কালীগঞ্জে গাভীর সিজার করে ১৫ হাজার টাকা নিলেন চৌগাছার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা : অতঃপর গাভী ও বচ্চার মৃত্যু

লেখক: Rakib hossain
প্রকাশ: 1 year ago

হুমায়ুন কবির, কালীগঞ্জ,ঝিনাইদহ :
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রী নীলকমল পাল নামের এক ব্যাক্তির
গর্ভবতী গাভীর সিজার করেন চৌগাছা উপজেলার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার আনোয়ারুল করিম। গাভীটি সিজারের পারিশ্রমিক হিসেবে তিনি ১৫ হাজার টাকাও দাবি করেন ঐ খামারি নিকট। পরবর্তীতে দেন দরবার করে ১২ হাজার টাকা নিয়ে খামারির বাড়ি ত্যাগ করেন। পরবর্তী এক ঘন্টা পর মৃত বাচ্চা দেওয়া গাভীটি মারা যায়।মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার ১০ নং কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের রামপুর পালপাড়ার বাসিন্দা মৃত দশরথ পালের ছেলে নীলকমল পালের পরিবারের সাথে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কৃষি কাজ ও মৃৎশিল্পের কাজ করে কোন রকমে ৫ সদস্যের সংসার চালান নীলকমল পাল। অভাব অনটনের সংসারে এই গরুটা ছিল তার গচ্ছিত পুঁজি। গত ১৩ আগস্ট ২০২৩  ফ্রিজিয়ান ক্রস সাদা-কালো গর্ভবতী গাভী গরুটি প্রসব বেদনায় অস্থির হয়ে পড়ে এবং খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেই। এই অবস্থায় কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ বি এম হেলাল উদ্দিনকে জানালে তিনি আসেন । তিনি গাভী গরু টি ভালোভাবে দেখে জানান, গাভীর পেটের মধ্যে থাকা বাচ্চা মারা গেছে। অতিসত্বর গরুটি সিজার করা প্রয়োজন। খামারি নীলকমল তার পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত সিজার করার ব্যবস্থা করার জন্য হেলাল উদ্দিনকে অনুরোধ করেন। এসময় হেলালউদ্দিন কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে ব্যাপারটি জানান। তিনি আসার কথা বলেও পরবর্তীতে না আসায় হেলাল উদ্দিন তার ভিজিট ফি বাবদ ২ হাজার টাকা নিয়ে চলে যান।শুরু থেকে স্থানীয় সনদবিহীন পল্লী চিকিৎসক শাহাবুদ্দিন তার সাথে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে পল্লী পশু চিকিৎসক শাহাবুদ্দিনের মাধ্যমে চৌগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার আনোয়ারুল করিম কে সিজারের জন্য আনা হয়। তিনি কয়েকজনকে সাথে নিয়ে দুপুরের কিছু পরে মোবাইল ভেটেনারি ক্লিনিক (এমভিসি) নিয়ে নীলকমলের বাড়িতে হাজির হন এবং সিজার করেন। সিজার শেষে ডাক্তার আনোয়ারুল করিম নীলকমলের নিকট ১৫ টাকা পারিশ্রমিক বাবদ দাবি করেন। পরবর্তীতে১২ হাজার টাকায় তার সাথে রফাদফা হয়।  এর ঘন্টা খানেক পরেই গাভী গরুটি মারা যায়। তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন খামারি নীলকমল ও তার পরিবারের সদস্যরা। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পাওয়াই প্রান্তিক এই খামারী প্রায় ২০ হাজার  টাকা খরচ করেও শেষ সম্বল গাভী ও বাচ্চাটি বাঁচাতে পারেনি।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এবিএম হেলাল উদ্দিন এর নিকট অসুস্থ গাভী দেখে ২ হাজার টাকা নেওয়া এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যা, টাকা নিয়েছি, ওসুধও দিয়েছি।আর স্যারকে সব জানিয়েছি উনি না আসলে আমি বসে থেকে কি করবো।
প্রত্যক্ষদর্শী শ্রী ইন্দ্রজিৎ কুমার পাল বলেন,গাভী গরুটি নিয়ে শ্রী নীলকমলকে অনেক ভোগ পোহাতে হয়েছে। কালিগঞ্জ পশু অফিস থেকে লাভ কি। যদি সময়মতো সেবা না পাওয়া যায়। আবার গরু ছাগল দেখতে আসলেই তাদের টাকা দেওয়া লাগে। এমভিসি গাড়ি থাকা সত্ত্বেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অসুস্থ গর্ভবতী  গাভীটি দেখতে আসলো না। দুঃখের কথা কাকে বলবো। চৌগাছার ডাক্তার যাও আসলো তাও গাভীটি বাঁচাতে পারল না। তার উপর আবার মানুষের সিজার করতে যে টাকা লাগে তার থেকেও বেশি টাকা নিয়ে গেলেও গাভীটিকে বাচানো গেলো না।
গর্ভবতী গাভী গরু টির মালিক নীলকমল আক্ষেপ করে বলেন, কালীগঞ্জের পশু ডাক্তার সরকারি গাড়ি থাকা সত্ত্বেও তিনি এসে আমার  গরুকে চিকিৎসা দেন নি।আবার ওই গাড়ি নিয়েই পার্শ্ববর্তী চৌগাছা উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে অফিস টাইমে  এসে সিজার করে গেলেন। আমার প্রায় দেড় লাখ টাকার সম্পদ এইসব লোকদের অবহেলার কারণে চোখের সামনে শেষ হয়ে গেল। এইসব দায়িত্বে থাকা লোকদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে শাস্তি হওয়া দরকার। সিজার করে জোরকরে টাকা নিয়েছে আমার কাছ থেকে।  আমি এর বিচার চাই। প্রাণীসম্পদ অফিসের নিকট আমি ক্ষতিপূরণ চাই।
এ ব্যাপারে  চৌগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার আনোয়ারুল করিমের নিকট অফিস টাইমে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে অন্য  উপজেলায়  চিকিৎসা দিয়ে জোরপূর্বক টাকা আদায়ের কোন সরকারি বিধান আছে কিনা জানতে চাইতে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি খামারি নীলকমল এর গাভীর সিজার করা এবং ওইবাবদ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
এ ঘটনায় কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তাগণের দায়িত্বে অবহেলার ব্যাপারে ঐ অফিসের  কর্মকর্তা ডাক্তার রেজাউল করিমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ভুক্তভোগীকে ঘটনার বিবরন দিয়ে  একটা লিখিত আবেদন করতে বলেন। আমি তদন্ত করে দেখবো।
যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদ জানান,এক উপজেলার গাড়ি নির্দেশনা ছাড়া অন্য উপজেলায় ব্যবহার এবং চিকিৎসা প্রদান করে টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। আমি খোজ খবর নিয়ে দেখি।আইনের ব্যত্তয় ঘটলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 
error: Content is protected !!