অযোধ্যার পর আবুধাবিতে গ্র্যান্ড মন্দির উদ্বোধন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী 

লেখক: Champa Biswas
প্রকাশ: 10 months ago

সাগর দেব,সংযুক্ত আরব আমিরাত:

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের চাইতে সংযুক্ত আরব আমিরাত একটু আলাদা। বিশেষ করে বাণিজ্য নিয়ে দেশটির উদার দৃষ্টিভঙ্গি দেশটিকে আলাদা করে পরিচিত দিয়েছে।

আমিরাত ক্রমেই হয়ে উঠছে বিশ্ববাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। সেই সঙ্গে বিনোদনের অন্যতম তীর্থস্থান। আবার পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে দেশটির চাহিদা বাড়ছে প্রতিদিনই।

আমিরাতের সঙ্গে ভারতের রয়েছে বিশাল বাণিজ্য সম্পর্ক। তাই ভারতের সঙ্গে সব সময়েই উষ্ণ বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রেখে চলে আমিরাত। করোনাকালে সেই সম্পর্কে আরও গভীর হয়েছে।

তাইতো ভারতের অযোধ্যার রাম মন্দিরের উদ্বোধনের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আরেকটি বৃহৎ মন্দিরের উদ্বোধনের বিষয় উঠে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে, সবথেকে যেটা উল্লেখযোগ্য বিষয় তা হল, এবার একটি মুসলিম দেশে ওই বিশাল হিন্দু মন্দির তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি, ইতিমধ্যেই মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে প্রকাশিত ছবিগুলিতে মন্দিরের জাঁকজমক স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫.৪ হেক্টরেরও বেশি জমিতে নির্মিত ওই হিন্দু মন্দিরটি চলতি মাসেই উদ্বোধন করা হবে। মূলত, আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে নির্মিত(বাফস) হিন্দু মন্দিরের কথা বলছি।

অযোধ্যায় রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার কয়েক সপ্তাহ পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারিতে আবুধাবিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্দির উদ্বোধন করতে চলেছেন। রাজধানীর আবু মুরেখা এলাকায় অবস্থিত (বাফস) হিন্দু মন্দিরটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম হিন্দু মন্দির। এছাড়াও, এটি ভারতের বাইরে বৃহত্তম হিন্দু মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম একটি । পাশাপাশি, এই মন্দিরটি পশ্চিম এশিয়ার বৃহত্তম হিন্দু মন্দির হিসেবেও বিবেচিত হবে।

এই মন্দিরের স্থাপত্য সম্পর্কে কথা বলতে গেলে জানাতে হয় যে, মন্দিরটিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিটি আমিরশাহীকে প্রতিনিধিত্ব করে সাতটি চূড়া দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। যেখানে গোলাপি বেলেপাথর এবং মার্বেলের বড় দেওয়াল রয়েছে। এই মন্দিরটি নির্মাণে ৪০,০০০ ঘনমিটার মার্বেল, ১,৮০,০০০ কিউবিক মিটার বেলেপাথর এবং ১৮ লক্ষেরও বেশি ইট ব্যবহার করা হয়েছে। গত তিন বছরে, রাজস্থান এবং গুজরাটের ২,০০০-এরও বেশি কারিগর মন্দিরের জন্য ৪০২ টি সাদা মার্বেল স্তম্ভ খোদাই করেছেন। এই মার্বেল এসেছে ইতালির ম্যাসিডোনিয়া থেকে।

এই মন্দির কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে একটি বড় অ্যাম্ফিথিয়েটার, একটি গ্যালারি, একটি লাইব্রেরি, একটি ফুড কোর্ট, একটি মজলিস, ৫,০০০ আসনবিশিষ্ট দু’টি কমিউনিটি হল, বাগান এবং শিশুদের খেলার জায়গা রয়েছে। মন্দিরের নকশা বৈদিক স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। ভারতীয় কারিগরদের দ্বারা এই মন্দিরের জন্য একাধিক ভাস্কর্য এবং খোদাই করা হয়েছে। যা পরে আবুধাবিতে পাঠানো হয়েছিল।

এমতাবস্থায়, এই মন্দিরটি একটি আকর্ষণীয় আধ্যাত্মিক স্থান হবে। এদিকে, ভারতীয় রাষ্ট্রদূত জানান যে, “আবুধাবির উপকণ্ঠে একটি পাহাড়ের চূড়ায় স্থাপিত এই মন্দিরটি আমাদের পূর্বপুরুষ- মহাত্মা গান্ধী এবং শেখ জায়েদের আকাঙ্ক্ষিত শান্তি ও সহনশীলতার স্থায়ী ঐতিহ্যের প্রমাণ হবে।” রাষ্ট্রদূতের ঘোষণার সাথে সামঞ্জস্য রেখে, উদ্বোধনের আগে মন্দিরের স্থাপত্যের ঝলক প্রত্যক্ষ করতে ৪২ টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের জন্য গত সোমবার একটি প্রিভিউ ইভেন্টের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে স্বাগত বক্তব্যে, রাষ্ট্রদূত সুধীর মন্দির নির্মাণের সমাপ্তির বিষয়ে তাঁর উৎসাহ ভাগ করে নেন। তিনি জানান “এটি অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল, কিন্তু স্বপ্নটি সত্যিই বাস্তবে পরিণত হয়েছে।”

পাশাপাশি, (বাফস) হিন্দু মন্দির প্রকল্পের প্রধান স্বামী ব্রহ্মবিহারীদাস তাঁর মূল বক্তব্যে এই মন্দিরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব, নির্মাণ প্রক্রিয়া এবং এটির বিশ্বব্যাপী প্রভাব সম্পর্কে তথ্য দেন। তিনি আন্তঃধর্মীয় এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক সম্প্রীতির একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসাবে মন্দিরের ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ভারতীয় উভয় নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তাছাড়া আমিরাতে বসবাস করেন প্রায় ৩০ লাখ ভারতীয়। সেখানে মন্দির নির্মাণ করায় তারা বেশ খুশি। আবুধাবির জেবেল আলি গ্রামে তৈরি হয়েছে এই মন্দির। তবে শুধু এই হিন্দু মন্দির নয়, এর আগেও জেবেল গ্রামে তৈরি হয়েছে বহু গির্জা।

error: Content is protected !!