Wednesday, July 23, 2025

ভারতের সিকিমে হড়পা বন্যার তোড়জোড় কমতে শুরু আশংকায় তিস্তা পারের মানুষ

Date:

Share post:

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর:

ভারতের সিকিমে হড়পা বন্যার উজান থেকে ধেয়ে আসা প্রবল ঢলের চাপ কমেছে ভাটি অঞ্চলেও। হঠাৎ ফুলেফেঁপে ওঠা তিস্তা নদী বিস্তৃত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীগুলো এখন অনেকটাই শান্ত। রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিস্তাপাড়ের মানুষের মনে স্বস্তি ফিরলেও কাটছে না নদী ভাঙনের আশঙ্কা। এখন বসতভিটা রক্ষায় ব্যস্ত সময় কাটছে নদীপাড়ের মানুষদের।
রোববার (৮ অক্টোবর) সকালে রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলার নদী পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার অনেক নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি কমতে শুরু করায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নদীর তীরবর্তী মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এবার দুই মাসের ব্যবধানে ছয় দফায় নদীর পানি ওঠানামা করেছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়,গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুরে বৃষ্টি হয়েছে ১১ দশমিক ৭ মিলিমিটার। আজ সকাল কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি শূন্য দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই সময়ে নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৯১ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর রংপুর অংশের গঙ্গাচড়াতে নদী ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।


ইতোমধ্যে লক্ষ্মীটারী ও কোলকোন্দ ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি বাড়ি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। ধসে গেছে স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করা গ্রামরক্ষা বাঁধ। এছাড়াও হড়পা বন্যায় এবারই প্রথম কাদাপানি দেখেছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। সিকিমের কাদা পানিতে লেপিয়ে গেছে অনেকের শীতকালীন সবজি ও পাকা কাঁচা আমনের খেত। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়েনের চর ইচলি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, উজানের ঢলের প্রবল স্রোতে আমাদের গ্রামবাসীর তৈরি করা মাটির বাঁধটি ধসে গেছে। যদিও কেউ কেউ অভিযোগ করেছে রাতের আঁধারে নাকি কে বা কারা বাঁধটি কেটে দেয়। তবে বাঁধটি ধসে যাওয়ায় ১৫ মিনিটের মধ্যেই তিনটি পরিবারের ভিটেমাটি, ঘরবাড়ি, মালামাল গবাদিপশুসহ সব হাওয়া হয়ে গেছে। বাঁধ ভাঙলেও মুহূর্তে পানি কমে যাওয়ায় আমন ধানের খেতের তেমন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এখন নদী ভাঙনের আশঙ্কা বাড়ছে। কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চর এলাকার স্থানীয় আয়নাল হক বলেন, ‌‘এ্যলা নদীত তেমন পানি নাই তারপরও হামার ভয় হওচে। কারণ পানি কমলে নদী ভাঙা নিয়্যা হামার চিন্তা বাড়ে। কয়দিন আগোত হামার তিনকোনা ঘরের দু’কোনা নদীর পাড় ভাঙি তলে গেইছে। এ্যালা বেট্যা-বেটিক নিয়্যা খুব কষ্টে আছি। নজরুল ও আয়নালের মতো তিস্তার কোলঘেঁষে বসতবাড়ি গড়া শত শত পরিবার এখন নদী ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের সাতটির ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। স্থানীয়ভাবে এখানকার সাধারণ মানুষ নদী ভাঙন রোধের চেষ্টা করেও সুফল পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় নদী ভাঙন থেকে স্থায়ী সমাধান চান ভাঙন কবলিতরা। স্থানীয়রা মনে করছেন, শংকরদাহে বাঁধ নির্মাণ না করা হলে বিগত সময়ের মত আবারও নবনির্মিত গঙ্গাচড়া মহিপুর তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়ক হুমকিতে পড়বে। বিশেষ করে রংপুর ও লালমনিরহাটের সঙ্গে মানুষের যাতায়াতের জন্য মহিপুর-কাকিনা সংযোগ সড়কটি বিচ্ছিন্ন হবে। তাদের দাবি, তিস্তা নদীর বাম তীরে সাত কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হলে এসব এলাকা ভাঙনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে। প্রতিবছর বন্যায় ক্ষয়ক্ষতিও কমবে।
তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্রুত কাজ শুরুরও দাবি জানান। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন বলেন, যেভাবে উজানের ঢল নেমে আসার কথা ছিল, কিন্তু সেভাবে পানি আর আসেনি।
তবে এলাকার লোকজন বন্যার মোকাবিলায় প্রস্তুত ছিল। এবার তিস্তা অববাহিকায় আগাম সতর্কতার কারণে সিকিমের বন্যার পানি তেমন একটা ক্ষতি করতে পারিনি। কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, বন্যার পর এখানকার মানুষদের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক নদী ভাঙন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কাজ না হওয়ায় হতদরিদ্র মানুষগুলো দিন দিন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল নয়টায় কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া পয়েন্টে ২ দশমিক ৭৯, চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র পয়েন্টে ২ দশমিক ৩৪, ধরলা পয়েন্টে ১ দশমিক ৫১, গাইবান্ধার ঘাঘট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়াও রংপুরের বদরগঞ্জে যমুনেশ্বরী পয়েন্টে ২ দশমিক ৭১, জাফরগঞ্জের ঘাঘট পয়েন্টে ৩ দশমিক ২১, ইসলামপুর ঘাঘট পয়েন্টে ১ দশমিক ৮৫, কাউনিয়া তিস্তা পয়েন্টে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।

রংপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর পানি দ্রুত নেমে যাওয়াতে এখন সব পয়েন্টে বিপৎসীমার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আপাতত পানি বাড়ার কোনো সতর্কতা নেই। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) থেকে বৃষ্টি শুরু হয় ভারতের সিকিমের বিভিন্ন এলাকায়। টানা বর্ষণে বুধবার ভোরের দিকে সিকিমের দক্ষিণ লোকন হ্রদের পানি উপচে তিস্তায় মিশে হড়পা বন্যা শুরু হয় উপত্যকা অঞ্চলে। পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় তিস্তা উপত্যকার অন্তত ১ হাজার ১৭৩টি বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। উপদ্রুত বিভিন্ন এলাকা থেকে এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ২ হাজার ৪২৩ জনকে।
এদিকে শনিবার (৭ অক্টোবর) পর্যন্ত ২৭টি মৃতদেহ উদ্ধারের পর ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় সিকিমের বন্যায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৩ জনে।
এখনও নিখোঁজ রয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। উদ্ধার হওয়া মৃতদেহের মধ্যে বাংলাদেশের তিস্তা নদী বেষ্টিত রংপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট থেকে মিলেছে ছয়টি মৃতদেহ। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

তাড়াশের দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতির লাই’সেন্স বা’তিল

মোঃ লুৎফর রহমান লিটন,  সিরাজগঞ্জ   সিরাজগঞ্জের তাড়াশে  দলিল লেখক সমিতির নামে সিন্ডিকেট করে ভূমি রেজিস্ট্রেশনে  মাত্রা  অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের...

খাগড়াছড়ি দেশ গড়তে জুলাই পদ যাত্রা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সংবাদ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়েছে

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি দেশ গড়তে জুলাই পদ যাত্রা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সংবাদ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ 21 জুলাই সোমবার বিকালে...

উল্লাপাড়ায় ভ’য়াবহ অ’গ্নিকা’ন্ডে ১২ লাখ টাকার ক্ষ’য়ক্ষ’তি

মোঃ লুৎফর রহমান লিটন, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌরসভার আদর্শ গ্রামের একটি ব্র্যাকে আগুন লেগে ১০ টি ঘর ভস্মিভুত হয়েছে।...

ছাগলের পাতা খা’ওয়াকে কেন্দ্র করে পা ভা’ঙার অ’ভিযোগ সতীঘাটায় উ’ত্তেজনা

মোঃ ওয়াজেদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার: যশোর সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের সতীঘাটা কামালপুর রাজবংশী পাড়ায় একটি ছাগলের পা ভাঙাকে কেন্দ্র...