অনলাইন ডেস্কঃ
সুলেইমান হাসান, বয়স ১২ বছর। ইসরায়েলের অধিকৃত পশ্চিম তীরের বাসিন্দা। সাইকেল চালানোর সময় একটি প্রাইভেটকার তাকে ধাক্কা দিয়েছিল। এতে দুর্ঘটনায় শরীরের থেকে (মূলত ধড়) মাথা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল তার।দুর্ঘটনাটি এমনভাবে ঘটে, এতে যেকোনও মানুষের প্রাণ চলে যাওয়ার কথা। হাসানের জীবনও মারাত্বক ঝুঁকিতে পড়েছিল। সন্তানের বেঁচে থাকার আশা হারিয়েছিলেন ওই শিশুর বাবা-মাও। অবিশ্বাস্য হলেও সেই হাসান প্রাণে বেঁচে গেছে।
আধা বিচ্ছিন্ন মাথাটিও আছে সঠিক স্থানে। আর এ অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন কয়েকজন ইসরায়েলি চিকিৎসক।ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদপত্র ‘দ্য টাইমস অব ইসরায়েল’- এর বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, দুয়েক মাস আগে পশ্চিম তীরে সাইকেল চালানোর সময় দুর্ঘটনার শিকার হয় হাসান। একটি গাড়ির সঙ্গে তার সরাসরি সংঘর্ষ হয়।
দুর্ঘটনার পর তার মাথার খুলি মেরুদণ্ডের উপরের কশেরুকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত হেলিকপ্টারযোগে তাকে নেওয়া হয় দক্ষিণ-পশ্চিম জেরুজালেমের এইন কেরেমের হাদাসাহ হাসপাতালে। ভর্তি করা হয় ট্রমা কেয়ার বিভাগে। চিকিৎসকরা বোর্ড গঠন করে হাসানের চিকিৎসা শুরু করেন। সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে জটিল ও বিরলতম অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন তারা। হাসানের ঘাড়ের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া খুলি পুনঃস্থাপনের কাজও শুরু করেন চিকিৎসকরা। দীর্ঘ সময় ধরে হাসানের গলা, ঘাড় ও মাথায় নতুন প্লেট ও ফিক্সেশন স্থাপন করেন তারা।
এ বিষয়ে এইন কেরেমের হাদাসাহ হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন ডা. ওহাদ আইনাভ বলেন, এ ধরনের ঘটনায় সাফল্য ও ব্যর্থতার সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ করে। আমরা ঝুঁকি নিয়েছিলাম। এ অস্ত্রোপচারে সফল হওয়া ‘অলৌকিক’ ঘটনার চেয়ে কম নয়। ঘটেছেও তাই। শিশুটিকে রক্ষা করতে আমরা আমাদের জ্ঞানবুদ্ধি ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত মাসে হাসানের অস্ত্রোপচারটি করা হয়। প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শুরুতেই এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে কর্তৃপক্ষ কিছু জানাতে চায়নি। তারা চাচ্ছিলেন, হাসানকে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণে রাখতে। একমাস অতিবাহিত হলে সুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে ছাড়পত্র দেন তারা। এরপরই বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
তারা আরও জানান, অস্ত্রোপচারের পর হাসানের স্নায়ুবিক কোনও সমস্যা নেই। কারও সাহায্য ছাড়াই সে হাঁটাচলা করতে পারছে। এটি ইতিবাচক, তবে আরও কয়েক মাস চিকিৎসকরা হাসানকে পর্যবেক্ষণে রাখবেন।ছেলেকে জীবন্ত ফিরে পেয়ে আবেগে উচ্ছ্বসিত হাসানের বাবা-মা। বারবার ইসরায়েলি চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তারা। হাসানের বাবা বলেছেন, আমি যত দিন বাঁচব তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যাব। চিকিৎসকদের পেশাদারি দক্ষতা ও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আবারও প্রমাণিত হল। তাদের ধন্যবাদ দেওয়া ছাড়া আমার আর কিছু নেই। সূত্র: এনডিটিভি, ডেইলি মেইল, টাইমস অব ইসরায়েল।
সি.বিশ্বাস/নিউজবিডিজার্নালিষ্ট ২৪