
আরিফুল ইসলাম আরিফ ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে স্বামীহারা বেগম সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বেগমের বাড়ি উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রামরাম সেন গ্রামে। তিনি ওই এলাকার মৃত দেলবর হোসেনের স্ত্রী।
বেগম জানান, বিয়ের পর থেকেই অভাব অঘটনের সাথে অবিরাম লড়াইয়ে চলছে তার। একটু সুখের আশায় সন্তানের নিয়ে স্বামীর সঙ্গে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের দিল্লীতে যান। সেখানে গিয়ে স্বামী সন্তানরা মিলে বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করেন। পরিবারের সবার পরিশ্রমে মোটামুটি ভালো আয় রোজগার হতো। ভালোই দিন যাচ্ছিল। তবে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বেগমের স্বামী দেলবর। স্বামীর মৃত্যুতে চার যুবতী মেয়ে ও এক শিশু ছেলে সন্তানকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন তিনি। স্বামীর শোক আর স্মৃতি বুকে লুকিয়ে আবার শুরু করেন জীবন সংগ্রাম। সেখানেই একে একে তিন মেয়ের বিয়ে দেন। কিন্তু আরও এক যুবতী মেয়ে এখনো বিয়ে দেয়া বাকি। পাশাপাশি শিশু সন্তানের ভরনপোষণ। তবুও জীবন বাঁচাতে লড়াই চালিয়ে যান তিনি। রাত দিন হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে ইট ভাটায় কাজ করে তিলতিল করে টাকা সঞ্চয় শুরু করেন। তার স্বপ্ন ছিল জমানো টাকা নিয়ে দেশে ফিরে স্বামীর বসতভিটায় মাথা গোঁজার ঠাঁই করবেন। ধুমধামে মেয়ের বিয়ে দিবেন। কিন্তু ওপারে নির্মম নিষ্ঠুরতায় তার সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে। তার জমানো সবকিছু কেড়ে নিয়ে শূন্য হাতে এক কাপড়ে তাকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে বিএসএফ।
শূন্য হাতে দেশে ফেরত এসে সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বিধবা বেগম। অশ্রুসিক্ত নয়নে বেগম বলেন, সন্তানদের নিয়ে পরের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু তারা আর কয়দিন থাকতে দিবে। পরে ভাঙ্গামোড় ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী ইসলাম হক আমাকে দুই বান্ডিল টিন কিনে দিয়েছে। তা দিয়ে ছাপড়া ঘর তুলে সেখানে বাস করছি। খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে। পানি যে খাব টিউবওয়েল নাই। লেট্রিন নাই। এসব করবো কিভাবে? অন্যের বাড়িতে কাজ খুঁজি, কিন্তু পাই না। এদিকে ঘরে যুবতী মেয়ে তাকে নিয়ে ভাবতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে সমাজের বৃত্তবান ও হৃদয়বান মানুষের সহযোগিতা ছাড়া আমার টিকে থাকার আর কোন উপায় নাই।
দুঃখী বিধবা বেগমের প্রতিবেশীরা জানান, শূন্য হাতে দেশে ফেরত আসা বেগম সন্তাদের নিয়ে সীমাহীন কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। তার দুঃখ লাঘবে সরকারি বেসরকারি সহায়তা প্রয়োজন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু মুসা বেগমের বিষয়ে বলেন, আমি উপজেলা প্রশাসনের সাথে তার সহায়তায় জন্য যোগাযোগ করবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা ত্রাণ পুনর্বাসন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজুদ্দৌলা বলেন, তার এমন পরিস্থিতির বিষয়ে আমি অবগত নই। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।