
হুমায়ুন কবির, কালীগঞ্জ,ঝিনাইদহ :
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর কার্যালয়ে অবাধে চলছে রমরমা ঘুষ বাণিজ্য।
অফিস এলাকা ও কক্ষগুলো সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত এবং দেওয়ালে “দুর্নীতি মুক্ত অফিস ” শটানো স্টিকার লাগিয়ে ভূমি সেবা গ্রহীতাদের নিকট থেকে নেওয়া হচ্ছে ঘুষের টাকা। কালীগঞ্জ উপজেলায় বিশ্ব ব্যাংকের আওতাধীন ছয় লেন রাস্তা তৈরির প্রকল্পে প্রায় ৬ হাজার ভূমি মালিকগণের নিকট থেকে সরকার জমি অধিগ্রহণ করছে। অধিকগ্রহণকৃত জমির মূল্য পেতে মালিকগণের প্রয়োজন হচ্ছে সঠিকভাবে কাগজপত্র প্রস্তুত করার।
এজন্য জমির মালিকগণকে নামজারির অর্ডার শীট সংগ্রহ করতে হচ্ছে কালীগঞ্জ ভূমি অফিস থেকে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে অফিসটির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
এদের মধ্যে অফিস সহকারী তপন কুমার রায় ও নৈশো প্রহরী আরজু আহমেদ অন্যতম। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ভূমি মালিকগণের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নিজ অফিসের স্টাফদের ঘুষ গ্রহণের কথা জেনেও ব্যবস্থা নেন না সহকারি কমিশনার (ভূমি) শাহিন আলম। অর্ডার শীট প্রাপ্তির জন্য আরজু ও তপনকে পদে পদে ১০০-১০০০ ঘুষ দিতে হচ্ছে সেবা গ্রহীতাদের। অনেকের নিকট থেকে বেশি নেওয়া হচ্ছে ঘুষের টাকা। অফিস খরচের নাম করে তারা এসব টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান ।
অথচ ভূমি অফিসে সেবা প্রদানে নগদ টাকা প্রদান বা গ্রহণের কোনো নিয়ম নেয়। দীর্ঘদিন একই অফিসে কর্মরত তপন কুমার রায় এবং নৈশো প্রহরী আরজু মাস ব্যাপী শত শত অর্ডার শীট প্রদান করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ভূমি মালিকগণের নিকট থেকে। ভূমি অফিসে রেজিস্ট্রারে সংরক্ষিত অর্ডার শীট প্রাপ্ত ভূমি মালিকগণের নিকট জানতে চাইলেও মিলবে এর সত্যতা ।প্রকাশ্যে ভূমি অফিসের সামনে গোলঘরে নৈশো প্রহরী আরজু কাগজ কলম নিয়ে সকাল সকাল বসে পড়েন আবেদন করতে।
এজন্য তিনি আবেদনকারীদের নিকট থেকে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। ভূমি অফিসের তপন কুমার অর্ডার শীট দেওয়া বাবদ ৫০০-১০০০ টাকা নেন। রমরমা এ ঘুষ বাণিজ্যের বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে। পৌর এলাকার ৫ নং ওয়ার্ড নিশ্চিন্তপুর মৌজার বাসিন্দা সোহেল রানা জানান, “আমি নামজারি অর্ডার শীট এর আবেদন করতে প্রথমে আরজুর নিকট গেলে আমার থেকে ১০০ টাকা, পরবর্তীতে তপন বাবুর নিকট গেলে তিনি খরচ বাবদ ৫০০ টাকা নেন। যারা আবেন করছেন সবার কাছ থেকেই টাকা নেচ্ছে শুনলাম। ” আড়পাড়া মৌজার বাসিন্দা সজল আহমেদ বলেন, “টাকা ছাড়া অর্ডার শীট পাওয়া যাচ্ছে না।আমি আরজু ও তপন বাবুকে টাকা দিয়েই অর্ডার শীট নিয়েছি। সিসি ক্যামেরার সামনে যেভাবে ঘুষ নিচ্ছে তাতে তো মনে হয় এই অফিসের সবাই ঐ ঘুষের টাকার ভাগ পায় । আবার শুনি কালীগঞ্জ ভূমি অফিস নাকি নাইট গার্ডদের ইশারায় চলে। সরেজমিনে ভূমি অফিসে গিয়ে নৈশো প্রহরী আরজুকে গোল ঘরের চেয়ার টেবিলে বসে ঘুষ গ্রহণ করতে দেখা গেছে ।
এ সময় সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে তপন কুমার নিজ আসন ছেড়ে বাইরে চলে যান। ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগের ব্যাপারে নৈশো প্রহরী আরজু আহমেদ টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। নৈশো প্রহরী পদে চাকরি করে এভাবে বিনা রশিদে টাকা নেওয়ার নিয়ম আছে কিনা এবং এ কাজ করার জন্য তার অফিসিয়ালি অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তপনদা এবং এসিল্যান্ড স্যার ব্যাপারটি জানেন।অফিস সহকারী তপন কুমার রায়ের নিকট ঘুষ গ্রহণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্ডার শীটের জন্য কিছু অফিসিয়াল খরচ আছে, সেই টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর কেউ যদি খুশি হয়ে মিষ্টি খেতে কিছু দেয়, তা নিচ্ছি। কোন জোর জুলুম করছি না।এ পর্যন্ত কতজনকে অর্ডার শীট দিয়েছেন এবং টাকা নেওয়ার ব্যাপারটি এসিল্যান্ড স্যার জানেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি।
বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের ব্যাপারে কালীগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিন আলম বলেন, আমি ছুটিতে আছি।ব্যাপারটি আমার জানার বাইরে। অফিসে যোগদান করলে ভুক্তভোগীদেরকে অফিসে পাঠিয়েন। আমি দেখব।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেদারুল ইসলাম বলেন,সেবা প্রদানে ঘুষ নেওয়ার ব্যাপারটি আমি আপনার থেকে শুনলাম। খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।