Tuesday, October 14, 2025

আজ মহাসপ্তমী

Date:

Share post:

স্বীকৃতি বিশ্বাসঃ

ষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার বোধনের পর সপ্তমীর মহা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মহাসপ্তমী হলো শারদীয় দুর্গাপূজার দ্বিতীয় দিন এবং প্রধান পূজার প্রথম দিন। এই দিনের পূজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ কিছু আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয়।
আজ সোমবার (২৯ শে সেপ্টেম্বর) দেবীর মহা সপ্তমী পূজা শেষ করতে হবে।পূজা শেষে পূণ্যার্থীরা উপবাস করে অঞ্জলী দেবেন।

১. নবপত্রিকা স্থাপন ও স্নান (কলাবউ):মহাসপ্তমীর একটি প্রধান রীতি হলো নবপত্রিকা স্থাপন। নবপত্রিকা হলো নয়টি উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি একগুচ্ছ কাঠামো। এই নয়টি উদ্ভিদ (কলা, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক, মান এবং ধান) দেবী দুর্গার নয়টি রূপের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
সকালে পবিত্র জল, সাধারণত গঙ্গা বা অন্য কোনো নদী বা জলাশয়ের জলে এই নব পত্রিকাকে স্নান করানো হয়।স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি (সাধারণত লাল পাড়ের সাদা শাড়ি) পরানো হয় এবং সিঁদুর দিয়ে বধূর আকার দেওয়া হয়।
এরপর এটি পূজামণ্ডপে নিয়ে এসে দেবী দুর্গা ও গণেশের মূর্তির পাশে স্থাপন করা হয়। এটিকেই সাধারণত “কলাবউ” বলা হয়ে থাকে। অনেকে কলাবউকে গণেশের স্ত্রী মনে করলেও, এটি আসলে দেবী দুর্গারই নয়টি রূপের প্রতীক।

২. দেবী কালরাত্রি রূপের পূজা: শাস্ত্র মতে, মহাসপ্তমীর দিনে দেবী দুর্গার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ কালরাত্রি-এর পূজা করা হয়। দেবী কালরাত্রি অশুভ শক্তির বিনাশকারী এবং শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠাতা। এই রূপের পূজা করলে ভক্তদের ভয়, নেতিবাচকতা এবং জীবনে আসা বাধা দূর হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।

৩. মহাস্নান:নবপত্রিকা স্নানের পর দেবীর মহাস্নান অনুষ্ঠিত হয়।এই আচারে একটি দর্পণ (আয়না) দেবী দুর্গার প্রতিমার সামনে স্থাপন করা হয়, যাতে প্রতিমার প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। এরপর সেই দর্পণে বা প্রতিচ্ছবিতে দেবীর মহাস্নান সম্পন্ন করা হয়।
৪. ষোড়শ উপাচারে পূজা: ষোড়শ উপাচার(Shodashopachara) হলো হিন্দু পূজার একটি পদ্ধতি, যেখানে দেব-দেবীকে ১৬টি উপকরণ বা উপাদানের মাধ্যমে পূজা করা হয়। এটি একটি বিস্তারিত পূজাবিধি যা দেবতাকে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার সঙ্গে আরাধনা করার প্রতীক।
ষোড়শ উপচারের ১৬টি উপাদান নিচে দেওয়া হলো:
১. আসন – বসার স্থান বা আসন নিবেদন | দেবতাকে বসতে দেওয়া।
২. স্বাগত – সাদর অভ্যর্থনা জানানো | দেবতাকে স্বাগত জানানো।
৩. পাদ্য-পা ধোয়ার জন্য জল | চরণ ধৌত করার জন্য জল নিবেদন।

৪. অর্ঘ্য-শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন (সুগন্ধি মিশ্রিত জল) | হাত ধোয়ার জন্য জল বা বিশেষ অর্ঘ্য নিবেদন।
৫. আচমনীয় – পান করার জন্য জল | মুখ ধোয়ার বা পান করার জন্য জল নিবেদন।
৬. মধুপর্ক-দই, ঘি, মধু, চিনি ও দুধের মিশ্রণ। বিশেষ শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে এই মিশ্রণ অর্পণ।
৭. স্নানীয়- স্নানের জন্য জল। সুগন্ধি বা সাধারণ জলে দেবীকে স্নান করানো।
৮. বস্ত্রঃ নতুন পোশাক নিবেদন দেব-দেবীকে নতুন বস্ত্র বা শাড়ি পরানো।
৯. আভরণ- অলংকার বা গহনা দেবীকে অলংকার দিয়ে সজ্জিত করা।
১০. গন্ধ – চন্দন, কুমকুম বা সিঁদুর। সুগন্ধি দ্রব্য বা তিলক নিবেদন।
১১. পুষ্প- ফুল বা ফুলের মালা। দেবীর চরণে ফুল বা মালা অর্পণ।
১২. ধূপ- ধূপকাঠি বা সুগন্ধি ধোঁয়া। সুগন্ধযুক্ত ধোঁয়া নিবেদন।
১৩. দীপ – প্রদীপ বা আলো। আলো বা প্রদীপ দেখানো।
১৪. নৈবেদ্য – খাদ্য ও পানীয় (মিষ্টি, ফল, চাল ইত্যাদি)। দেবতাকে খাবার ও পানীয় নিবেদন।
১৫. প্রণাম -স্তুতি ও মন্ত্র পাঠ সহকারে প্রণাম। দেবীর মহিমা বর্ণনা ও প্রণাম নিবেদন।

১৬. বিসর্জন -বিদায় জানানো বা ক্ষমা প্রার্থনা | পূজা শেষে দেবতাকে বিদায় জানানো বা নিজের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চাওয়া। (অন্যান্য মতে এটি অন্য একটি উপাচার দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়, যেমন প্রদক্ষিণ বা পুনরাচমনীয়)। |
দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীর দিন থেকেই এই ষোড়শ উপাচারে দেবীর পূজা শুরু হয়। এই উপচারগুলি আতিথেয়তার মাধ্যমে দেবতাকে মানুষের গৃহে স্বাগত জানানোর একটি রূপক।

দেবী দুর্গার মহাপূজা শুরু হয়। এদিন দেবীর চক্ষুদান সম্পন্ন হয় এবং ভক্তরা আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ, দীপ ইত্যাদি দিয়ে দেবীর আরাধনা করেন।

৫. গুরুত্ব: মহাসপ্তমী তিথি থেকেই দুর্গাপূজার মূল পর্বের সূচনা হয়। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, এই দিনেই দেবী দুর্গা মহিষাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন, যা বিজয়া দশমীর দিনে মহিষাসুর বধের মাধ্যমে শেষ হয়।

৬. কুমারী পূজা (কিছু স্থানে): অনেক অঞ্চলে মহাষ্টমীর দিন কুমারী পূজা করা হলেও, কিছু স্থানে সপ্তমীর দিনেও কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কুমারী পূজা হলো কুমারী মেয়েদের দেবী রূপে পূজা করা।

সংক্ষেপে, মহাসপ্তমী হলো দুর্গাপূজার এমন একটি দিন যা দেবীর শক্তির আরাধনা, ঐতিহ্যবাহী নবপত্রিকা স্থাপন এবং মূল পূজার শুভারম্ভের মাধ্যমে এক পবিত্র ও আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

মণিরামপুরে আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

‎মণিরামপুর প্রতিনিধিঃ সমন্বিত উদ্যোগ,প্রতিরোধ করি দূর্যোগ! এ প্রতিপাদ্যকে বাস্তবায়নে সারা দেশের ন্যায় যশোরের মণিরামপুরে আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস...

আজ ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হল বিজয়া সম্মেলনী

কলকাতা থেকে নিউজ দাতা মনোয়ার ইমাম: আজ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের বিষ্ণুপুর এর আমতলায় জেলা...

রৌমারীতে ক্লাস চলাকালিন সময়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানব’বন্ধন

লিটন সরকার রৌমারী কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : রৌমারী উপজেলার বাইটকামারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস চলাকালিন সময়ে মানববন্ধন করানোর...

বগুড়ায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে সবুজ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার

বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ বগুড়া সদর উপজেলার বারুইপাড়া এলাকায় “বারুইপাড়া সোনালী উন্নয়ন সংঘ”-এর উদ্যোগে “বৃক্ষ বিতরণ অনুষ্ঠান ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার...