হুমায়ুন কবির,কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি)- এর শিবনগর এলাকায় অবস্থিত কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী মনির হোসেন সুমন রাতে ডিউটি পালন না করে দিনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে অফিস করেন।
সহকারী কমিশনার শাহিন আলম নৈশপ্রহরীকে দিয়ে কম্পিউটারের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করাচ্ছেন বলে ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায় । অফিস প্রধানের আস্থাভাজন হওয়ায় নৈশপ্রহরী মনির হোসেন সুমন দাপটের সাথে ভূমি অফিসের যাবতীয় কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়; ভূমি অফিসের নৈশপ্রহরী পদে চাকরি করে তিনি পৌর এলাকার নলডাঙ্গা রোডে খুলেছেন নিজস্ব কার্যালয়।
সেখানে বসেই কালিগঞ্জ ভূমি অফিসের নানা কাজ তিনি করছেন। পৌর এলাকা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের ভূমি সেবা প্রত্যাশীরা এ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজে তার নিজস্ব অফিসে এসে দেনদরবারের মাধ্যমে নিজ নিজ কাজ সারছেন ।
এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে নৈশপ্রহরী মনির হোসেন সুমন মানুষের সেবা দেওয়ার নামে উৎকোচ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যে লাখ লাখ টাকার মালিকও বনে গেছেন। তার বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নে হলেও বর্তমানে কালিগঞ্জ গোরস্থান পাড়ায় জমিসহ বাড়ি ক্রয় করে সেখানেই বসবাস করছেন।
নিজ কার্যালয়ে বসে নামজারি, মিস কেস,দাখিলা কাটা, শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব ধরনের জমিজমা সংক্রান্ত কাজ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সেবা প্রত্যাশীদের করে দিচ্ছেন এই নৈশপ্রহরী। তার এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু তথ্য প্রমাণ ইতিমধ্যে প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে।
কালীগঞ্জ ভূমি অফিসের নৈশপ্রহরী শহিদুল ইসলাম জানান, সুমন রাতে ডিউটি করে না। দিনের বেলায় এসিল্যান্ড স্যারের সাথে থেকেই ডিউটি করে। আবার অফিসে কম্পিউটারের কাজও করে। সরেজমিনে মনির হোসেন সুমনের নলডাঙ্গা রোডস্থ কার্যালয়ে যেয়ে দেখা যায়,তিনি কম্পিউটারে বসে একজন ভূমি সেবা প্রত্যাশীর কাজ করে দিচ্ছেন।
সামনে অপেক্ষারত রয়েছেন বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত আরো কয়েকজন সেবা প্রত্যাশী । এ সময় জমিজমা সংক্রান্ত অনেক কাগজপত্র ও নথির স্তুপ তার কার্যালয়ের টেবিলে ও আশেপাশে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার কার্যালয় আসা একজন সেবা প্রত্যাশীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, উপজেলা ভূমি অফিসে যেয়ে কাজ করতে অনেক ঝামেলা, যে কারণে সুমন ভাইয়ের অফিসে এসেছি।
টাকা বেশি লাগলেও এখানে সব কাজ নির্ঝঞ্ঝাট এবং ঝামেলা মুক্তভাবে করা যায়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালিগঞ্জ ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, মনির হোসেন সুমন নৈশপ্রহরী হলেও তার কম্পিউটার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সে এসিল্যান্ড স্যারের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে সেটাকে কাজে লাগায় ।এমনকি আগের এসিল্যান্ড স্যারের ব্যবহৃত আইডিও সে ব্যবহার করে কাজ করত বলে আমরা শুনেছি।যে কারণে সেবা প্রত্যাশী এমনকি ভূমি অফিসে চাকরি করে অনেকেই সুমনের সাথে চুক্তি করে নিজ নিজ কাজ উদ্ধার করে থাকে। এভাবেই সে ভূমি অফিসে প্রভাব বিস্তার করে চলছে দীর্ঘদিন ধরে ।
নৈশপ্রহরী মনির হোসেন সুমনের নিকট রাতের বদলে দিনে ডিউটি করা এবং কম্পিউটারের কাজ করার লিখিত অফিস আদেশ আছে কিনা এবং নিজেস্ব কার্যালয় খুলে ভূমি সেবা প্রত্যাশীদের সাথে দেন-দরবারপূর্বক অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, কম্পিউটার জানি বিধায় এসিল্যান্ড স্যার আমাকে দিয়ে কিছু কাজ করায়। যা আমি আমার অফিসে এনেও করি।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিন আলমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ভূমি অফিসের জনবল সংকট এবং নৈশপ্রহরী মনির হোসেন সুমনের কম্পিউটার জ্ঞান থাকাই অফিশিয়াল কিছু কাজ তাকে দিয়ে করানো হয়। আমি যোগদানের পূর্ব থেকেই তিনি এই জাতীয় কাজ করে আসছিলেন। আমার নাম ব্যবহার করে অনিয়ম দুর্নীতি বা ঘুষ বাণিজ্যের কোন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে থাকলে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।