ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস আতঙ্কে বিরাজ ঝূঁকিপূর্ণ বেড়ীবাঁধ

লেখক: Rakib hossain
প্রকাশ: 2 years ago

সুমন হাসান,কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি:

দক্ষিণ অঞ্চলীয় সমুদ্র উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সবচেয়ে ভয়ার্ত মাস মে মাস। বিগত কয়েক বছর ধরে যে ঘূর্ণিঝড়গুলো হয়েছে তার অধিকাংশই হয়েছে এই মাসে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামী ১৩-১৪ মে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় “মোচা”। এই আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে খুলনার কয়রার শাকবাড়িয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের প্রায় ১২ কিলোমিটারের ধসে যাওয়া বেড়িবাঁধ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছয় নম্বর কয়রা, চার নম্বর কয়রা রিং বাঁধ, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট–সংলগ্ন এলাকা, মঠবাড়িয়া, দুই নম্বর কয়রা, হোগলা, গাজীপাড়া, গোলখালী, হাজতখালী, জোড়শিং ও মহেশ্বরীপুর এলাকার প্রায় ১২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীতে পানি বাড়লে ওই এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতে পানি সরবরাহের আটটি জলকপাট (স্লুইসগেট) অকেজো পড়ে আছে। শাকবাড়িয়া নদীর নয়ানী ও সুতিয়া বাজার-সংলগ্ন জলকপাটটি নষ্ট হওয়ার উপক্রম। জলকপাটের দুই পাশের মাটি ডেবে গিয়ে নদী থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।
বারবার বাঁধ ভাঙনে নিঃস্ব মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের সেই ঘুরে দাঁড়ানোকে বারবার সর্বশান্ত করেছে বাঁধের ভাঙন। বালু দিয়ে বাঁধ দেওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শাকবাড়িয়ার বাসিন্দারা ।

উত্তর মহেশ্বরীপুর সিংহেরচরের বাসিন্দারা জানান আগে কয়েক বারের ভাঙনে এলাকার অর্ধ শতাধিক বিঘা জমি নদীর পেটে চলে গেছে। এখন নতুন করে বাঁধে ধস দেখা দেওয়ায় ভিটেবাড়ি হারানোর শঙ্কায় আছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের দুই পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে শাকবাড়িয়া ও কপোতাক্ষ। দুই নদ-নদীর ক্রমশ ভাঙনে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হতে যাচ্ছে ইউনিয়নটি। ১০ বছর আগেও দুই নদ-নদীর দূরত্ব দুই কিলোমিটারের বেশি ছিল। প্রতিবছর ভাঙতে ভাঙতে এখন ৩০০ মিটারে এসে ঠেকেছে।
মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে গিয়ে জানা গেছে এলাকাবাসীর অভিযোগ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও জলকপাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে তারা। পাউবো টালবাহানা করে কালক্ষেপণ করছে। উত্তাল নদী আর বৈরী আবহাওয়া দেখলেই এলাকার মানুষ আতঙ্কে থাকেন।

মহেশ্বরীপুর ইউপির চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারি বলেন, “প্রতিবছর বাঁধ ভাঙছে। কেউ না কেউ নিঃস্ব হচ্ছে। বর্তমানে যে কয়েক জায়গায় বাঁধ ধসে গেছে, নদীতে জোয়ার বাড়লে বড় ক্ষতি হতে পারে। বাঁধ ভাঙলে গোটা ইউনিয়ন নদীতে তলিয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে পাউবো কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে।

উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন,আমার ইউনিয়নের গাজীপাড়া ও গাতিরঘেরী এলাকায় নতুন প্রযুক্তিতে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সেই বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।স্থায়ী সমাধানের জন্য পাউবোর কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা প্রতিনিধিকে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে। বেড়িবাঁধের উচ্চতা বাড়াতে না পারলে উপকূলীয় অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বাড়তেই থাকবে। কয়রার বাঁধগুলোর উচ্চতা আরও অন্তত ১০ ফুট বাড়ানো উচিত।”

পাউবো সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের পর উপজেলার ২১টি জায়গায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা হয়। পাশাপাশি ২০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে সংস্কার করা হয়। বর্তমানে সাত কিলোমিটারের বেশি সংস্কারকাজ চলমান। তবে এখনো ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে আছে।
পাউবো খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম প্রতিনিধিকে বলেন,তিন দিকে নদীবেষ্টিত কয়রা উপজেলার মূল সমস্যা নদী ভাঙ্গন। যেকোনো দুর্যোগে নদীতে জোয়ারের চাপ বাড়লে কোথাও না কোথাও ভাঙ্গন ধরে। স্থায়ী সমাধানে বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প শুরু হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঝুঁকি কমবে।

error: Content is protected !!