মোঃ লুৎফর রহমান লিটন, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দেলুয়া নদীর সে দুটি নির্মাণ আজ ০২ সেপ্টেম্বর রোজ মঙ্গলবার সরু জমিনে গিয়ে দেখা যায় সেতুতে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দেলুয়া
চার বছর আগে শেষ হয়েছে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ। এ সময়ের মধ্যে সেতুটির কাজ হয়েছে ৯৫ শতাংশ। তবে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। ফলে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দেলুয়া নদীর ওপর ৬ কোটি টাকা প্রকল্পের এ সেতুটি পড়ে রয়েছে অকেজো অবস্থায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতায় এখনো সেতুটির সংযোগ সড়ক তৈরি হয়নি। এতে দেলুয়া, রতনকান্দি, সোহাগপুর, মনতলা, বড়ধুলসহ ৮-১০টি গ্রামের প্রায় ৩ লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। মধ্য দেলুয়া এলাকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হচ্ছেন। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ঘুরপথে চলাচল করছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে উপজেলার চরদেলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দেলুয়া বক্কার প্রামাণিকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার খালের ওপর ৯৩২ মিটার চেইনেজ ৭২ মিটার দৈর্ঘ্য আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের ১৪ মার্চ। প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ২৫ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৭ টাকা। চুক্তিমূল্য ছিল ৫ কোটি ৯২ লাখ ৬৪৬ টাকা। সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় মো. মঈনুদ্দীন (বাশি) লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগ রয়েছে, সংযোগ সড়কের পথে রয়েছে সরকারি জায়গা, যা দখল করে বাড়ি তৈরি করেছে ২৫-৩০টি পরিবার। আবার কিছু জায়গা পৈতৃক সম্পত্তি বলেও দাবি করা হচ্ছে।
দেলুয়ার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘নদীভাঙনে আমাদের বাড়ি চলে গেছে। পরে সরকারি জায়গায় বাড়ি করেছি। সরকার যদি রাস্তার জন্য জায়গা নেয়, তাহলে আমাদের থাকার জায়গা থাকবে না।’
স্থানীয় ইমরান আলী বলেন, ‘আমরা যে জায়গায় থাকি, এটা আমাদের পৈতৃক জমি। সরকার চাইলে জায়গা দিতে আপত্তি নেই; কিন্তু আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
মধ্য দেলুয়ার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম মোল্লার বাড়ির পাশেই সেতুটি নির্মিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার মোট ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৫ শতাংশ ব্রিজে গেছে, সংযোগ সড়ক হলে আরও ৩ শতাংশ যাবে। এখন পর্যন্ত ১ টাকাও পাইনি। আমার জমির ন্যায্যমূল্য সরকারের কাছে দাবি করি।’
ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার দাবি করে আল-আমিন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়ে ৬ শতাংশ জমি দিয়েছি। বলেছে ক্ষতিপূরণ দেবে; কিন্তু কবে দেবে, তা জানি না।’
স্থানীয় বাসিন্দা সেরাজুল শেখ বলেন, অসুস্থ মানুষকে নৌকায় করে নিতে হয়। শিশুরা নৌকায় করে স্কুলে যায়। এতে ঝুঁকি থাকে সব সময়।
এ বিষয়ে মো. মঈনুদ্দীন (বাশি) লিমিটেড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে রেজাতে রাব্বি উথান নামের এক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্রিজের কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। ভূমি জটিলতার কারণে কার্পেটিংয়ের কাজ করতে পারছি না। তবে ডিসি অফিস থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ভূমির বিষয়ে বাজেট দেওয়ার কথা রয়েছে। বাজেট পেলে আমরা কাজটি শেষ করতে পারব।’
বেলকুচি উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন বলেন, ‘ব্রিজের দুই পাশে কিছু ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি রয়েছে। অধিগ্রহণ না হওয়ায় সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা যায়নি। আমরা চেষ্টা করছি যতটুকু জায়গা পাওয়া যায়, সেখানে অন্তত সাময়িকভাবে রাস্তার কাজ করতে।
সড়ক ছাড়া সেতু নির্মাণের অনুমোদন কীভাবে হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) রেজাউর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘যেখানে ব্রিজের সংযোগ সড়ক নেই, সেখানে জমি অধিগ্রহণ ধরা থাকে।
আশা করি ব্রিজের কাজ শেষ হওয়ার আগেই জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া এগোবে। তবে এখন নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছি না। প্রকল্পের কাগজপত্র দেখে সঠিকভাবে বলতে পারব।