
মোঃ লুৎফর রহমান লিটন,সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
আজ ২৭ আগস্ট ২০২৫ রোজ বুধবার সিরাজগঞ্জ জেলা শহরে সরকারি সেবা নিতে আসা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসহায় রোগীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
সরকারি হাসপাতালের কতিপয় কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মচারীরা বেসরকারি মালিকানায় যুক্ত। এতে স্বাস্থ্যখাতের রক্ষকরাই ভক্ষকে পরিণত হয়েছে। সেবা নিতে আসা রোগী হালিম মিয়ার অভিযোগ, সরকারি সেবা দিবে না বললেই হয়। আপনারা সরাসরি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতালের পাশে বেসরকারি প্যাথলজি হাসপাতাল গড়তে বড় ধরনের বাণিজ্য হয়ে থাকে। প্রতি বছর এই সমস্ত বেসরকারি প্যাথলজি হাসপাতালে লাইসেন্স নবায়ন করে আসছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন।
জেলায় স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালের নামে অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও বাড়তি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে, এক বছর ধরে ভ্রাম্যমাণ অভিযান করছে না সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন।
জানা যায়, যে কোনো প্যাথলজি হাসপাতাল স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করতে হয়। পরবর্তীতে অনুমোদনের জন্য স্ব স্ব উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জনের পরিদর্শন পূর্বক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই সমূস্ত হাসপাতালের অনুমোদন হয়ে থাকে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশেই গড়ে উঠেছে মেডিপ্যাথ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, হেলথ এইড ইউনিট-২, দি নিউ লাইফ, জে.কে ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, আভিসিনা হাসপাতাল-২, সিরাজগঞ্জ ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক ক্লিনিক, ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক ক্লিনিক, গ্রীণ ল্যাব অ্যান্ড হরমোন সেন্টার, মান্নান মেমোরিয়াল ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, সাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাসপাতাল, আলেয়া জেনারেল হাসপাতাল, ডায়াবেটিক ফুট কেয়ার অ্যান্ড পি.আর.পি সেন্টার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসপাতাল। জানা যায়, হাসপাতালের সামনে ও আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে এসব বেসরকারি ল্যাব ও হাসপাতাল। আর এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত রয়েছে কিছু বেতনভুক্ত দালাল, যাদের কাজই হচ্ছে, সরকারি হাসপাতালের রোগীদের ভাগিয়ে প্যাথলজি ও হাসপাতালগুলোতে নিয়ে যাওয়া।
স্থানীয় শিক্ষক মো: শহিদুল্লাহ বুলবুল জানান, সরকারি হাসপাতালের এক শ্রেণির ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও আয়ারাও রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে কমিশন পাচ্ছে। আমি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখেছি, সরকারি আইন অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালগুলোর এক কিলোমিটার, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আধা কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল থাকতে পারবে না। কিন্তু এই আইন মানা হচ্ছে না, চলছে রমরমা বাণিজ্য। এই বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অধিকাংশেরই মালিক ডাক্তার ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা। অজানা কারণে চুপ রয়েছে সিভিল সার্জন অফিসসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিচালক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান বলেন, আমাদের এখানে যে ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে তা উত্তরবঙ্গের কোথাও নেই। এখানে সর্বাধুনিক মডুলার ল্যাব, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, ডিজিটাল এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, ল্যাপারোস্কপি মেশিন, আইসিইউ, সিসিইউ, ক্যাথ ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে, যা সিরাজগঞ্জবাসীর জন্য গর্বের বিষয় যে সর্বাধুনিক সেবা পাচ্ছে। আমাদের হাসপাতালে ল্যাপারোস্কপি অপারেশন চালু করা হয়েছে, গাইনী ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে, ল্যাব চালু হয়েছে, ডেন্টাল ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে, এক্স-রে, ইসিজি চালু করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী মো: মামুন জানান, হাসপাতাল ঘিরে এত বেশি বেসরকারি ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, তারা এখন রোগী আনার জন্য হাসপাতালে দালাল নিয়োগ করেছে।
ভুক্তভোগী এক রোগীর স্বজন রনঞ্জু মিয়া জানান, হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে এসে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে রোগীরা ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হন।
জেলার সাবেক বেসরকারি ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি ডা. মো: মাসুম জানান, ব্যাঙের ছাতার মতো হাসপাতালের চারপাশে গড়ে ওঠা ক্লিনিক ও প্যাথলজিগুলো আমাদের সদস্যভুক্ত নয়। এরা কীভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলেছে, এ বিষয়ে আমরা অবগত নই।
সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন নুরুল আমীন জানান, সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় মেডিকেল কলেজের পাশেই গড়ে ওঠা বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এটা শুধু সিরাজগঞ্জ নয়, সারা দেশেই সরকারি হাসপাতালের পাশে গড়ে উঠেছে হাসপাতালগুলো।