাগত অনলাইনভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। অনলাইন মার্কেটিং প্লাটফর্মে কেউ পণ্য কিনে প্রতারিত হলে এর প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আরো সহজ করা প্রয়োজন।
মূখ্য আলোচক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ভোক্তাকে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। দেশের ১৭ কোটি মানুষ যদি তাদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয় ও আইনের আওতায় অন্যায়ের প্রতিকার লাভের চেষ্টা করে তাহলে অধিকার প্রতিষ্ঠা সহজ হবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার জন্য আইন ভঙ্গ করে, এমনকি শিশু খাদ্যেও ভেজাল দেয়। ভেজালের কারণে ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্রেতা বা ভোক্তার অধিকার রক্ষায় মানুষকে সচেতন করতে ভোক্তা অধিকার আইন ও এর প্রয়োগ সম্পর্কে সবাইকে জানতে ও জানাতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সেমিনারে জানানো হয়, ভোক্তার স্বার্থ বিরোধী যে কোন অপরাধমূলক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের আওতায় প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাজারে বা বিক্রীর স্থানে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি, ভেজাল পণ্য বা ঔষধ বিক্রি, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ পণ্যের ব্যবহার, ওজনে কারচুপিসহ মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতাদের প্রতারিত করলে এ আইনের আওতায় অভিযুক্তকে কারাদন্ড, অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার সুযোগ রয়েছে। কোন ভোক্তা কোন পণ্য বা সেবা কিনে প্রতারিত হলে ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ রয়েছে। দায়েরকৃত অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত ও জরিমানা আরোপ করা হলে আদায়কৃত জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ অভিযোগকারী পাবেন। সেমিনারে আরো জানানো হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩১ মে পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ২৩ হাজার ২৭৩টি অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে, যার মধ্যে ১৭ হাজার ৭১৫টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। একই সময়ে এ প্রতিষ্ঠানটি ১১ হাজার ২৯টি বাজার তদারকি অভিযান পরিচালনা করেছে এবং জরিমানা হিসেবে ১৮কোটি ছয় লাখ ৪৯ হাজার ৫০০টাকা আদায় করা হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ ইব্রাহীম হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্টার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুস ও কনজ্যুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর খুলনার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড। সেমিনারে স্বাগত জানান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা জেরা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ ওয়ালিদ বিন হাবিব ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ শাহ আলম। সেমিনারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন।