কালীগঞ্জে কসাইখানা না থাকায় মাংস বিক্রিতে অব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য ঝুঁকির শঙ্কায় পৌরবাসী  

লেখক: Champa Biswas
প্রকাশ: 1 year ago

হুমায়ুন কবির,কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধি:

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার নিজস্ব কোন কসাইখানা(স্লাটার হাউস) না থাকায় মাংস বিক্রেতারা যে যার ইচ্ছা মত স্থানে পশু জবাই করছেন। ফলে পশু জবাইয়ের পর সৃস্ট বৈর্জ্য পরিবেশ দূষিত করছে। আর দূষিত পরিবেশ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই পৌরবাসীর। কালীগঞ্জ পৌরসভা প্রথম শ্রেণীভূক্ত পৌরসভা হলেও আজও উপযুক্ত স্থানে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে তৈরি করা হয়নি কোন পশু জবাইখানা। কালিগঞ্জ পৌর শহরে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বাজার। এছাড়া সপ্তাহে দুই দিন শুক্র এবং সোমবারে বসে হাট। পৌর বাজারের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচটি বড় গরু এবং দশ থেকে বারটি ছাগল কেনাবেচা হয় বলে জানা যায়। শহরের নতুন বাজার, নিমতলা বাসস্ট্যান্ড, পুরাতন হাট চাঁদনী, হাসপাতাল সড়ক, নলডাঙ্গা রোড এবং কাঠের পুলের মাথায় গরু-ছাগলের মাংস বিক্রয় করা হয়। পৌরসভার কসাইখানা না থাকায় বিক্রেতারা নিজেরাই নিয়ম নীতি না মেনে গরু-ছাগল জবাই করে তা বাজারে এনে বিক্রি করছেন। পৌর এলাকার ঈশ্বরবা,বাকুলিয়া, ফয়লা গোরস্থান পাড়াসহ নানা স্থানে প্রতিদিন পশু জবাই করা হচ্ছে। আর পশু জবাই করার পর রওয়ে যাওয়া বর্জ্য যথাযথভাবে অপসারণ না করার কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। আবার জবাই করার স্থান থেকে দোকান পর্যন্ত মাংস আনা, দোকানের অস্বাস্থ্য পরিবেশ, বিক্রি না হওয়া মাংস যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করে পরের দিন বিক্রি করা,পশু স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া জবাই করা, জবাইকৃত পশুর মাংস খাবার উপযোগী কিনা তা দেখভালের ব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতায় লক্ষ করা যায়। তাই প্রশ্ন উঠেছে পৌর কসাইখানা পরিদর্শক ও পৌর স্যানিটারি ইন্সপেক্টরসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দায়িত্ব পালন নিয়ে। দোকানে মাংস রেখে বিক্রি করার ক্ষেত্রেও মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম নীতি। অনেক সময় দেখা যায়, মাংসের দোকানে কুকুর শুয়ে থাকতে। মাঝে মাঝে মাংস কাটা কাঠের গুড়ি কুকুরে চাটতেও দেখা যায় । উল্লেখ্য, পৌর এলাকার আড়পাড়া গ্রামের দরগা সংলগ্ন ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় পৌরসভা থেকে একটি পশু জবাই খানা বা কসাইখানা স্থাপন করা হলোও তা অল্প কিছুদিন চলার পর প্রায় তিন বছর হতে চলল বন্ধ রয়েছে ।স্থানীয়রা জানান, কসাইখানার বর্জ্য ও রক্তের গন্ধে আশপাশের বাসিন্দাদের একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতেই এটি বন্ধ হয়ে যায়। মূলত পরিকল্পনাবিহীন ভাবেই কসাইখানা টি তৈরি করা হয়েছিল বলেও অনেকে মনে করেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মাংস ব্যবসায়ী জানান, পশু জবায়ের জন্য কসাইখানা না থাকায় মাংস বিক্রেতারা যে যার যার মত পশু জবাই করে বাজারে এনে বিক্রি করেন। পৌরসভা থেকে প্রতিনিয়ত পশু অনুযায়ী ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে। তাহলে কেন কসাইখানা ও মাংস বিক্রি উন্নত স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থাপনা পৌর কর্তৃপক্ষ করবে না? আর এক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার জন্য তো আর আমরা দায়ী না। তিনি আরও জানান,আমাদের জবাইকৃত কোন পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় না। মাংস ক্রেতা পৌরসভা আড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইমতিয়াজ আহমেদ আক্ষেপ করে বলেন, আমরা কিসের মাংস খাচ্ছি? পশু জবাই মাংস বিক্রির মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অব্যবস্থাপনা ও গুরুত্বহীনতা সেবার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আশাকরি পৌর মেয়র গুরুত্বপূর্ণ এ ব্যাপারটিতে নজর দেবেন। কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রেজাউল করিম বলেন, কসাইখানা পরিচালনার সার্বিক দায়-দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের। এ ব্যাপারে চাহিদার প্রেক্ষিতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আমি শুধু একজন পশু চিকিৎসক দিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করতে পারি। কালীগঞ্জ পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,জায়গা সংকটের কারণে আমরা পৌরসভার কসাইখানা করতে পারছিনা। যত্রতত্র পশু জবাইয়ের ব্যাপারে আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখবো।এ ব্যাপারে পৌরসভার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের আরো কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেবো।

error: Content is protected !!