
এস এম তাজাম্মুল,মণিরামপুরঃ
পুরাতন ড্রেনের পানি সরাসরি হরিহর নদীতে পড়ার জন্য ড্রেনের পড়ে থাকা অংশে নতুন ড্রেনের সংস্কার করা হয়েছে। তবে নতুন ড্রেনের সাথে পুরাতনটার সংযোগের মাঝে অবৈধভাবে একটি ভ্যারাটিজ দোকানদারের দখলে ড্রেনের পানি নিষ্কাশন ব্যাবস্থা বন্ধ হয়ে শতাধিক পরিবার সামান্য বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতায় ভোগে।
ড্রেনের সাথে বসবাড়িতে পানি বেঁধে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ,সাপ-পোকার সাথে মশার উপদ্রব্যে বিপাকে পড়েছে উল্লেখিত বিষয়ে ভুক্তভোগী যশোরের মণিরামপুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড তাহেরপুরের বাসিন্দারা।
শুধু তাহেরপুর না মণিরামপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষের ড্রেনেজ ব্যাবস্থ্যার চরম বেহাল দশার কারনে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পুরো ৯টি ওয়ার্ডের সেবা গ্রহীতার পাশাপাশি মণিরামপুর বাজারের প্রতিটি ব্যাবসায়ী মহল। সরেজমিনের তথ্য মোতাবেক,পৌরসভার প্রধান সড়কে কোয়াটার ড্রেনেজ ব্যবস্থার সাথে ২টি কাঁচাবাজার,২টি মাছবাজার,পশু হাসপাতাল রোড,রেজিস্ট্রি অফিস গলির ফুটওয়ার্ক সহ ৯টি ওয়ার্ডের ৯০% অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার মন্থরতায় জলবদ্ধার কারনে ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের ঝুঁকির কারন দেখিয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য ভুক্তভোগীরা একাধিক অভিযোগ করলেও পৌর প্রকৌশলী শাখার বিরুদ্ধে সেচ্চাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বাস্তবিক চিত্রের তথ্য নিয়ে কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার জানালেও ব্যাবস্থা গ্রহন তো দূরের! সেবার মানে সৃষ্টি হয়েছে অতিরিক্ত জটিলতা।
তথ্য অনুযায়ী,নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ২টি বৃহৎ প্যাকেজের ১মটিতে ১৪ কোটি টাকার প্রকল্পে ৬০৯২ মিঃ রাস্তা ও ২২৩১ মিঃ ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজের শিডিউল মোতাবেক কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেন্ডার জমা দিলেও বেশিরভাগ কাজের ফিল্ডে অফিসিয়াল কার্যক্রম বাদেও ঠিকাদারী কার্যক্রমে মণিরামপুর পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী তপু বিশ্বাসের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
কয়েকটি চলমান ও সদ্য শেষ হওয়া কাজের সাইডে তথ্য সংগ্রহে গেলে শ্রমিক ও তাদের সরদার নিজেই স্বীকার করেছেন যে কাজ করাচ্ছেন তপু সার।
তথ্যচিত্র বলছে,৯টি ওয়ার্ডের উল্লেখযোগ্য কয়েকটির মধ্য প্রধান সড়কের কেন্দ্রীয় মসজিদ হতে ধানহাটা মোড় পর্যন্ত নাই কোন পানি নিষ্কাশনের ব্যাবস্থা।গরুহাট মোড় হতে পুরাতন তেলপাম্প পর্যন্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও পানি অপসারনে মন্থরতা।
ড্রেনের উপরে পায়ে হাটা ফুটপাত দখলের প্রভাবে হাটতে পারেনা পথচারী। প্রধান সড়ক হতে দোলখোলা পূজা মণ্ডপ ঘুরে পাইকারি মাছ বাজারের যে ড্রেনটি চলে গেছে সেটা এখন বদ্ধ জলাশয়ে পরিনত হয়েছে।
বিশেষ করে মন্দির মোড়ে ২ বছর আগে নির্মিত ড্রেনটি নতুনের পিপি না উঠতেই গেলো বছরে আবার নতুন ড্রেনটি ভেংগে ফেলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ অভিযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। বৃষ্টির পানি ও মাছ বাজারের দুর্গন্ধযুক্ত পানি ড্রেনে আটকা পড়ে বদ্ধ জলাশয়ে এখন মশার বংশবিস্তারের উপযোগী হয়ে পড়েছে।ডেঙ্গুর আতংকের পাশাপাশি আশপাশের ব্যবসায়ীরা ড্রেনের উপর কাঠের পাটাতন দিয়ে চলাচল ও স্থাপনা বসিয়ে নিজেদের বিপদ নিজেরায় সৃষ্টি করেছে।
থানা গেট হতে ড্রেনেজ ব্যাবস্থা কিছুটা সচাল থাকলেও খুচরা কাঁচা বাজার হয়ে যে ড্রেন পাইকারি বাজারের মধ্যদিয়ে জেলা অডিটোরিয়াম ঘেষে প্রধান সড়কে যুক্ত হয়েছে সেটা পুরোটাই অকেজো বললে চলে।
ঐ ড্রেনের মুরগী হাটা মোড় হতে পশু হাসপাতাল গেট পর্যন্ত নির্ধারিত জায়গা না থাকায় পাইকারি কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীরা দিনে ৪/৫ ঘন্টা দখল করে রাখে,সৃষ্টি হয় যানজট।পশু হাসপাতাল গেট হতে প্রধান সড়ক পর্যন্ত ড্রেনটি মৃত্যু কূপ বললে চলে। ড্রেনে নাই পানি নিষ্কাশনের ব্যাবস্থা তারপরও ড্রেনটি খোলামেলা থাকায় পথচারী,ভ্যান,সাইকেল প্রাই অসাবধনতায় ড্রেনের ময়লা পানিতে পড়ে হযবরল হয়ে যায় বলে একাধিক অভিযোগ আছে। ২ সপ্তাহ আগে মণিরামপুর বিএনপির সদ্য প্রয়াত নেতা মুছা’র স্বরনসভা চলাকালে এক কর্মী ড্রেনের উপর দন্ডায়মান রডে বেধে ড্রেনে পড়ে হাবুডুবু খেয়েছিলো। অথচ প্রতিদিনই ঐ রাস্তা দিয়ে দূর্ঘটনা প্রবন জেনেও আবাসিক,দাপ্তরিক,প্রাতিষ্ঠানিক লোকজন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিশুরা চলাচল করে আসছে।
সম্প্রতি ভারী বর্ষনে পৌরসভার দূর্গাপুর,কামালপুর,বিজয়রামপুর,মোহনপুর ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে এলাকাবাসী ও পৌর কর্তৃপক্ষ মোহনপুর বটতলার পশ্চিম পার্শ দিয়ে ড্রেন কাটলে সাময়িক মুক্তি পায় এলাকবাসি ব্যাবসায়ীরা। তবে সেটা এখন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে।পানি চলে যাওয়ার পর একবারও খবর নেইনি কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড তাহেরপুর আকুন্জি মসজিদ হতে গ্রামীন ব্যাংক হয়ে হরিহর নদে চলে যাওয়া ড্রেনের নতুন পুরাতন ড্রেনের সংযোগ স্থলে জৈনক ফজলু নামের এক ভদ্রলোক সরকারি জায়গা দখল করে রীতিমতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ছাগল পালনের খামার দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে শতাধিক পরিবারকে বিপদে ফেলে রেখেছে। তথ্যসূত্র বলছে,বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এই ফজলুর ছেলে জাকির হোসেন(২৮) এলাকার চিন্হিত যুবলীগের সাথে সম্পৃক্ত থেকে বিভিন্ন আইন বহির্ভূত কর্মকান্ড করে বেড়িয়েছে।
এই জাকিরের দৌরাত্ম এখনো চলছে বলে তথ্য আছে। জাকিরের সাথে কর্তৃপক্ষের পূর্বের সম্পর্কের জেরে একাধিক বার অভিযোগ করলেও
আজ হবেনা কাল,কাল গেলে পরশু,তারপরও কোন ভাবেই নজরে আসছেনা মণিরামপুর পৌরসভার। দখলদার ফজলুর ছেলে এখনো তার যুবলীগের সন্ত্রাসী ও মাদক সিন্ডিকেটের প্রভাব গোপনে চালু রাখায় এলাকাবাসি ভয়ে সোচ্চার হয়না।আর সু-সম্পর্কের কারনে পৌরকর্তৃপক্ষের কর্মচারীরা অবৈধ দখলার ফজুলর দোকানে বসে সময় কাটিয়ে হাতে করে বাজারের প্যাকেট নিয়েই চলে যান,দখলমুক্ত করতে নেননা কোন পদক্ষেপ। দোকানে গেলে ফজলু বলেন ‘কাজ করতে আসলে দোকান সরায় নিবো,আর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলেন দোকান না উঠালে কাজ করবো কিভাবে’!
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গনমাধ্যম কর্মীদের সামনেই সহকারি প্রকৌশলী তপু বিশ্বাসকে নির্দেশ দিলেও দখলদারের সাথে তপুর গোপন লেনদেনের কারনে দখলদার তার অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এসমস্ত বিষয়ে পৌর প্রকৌশলী উত্তম মজুমদারকে অবগত করলে তিনি বলেন,আপনি নির্বাহী কর্মকর্তা না হলে তপু সাহেবকে বলেন। আমি এসবের কেউনা!
কর্তৃপক্ষের সেবা পেতে সাধারণ মানুষ নাজেহাল হলেও মণিরামপুর পৌরসভা ভবনের সৌন্দর্য্য বর্ধন ও দপ্তরে চাকচিক্য ঠিকই দৃশ্যমান হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নিশাত তামান্না জানান পর্যায়ক্রমে সব কাজই হবে।সহকারি প্রকৌশলী তপু বিশ্বাসের কার্যক্রমে অবহেলার কথা জানালেও নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্নার নিরবতার কারনে ব্যাবস্থার পরিবর্তে বেড়ে গেছে কর্তৃপক্ষের সেচ্চাচারীতা।
এদিকে ৯টি ওয়ার্ডের ড্রেনেজ ব্যাবস্তার মন্থরতার কারনে সাধারন মানুষের ভোগান্তি এখন চরমে পর্যায়ে। বিশেষে করে বর্তমানে সাপ-পোকা ও মশার উপদ্রব বৃদ্ধির কারনে অধিক আতংকিত মণিরামপুর পৌরবাসী।
সচেতন মহলের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যাবসায়ীরা রাত-দিন মশার প্রকোপে নাজেহাল হয়ে পড়েছে। কোথাও ১টি সেঃ স্থীর হয়ে কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজু ফার্নিচারের পরিচালক রাজু আহমেদ জানান,বাসাবাড়ি কি আর ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান কি সব মশা আর মশা।এরপর তো ডেঙ্গু জ্বর হবে।
গোপন সূত্র বলছে, পৌরসভার প্রকৌশলী শাখার যে প্রকল্পের কাজই হোক না কেনো সহকারি প্রকৌশলী তপু বিশ্বাস একক ভাবে টেন্ডারে কাজ প্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অফিসিয়াল কর্মকর্তার প্রভাব দেখিয়ে মুস্টিমেয় কয়েকজন ঠিকাদার এবং সহকারি প্রকৌশলী তপু বিশ্বাস কাজগুলো বাগিয়ে নিয়ে সরকারি বেতনের সাথে সাথে নিয়মবহির্ভূত ভাবে অতিরিক্ত অর্থ আত্মসাৎ করে চলেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানান, কাজ হলেই তপু সাহেব ও ২/৩জন ঠিকার কাজ করছেন।টেন্ডার জমা দিলে তপু সার নানা ত্রুটি দেখিয়ে নাকচ করছেন।
এ সমস্ত বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ হলে সরাসরি তিনি (তপু) বলেন,কারো নিয়মে কাজ হবেনা।আমার সময় হলে আমি কাজ করাবো।কে কি ভাবলো,আর কে কি করলো তাতে তপুর যায় আসেনা।