
এম ওয়াজেদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার:
শীত আসতে না আসতেই যশোরের মাঠে শুরু হয়েছে খেজুর গাছ তোলার প্রস্তুতি। এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার প্রবীণ গাছীরা। ভোরের শিশিরে ভেজা মাঠে দেখা মেলে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই দৃশ্য—গাছের গায়ে বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে উঠে দক্ষ হাতে খেজুর গাছের ছাল ছাড়াচ্ছেন গাছী।
যশোরের মনিরামপুর গোপালপুর গ্রামের প্রবীন গাছি রবিউল ইসলাম (৬০) বলেন,
প্রতি বছর এ সময় থেকেই আমরা খেজুর গাছ তোলা শুরু করি। গাছের গায়ে কেটে পরিষ্কার করে রাখলে শীতের শুরুতেই রস পাওয়া যায়। এই কাজটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু এটাই আমাদের জীবনের অংশ।
অন্যদিকে সতীঘাটা কামালপুর গ্রামের অভিজ্ঞ গাছী আশিকুর সাহা জানান,
এখন আর তরুণরা গাছি হতে চায় না। আমরা যারা বয়সে প্রবীণ, তারাই এই পেশা ধরে রেখেছি। সকালে রোদ ওঠার আগেই কাজ শুরু করি, কারণ তখন গাছের রস সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষণ হয়।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, খেজুরের রস যশোরের শীতকালীন অর্থনীতির একটি বড় অংশ। গাছ থেকে প্রাপ্ত রস দিয়ে তৈরি হয় গুড় ও পাটালি, যা দেশের নানা স্থানে বিক্রি হয়।
খেজুর গাছ তোলার পুরো প্রক্রিয়ায় দেখা যায়—গাছীরা কোমরে দড়ি বেঁধে, হাতে ধারালো ছুরি নিয়ে গাছের ছাল ছাড়িয়ে দেন। পরে সেই অংশে বসানো হয় ‘কলস’ বা ‘ভাড়’, যেখানে রাতভর রস ঝরে পড়ে।
প্রবীণ গাছী কওসার আলী আরও বলেন, এখন অনেক জায়গায় খেজুর গাছ কমে গেছে। সরকার বা স্থানীয় উদ্যোগে যদি নতুন করে গাছ লাগানো হয়, তাহলে এই ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে।”
যশোরের বিভিন্ন এলাকায় নভেম্বরের শুরু থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে এই রস সংগ্রহের মৌসুম।
শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো প্রতিদিন মাঠে দেখা যায় এসব গাছীর পরিশ্রমের দৃশ্য—যা বাংলার গ্রামীণ জীবনের এক অনন্য প্রতিচ্ছবি।



