হুমায়ুন কবির কালীগঞ্জ,ঝিনাইদহ :
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার এক নম্বর ওয়ার্ডের কালিগঞ্জ টু গান্না রোড সংলগ্ন শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বর্তমানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য অনোপযোগী হয়ে পড়েছে।প্রাথমিক এই বিদ্যালয়টির পাশে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনের জন্য স্থাপনা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। মূলত বিশাল এই কর্মযজ্ঞের কারণেই সৃষ্ট শব্দ দূষণ ও পাইলিং এর কাদা বালি যুক্ত পানি বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের ভবনের পেছনের অংশের নিচু জায়গায় পাইপ দিয়ে অপসারণ করা হচ্ছে।ফলে সেখানে একপ্রকার কর্দমাক্ত এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে । একই সাথে বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে একটি ঈদগাহের মিনার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ঈদগার মাঠ নিচু হাওয়াই স্থানীয় ঈদগা কমিটির চাহিদার প্রেক্ষিতে সাবস্টেশন থেকে বালিযুক্ত মাটি বিদ্যালয় প্রবেশের প্রধান ফটক দিয়ে গাড়িতে করে ফেলা হচ্ছে মাঠটি উঁচু করার জন্য। এই বালি বা মাটি স্তুপ আকারে ঈদগার মাঠে পড়ে রয়েছে দিনের পর দিন । বেশ কয়েকদিন ঘন ঘন হালকা ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এবং সম্যকভাগে পানি জমে কাদাপানির সৃষ্টি হয়েছে।দক্ষিণ,পূর্ব ও উত্তর দিকে বিদ্যালয়টির তিনটি একতলা ভবন অবস্থিত। এই তিন ভবনের মাঝখানের অংশে জমে থাকছে বৃষ্টির পানি। এই পানি বের হবার কোনো রাস্তা নেই। বিদ্যালয় প্রবেশের প্রধান ফটক কর্দমাক্ত হওয়ায় গান্না রোড টু খয়েরতলা বাকুলিয়া গ্রামে প্রবেশের মেঠো রাস্তার পাশ দিয়ে বর্তমানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চলাচল করছেন। কিন্তু বিদ্যালয় আসার পর শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের বাইরে এবং বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে খেলাধুলা করতে পারছে না।শুধু তাই নয় সব থেকে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওয়াশরুমের মধ্যে পাইলিং এর পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার ফলে সেটি ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে বিদ্যালয়টিতে এই রকম পরিস্থিতি বিরাজমান থাকায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় আসার আগ্রহ হারাচ্ছে।
সরজমিনে বিদ্যালয়টিতে যেয়ে দেখা যায়, সাবস্টেশন থেকে কর্দমাক্ত বালি ভর্তি ট্রাক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঢুকে আনলোডিং হচ্ছে। এসময় কয়েকজন ক্ষুদে শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে দেখা যায়।এই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাদিকুর রহমান এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আনিকা খাতুনের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্কুল প্রাঙ্গনে কাদামাটি ও পানি জমে থাকাই তারা স্কুলে এসে সারাক্ষণ ক্লাসরুমেই আবদ্ধ থাকে।আগের মত টিফিন সময়ে খেলা করতে পারছে না তারা। আবার বাথরুমে পানি জমে থাকাই সেটাও ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলেও তারা জানাই।
উল্লেখ্য, শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সময় পার হলেও অনেকটা অনাদর অবহেলায় বিদ্যালয়ের তেমন দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন চোখে পড়ে না।জমি সংক্রান্ত জটিলতায় বিদ্যালয়টির ওয়াশ ব্লকের কাজও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। যে কারণে বন্ধ করে রাখা হয়েছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের চলাচলের জন্য সিঁড়িটি।বর্তমানে ১৫০ জন শিক্ষার্থী ও ৯ জন শিক্ষক কর্মচারী রয়েছে বিদ্যালয়টিতে। বিদ্যালয়টির এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আগমন ও অবস্থান নিয়ে শংকায় রয়েছে শিক্ষক ও অভিভাবকরা। এরকম পরিস্থিতিতে যদি কোনো শিক্ষার্থী দুর্ঘটনায় কবলিত হয় তাহলে এর দায় কে নেবে সেটা নিয়েও তাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে।
কালীগঞ্জ পিজিসিবি সাব স্টেশনের ইঞ্জিনিয়ার আরিফুর রহমান জানান,ঈদগা কমিটি এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেই মাটি এবং পাইলিং এর পানি সেখানে ফেলা হচ্ছে। কনস্ট্রাকশনের কাজ চলমান থাকাই সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে বটে কিন্তু স্থানীয় জনগণের দীর্ঘমেয়াদি সুবিধার জন্য সাময়িক কষ্ট মানিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না।
শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মে হানি জানান,বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব হয়ে পড়ছে।পার্শ্ববর্তী সাবস্টেশনের শব্দ দূষণ, পানি, কাদা ও ওয়াশরুম ব্যবহারের অসুবিধা থাকার কারণে খুব বিরম্বনা পোহাতে হচ্ছে সকলকে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যাপারটি অবগত করেছি। কোমলমতী শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে দায়িত্বশীলরা দ্রুত এই সমস্যাসমূহের সমাধান করবেন বলে আশা রাখি।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদ হাসান জানান,বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার পরিবেশ একেবারে নেই বললে চলে। শিক্ষার্থীরা অনেকটা বন্দি অবস্থায় পাঠ গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। ব্যাপারটা নিয়ে আমি ইউএনও এবং মেয়র মহদের সাথে কথা বলেছি। সমস্যা সমাধানে তারা উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।