স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোর
বাউল সম্রাট আবুল সরকারের মুক্তি ও মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর অমানবিক হামলার প্রতিবাদে যশোরে সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল শক্তির বিশাল গণসমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়।
আজ মঙ্গলবার যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র গাড়িখানা রোড উত্তাল হয়ে ওঠে এক বিশাল গণসমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল যশোর জেলা সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের আহ্বানে আয়োজিত হয়।
এই সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছাত্র-জনতা, লেখক–শিল্পীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে জেলাজুড়ে প্রতিবাদের এক শক্তিশালী চিত্র তৈরি হয়।
বাউলদের গান-প্রতিবাদে কেঁপে ওঠে যশোর শহর
সমাবেশ শুরুর মুহূর্ত থেকেই লালন সঙ্গীত, প্রথাগত বাউল গান ও প্রতিবাদী স্লোগানে ভরে ওঠে গাড়িখানা এলাকা।
বাউল শিল্পীদের কণ্ঠে মানবতাবাদী গান ও অংশগ্রহণকারীদের স্লোগান মিলিয়ে পুরো শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সংস্কৃতি রক্ষার দৃঢ় বার্তা।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক নেতা একরাম উদদৌলা,বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ
জিল্লুর রহমান ভিটু, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চা
খবির শিকদার,বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের
তসলিমুর রহমান,জাসদের (JASOD)
অ্যাড. কায়েশ,কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর
অ্যাড. আবুল হোসেন,ওয়ার্কার্স পার্টির
শামিম বিশ্বাস,জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের
জাহাঙ্গীর ফ্লাশ,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
রাশেদ খান ও ইমরান খান, মাওলানা ভাসানী পরিষদের হারুন অর রশীদ।
বক্তব্য রাখেননবিশিষ্ট লেখক ও চিত্রশিল্পী
মফিজুর রহমান রুন্নু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দীপংকর দাস রতন ও নাট্যব্যক্তিত্ব সানোয়ার আলম খান দুলু।
বক্তারা বলেন,“বাংলার মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাউল, জারি,সারি পালাগান, যাত্রা একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠীর পরিকল্পিত আক্রমণের মুখে। তারা ইসলামের নাম ব্যবহার করে সহিংসতা চালাচ্ছে, অথচ ইসলাম ও মানবতার মূল চেতনাকেই পদদলিত করছে।
তারা আরও বলেন,“বাউল সম্রাট আবুল সরকারকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে দাঁড়ালে বাউলদের উপর করা হয় নির্মম হামলা। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—এটি সংগঠিত ধর্মীয় উগ্রতার প্রকাশ। এই হামলা আমাদের সংস্কৃতি, মানবিকতা ও জাতীয় পরিচয়ের ওপর সরাসরি আঘাত।
বক্তারা দাবি জানান,বাউল সম্রাট আবুল সরকারের নিঃশর্ত মুক্তি মানিকগঞ্জে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার
সংস্কৃতিবিরোধী উগ্রতা দমনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বিক্ষোভ মিছিল টাউন হল মাঠে সমাপ্ত প্ল্যাকার্ড ফেস্টুনে ভরে ওঠে শহর
সমাবেশ শেষে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল গাড়িখানা রোড থেকে যশোর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউন হল মাঠে এসে শেষ হয়।
মিছিলে মানুষের হাতে ছিল রঙিন প্ল্যাকার্ড, সৃজনশীল প্রতিবাদী আর্টওয়ার্ক, সংস্কৃতি রক্ষার আহ্বান সম্বলিত ফেস্টুন।স্লোগানে, গানে এবং প্রতিরোধের শক্তিতে আজ যশোর শহর পরিণত হয় এক বিশাল সাংস্কৃতিক মঞ্চে।
আজকের এই সমাবেশ শুধু যশোর জেলার প্রতিবাদ নয়— এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতি, মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘোষণা।