Friday, July 25, 2025

নীতির চর্চায় যত ভণ্ডামি 

Date:

Share post:

নীতির চর্চায় যত ভণ্ডামি

-আহমেদ হানিফ

সূ্র্যের আলো এসে পৃথিবীর অন্ধকারাচ্ছন্নতা দূর করলেও কেন জানি মনে হয় সূর্যের আলোটা ঠিক আমাদের অন্দরমহলে প্রবেশ করেনা। ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে পরিবর্তন গুলো লক্ষ্য করলেও জানি আলোছায়ার খেলায় আটকে রয়েছে সভ্যদের সুউচ্চ দালান-কোঠা। সংস্কৃতির অনুকরণ হাজার মাইল দূরের নানান নান্দনিক চরিত্র কিংবা নান্দনিকভাবে চতুর্দিকের পরিবর্তন সাধনে আপত্তি নেই কারো।

আপত্তি নেই আধুনিকতার নামে অখাদ্য গেলাতে, ভূরিভোজনে জাতপাতের রেষারেষিটায় ঘি ঢেলে চুপটি মেরে বসে থাকতে। তাইতো আমাদের নীতিশালায় প্রতিনিয়ত ক্ষোভের চর্চা,গালাগালির রেওয়াজ চলে। দোষারোপের সংস্কৃতিটা ব্যাপক জমে উঠে,উঁচু মহল নিচু মহলের নজরে কানাই সাধুতো রুইতন শয়তান।

হবেই না কেন আমাদের নীতিশালায় তো আর অন্ধকার দূরীভূত হয়না,চুপিসারে সস্তা হাটে নিজেদের বেচার গোপন আয়োজন চলে যে।বেচায় যদি দু’পয়সা ভাগে কম জুটে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে নীতির কাঁদন কাঁদতে যে এই পাড়ার মানুষ সিদ্ধহস্ত। বোধের জাগরণের আসরে কত আয়োজন খানাপিনার কথাই বলছি নীতিজ্ঞান শেখারতো মেলা স্থান আছে। তাই এখানে মানুষ আর জ্ঞান অর্জনে আসে না, আসে জনৈক মানুষকে ঠকানোর মন্ত্রণা নিতে। স্বাধীনতার  দোহাই দিয়ে অচেতনে ঘুমপাড়ানি গান শুনিয়ে মানুষ ভুলিয়ে দিয়েছে স্বাধিকারের সুখ-চেতনা। বোধন বাঁশির সুরে এখন বিষাদের ছাপ স্পষ্ট শুনতে পাই,করুণ রসে সিক্ত জনজীবনে দুর্নীতির অভিযোগে দণ্ডিত মানুষেরা অস্পষ্ট উচ্চারণে বলে কর্মই তো সুখ আনে। কতশত চুক্তিহীন কথার আয়োজন চলে নিভৃতে ভাঙাচোরা ঘরের মেঝেতে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত জনৈক মেধাবী ছাত্রের।

রসহীন আমি কেনই বলছি এমন পক্ষপাতদুষ্ট কথা,কেন জানি মনে হতে পারে এমন আচরণের জন্য বেকারত্বের অভিশাপ আমাকে আঁকড়ে ধরেছে।আগেই বলেছিলাম আমাদের অন্দরমহলে সূর্যের আলো ঠিকঠাক পৌছায় না যার ধরুন আমরা নীতি চর্চার ও জ্ঞানবিকাশের স্থানগুলোতে ভণ্ডামির আশ্রয়ে আশ্রিত মানুষের জমজমাট আসর বসিয়ে রেখেছি। আসি আপাদমস্তক ব্যথায় জর্জরিত এই পাড়ার মানুষের জীবনে নীতিশালার ভণ্ডামির স্বরূপ উন্মোচনে-

ধর্মালয়ে:-

বেশিদিন হয়নি মসজিদের কাঁঠালের টাকার ভাগ নিয়ে মারামারিতে খুনের মতো নিন্দনীয় কাজ ঘটতে।আচ্ছা সৃষ্টিকর্তা কি আমাদের এই হীনকাজের জন্য পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন? ধর্মভেদে অসাধুর কবলে আজ ধর্মালয়গুলো জিম্মি হয়ে আছে,যার ধরুন আমাদের মননে ভয়ের সঞ্চার হয় কখন জানি কি হয়। বোধের চর্চায় যারা আমাদের আর্দশ হওয়ার কথা তারাই যদি ভণ্ডামি ও স্বার্থের গানে বিভোর হয়ে থাকে তাহলে আমাদের উত্তরণের উপায় কি?

নীতিবানে নীতির অবক্ষয়:-

সমাজপতিদের মান্য করেনা এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর, তবে তারা নীতির চর্চায় পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে অযাচিত, অশোভন ব্যবহারে মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। মিথ্যার বুলি আওড়ে বেশ যুতসই অবস্থান করে ভণ্ডামির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন।

জ্ঞানকেন্দ্রে:-

পাঠশালায় যায় মানুষ শিখতে,জানতে বুঝতে আমাদের শিক্ষাগুরুরা আমাদের শেখাবেন অজানা,অচেনা হাজার কিছু।কিন্তু আজ তা আর হয়ে উঠছেনা। এই পাড়ার জ্ঞানকেন্দ্র গুলো বাণিজ্যিক হয়ে উঠেছে,উদাসীনতা ও ক্লাস নিতে অপারগ গুরুদের সান্নিধ্যে এসে আমরা যেন আরো আহাম্মক হয়ে যাচ্ছি।

ভণ্ডামি শিখন,পঠনে:-

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়েই শুরু করছি ‘সবাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দিবে কোথা’ হ্যাঁ তেমনি একটা সময় পার করছি আমাদের বর্তমান সময়ে।আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ড দেখলে এমনই মনে হবে। মনে হচ্ছে ব্যথায় জর্জরিত মুমূর্ষু আত্মাকে কোনো রকমে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে।

এমন কথা বলার কারণ অনুসন্ধানকল্পে জানাতে পারি বর্তমানে নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের নামকরা অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের ভাষা চর্চা বা বানান চর্চা দেখলে মনে হবে ভাষা জননী হয়তো দূর্ভিক্ষে প্রতিত হয়েছে।

বানান ভুলের মাধ্যমে মনে হয় নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে কে কাকে ছেড়ে যাবে।সহজ ও সকলের দৃষ্টিগ্রাহ্য অনেক বানান নিয়মিত ভুল করতে দেখছি। এইতো সেদিন প্রাথমিকের মূল্যায়নের একটি প্রশ্নপত্রে যে পরিমাণ বানান ভুল দেখতে পেলাম তা চিন্তার বিষয়ও বটে।এমন চলতে থাকলে আমাদের আগামী প্রজন্ম কি শিখবো। আপনি এইসব বানান ভুলকে মুদ্রণজনিত ভুল বলে চালিয়ে দিয়ে দায়সারা ভাব দেখালে চলবে না,এই ক্ষেত্রে আপনাকে দায়িত্বশীল হতে হবে। কারণ ১৯৫২ তে রক্তাক্ত শহিদের বুকের উপর ভর করে আমাদের বাংলা ভাষার স্বীকৃতি মিলেছে।

তাই যথার্থ কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আপনারা আপনাদের অবস্থান থেকে এই ধরণের হীন কাজগুলো পরিহার করে আরো যত্নশীলতার মাধ্যমে ভাষার চর্চা করলেই ভুলগুলো দূর করতে সক্ষম হবেন।

তাই নিজেদের চিন্তাকে বোতল বন্দি করে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করা ছাড়া আর উপায় দেখছি না,

আশা করছি নীতি চর্চার ক্ষেত্রে ভণ্ডামির লোপ পেলেই আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।

 

আহমেদ হানিফ 

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

হাটহাজারী, চট্টগ্রাম

মোবাইল:০১৮৭১৯২৭৫৫০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

যশোরে রামনগর ইউনিয়ন পরিষদে স্ব’ল্পমূল্যে টিসিবির পণ্য বিতরণ

ওয়াজেদ আলী,স্টাফ রিপোর্টার: যশোর সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়ন পরিষদে স্বল্পমূল্যের কার্ডধারীদের মাঝে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর পণ্যসামগ্রী...

টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন কলকাতার শহরের বহু এলাকা

কলকাতা থেকে নিউজ দাতা মনোয়ার ইমাম: গতকাল দিল্লীর মৌসম ভবন থেকে আগাম সতর্কতা জারি হিসেবে বলা হয়েছিল যে আগামী...

ট্রেনিং বিমান দু’র্ঘটনায় নি’হতদের স্ম’রণে শ্রীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের দোয়া মাহফিল

শরিফুল খান প্লাবন: শ্রীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ট্রেনিং ফাইটার বিমান বিধ্বস্ত...

রামনগর ইউনিয়নে ১৭০টি ভাতা বই বিতরণ এজেন্ট ব্যাংকের বি’রুদ্ধে অর্থ কাটার অ’ভিযোগ

মোঃ ওয়াজেদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার: যশোর সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়ন পরিষদে মোট ১৭০টি ভাতা বই বিতরণ করা হয়েছে। এর...