কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নে সংঘটিত ভোট জালিয়াতির ঘটনায় অভিযুক্ত কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মী এখন বিএনপি'র নেতৃত্বে স্থান পেয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, যেসব ব্যক্তি সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ভোট ‘চুরি’ করেছিলেন, যারা প্রকাশ্যে সিল মেরে জাল ভোট দিয়েছিল, তাদেরই আজ বিএনপি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হচ্ছে। এতে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ছক্কুর নেতৃত্বে ইউনিয়নের একাধিক কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। ছক্কুর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সহযোগী তখন কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদানসহ নানা অনিয়মে জড়িত ছিলেন। অথচ বর্তমানে এদেরই অনেকে কোদালকাটি ইউনিয়ন বিএনপি'র বিভিন্ন কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন। বিএনপি ও জামায়াতের একাধিক নেতা-কর্মীর দাবি, চর সাজাই গ্রামের ৫ নং ওয়ার্ডে ছক্কু চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভোট জালিয়াতিতে অংশ নেন সাবেক মেম্বার ফরিদুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান আসাদ, মোহাম্মদ আলী, আংগুর মিয়া, মোয়াজ্জেম হোসেন, আব্দুল হাকিম ও তার ছেলে বাবু।
এদের মধ্যে আংগুর মিয়াকে সদ্য গঠিত ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মোয়াজ্জেম হোসেনকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে।রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কুর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।এই নিয়ে ইউনিয়নজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিএনপি'র তৃণমূল নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করছেন, দলের কিছু অসাধু নেতা ব্যক্তিগত স্বার্থে ও অর্থের বিনিময়ে ওই বিতর্কিত ব্যক্তিদের দলে স্থান দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে কোদালকাটি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সোহানুর রহমান বলেন, কোদালকাঠি ইউনিয়ন বিএনপি'র ৫ নং ওয়ার্ডে যে কমিটি'টি হয়েছে, এদের মধ্যে কয়েকজন ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট চুরি করেছে। যেখানে আমরা নিজেরা ৫ নং ওয়ার্ড কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আংগুর মিয়াকে সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সরাসরি দেখেছি। আমাদের যারা বিএনপি'র প্রতিনিধিরা মানে এজেন্ট যারা ছিল তারাও দেখছে এরা যে ভিতরে গিয়ে ভোট মারছে। সে সময়ে বর্তমানে ইউনিয়ন বিএনপি'র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান ওই কেন্দ্রে বিএনপি'র এজেন্ট ছিল। উনিও এর চাক্ষুষ প্রমাণ।
একই বিষয়ে কোদালকাটি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নান বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি পুলিং এজেন্ট হিসেবে ছিলাম এক নং বুথে। আমার দেখা মতে যখন সাড়ে এগারোটা বাজে আমাদের ওখানে চারটা বুথ ছিল যেখানে আমি মান্নান, কেরামত ডাক্তার, আবু তালেব মেম্বার ছিল।
ওই সময় আমাদেরকে ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ বের করে দিল জোরপূর্বক। আমরা তখন বের হতে চাইলাম না। তখন আমাদেরকে গালি দিয়ে বের করে দিল। তখন আমাদের সামনে ডাক নাম হল আংগুর মিয়া, মোয়াজ্জেম, মোহাম্মদ আলী, বাবু এদেরকে।আংগুরের বাবার নাম হল আবুল হোসেনের ছেলে।
ওই সময় উনাদের হাতে ব্যালট ছিল, আমরা তখন বের হতে চাই না। ওই সময় ব্যালট আমাদের সামনেই নিজদের হাতে ব্যালটে সিল মারছে। আমি সেটা নিজে দেখছি। আংগুর মিয়া ও মোয়াজ্জম হোসেনকে আমি নিজে দেখেছি। আংগুর ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি'র সাংগঠনিক সম্পাদক হইছে এবং মোয়াজ্জেম সিঃসহ সভাপতি হয়েছে।
ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি কাল কমিটি করার সময় উপস্থিত ছিলাম। সেখানে অনেকেই বলাবলি করছে যে মোয়াজ্জেম এবং আংগুর ১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ৫ নং ওয়ার্ডের সেন্টার দখল করে প্রকাশ্যে সিল মেরে নিয়েছে। আংগুর একাই ১৫০ সিল মেরেছে। এমন মার্কামারা দেশদ্রোহীদের বিএনপি'র মতো আদর্শবান সংগঠনে পোস্ট দেওয়া সম্পূর্ণ নীতিবিরোধী। অভিযোগ প্রসঙ্গে কোদালকাটি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ছফের আলী এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, যে অভিযোগকারীরা বলেছে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেছে। ৫ নং ওয়ার্ডের বসবাস করি, আমি কোদালকাটি ইউনিয়নের আহবায়ক। তাদের (অভিযুক্তরা) বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই, তারা পূর্বের থেকেই বিএনপি করতো এখনো বিএনপি করে।তবে, অভিযুক্ত ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি'র নব গঠিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আংগুর মিয়ার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি। স্থানীয় একাধিক রাজনৈতিকদের মতে, রাজিবপুর অঞ্চলে রাজনৈতিক স্বার্থে দলবদলের প্রবণতা দীর্ঘদিনের। ক্ষমতার পালাবদল বা সম্ভাব্য নেতৃত্ব পরিবর্তনের আভাস পেলেই অনেকেই দল পরিবর্তন করে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চান।
এ কারণেই হয়তো ২০১৮ সালের ভোট জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাও এখন নতুন রাজনৈতিক আশ্রায় খুজেন।
কোদালকাটি ইউনিয়ন বিএনপি'র একাধিক নেতা কর্মীর সাথে আলোচনা করে জানা যায় যে কোদালকাটি ইউনিয়ন বিএনপি'র আহবায়ক ছফের আলী নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছেন।