এস এম তাজাম্মুল,মণিরামপুরঃ
যেখানে সেখানে বড় বড় গর্ত আর ফাটল,ঢালায় থেকে বেরিয়ে পড়েছে লম্বা লম্বা রড ! ঢালায় রাস্তায় কর্তৃপক্ষের পুকুর সমান কারচুপিতে নিম্নমানের কাচামাল ব্যাবহারের কারনে ঢালাই উঠে ভেতরের রড বেরিয়ে আসাতে নতুন সমস্যার সম্মুখীন পথচারী ও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহন সহ সকল যানবাহন কর্তৃপক্ষের সাথে ভুক্তভোগীরাও। যে কোন সময় ঘঠতে পারে দূর্ঘটনা,হতে পারে প্রাণহানী।
তার সাথে বাস-ট্রাকের টায়ারে রাস্তায় বের হয়ে থাকা রড ঢুকে ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ হারানোর শঙ্কা নিয়ে খুবই বিপদজনক ভাবে মণিরামপুর বাজার অতিক্রম করতে হয় বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী বাস ও ট্রাকের ড্রাইভার। ভেংগে যাওয়া স্থানকে পাশ কাটিয়ে চলাচলের জন্য পথচারীদের জায়গা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন,সে ক্ষেত্রে পথচারীর উপর যানবাহন উঠে গেলে ঘটতে পারে দূর্ঘটনা, হতে পারে প্রাণহানি। এমনই কথা জানিয়েছেন কয়েকজন পথচারীরা।
তথ্য মোতাবেক,রাস্তা সংকীর্ণতার কারনে মণিরামপুর বাজারে যানজটের ভোগান্তির সাথে গেলো টানা বর্ষনে নতুন করে যুক্ত হয়েছিলো যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গরুহাট মোড় থেকে খাদ্যগুদাম পর্যন্ত প্রায় ১কিঃমিঃ ঢালাই রাস্তার ছোট বড় মিলিয়ে ৪৭টি গর্ত। এর আগেও একাধিকবার কর্তৃপক্ষ অভিযোগ পেলে রাস্তার গর্তের পুটিং দিয়ে দায় এড়িয়ে গেলেও বর্তমানে উল্লেখিত ঢালায় রাস্তার গর্ত গুলো হতে রড বেরিয়ে এঁকেবেঁকে উঠে আসাতে ভয়ংকর মৃত্যুকূপে পরিনত হয়েছে।
সরেজমিনের চিত্র কেউ খেয়াল না করলেও ব্যাস্ততম মণিরামপুর শহরের বুধবার নিস্তব্ধ রাতের দৃশ্য ধারনে এই প্রতিবেদকের মুঠোফোনের ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়,প্রতিটি যানবাহন রড বের হওয়া গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের মণিরামপুর বাজার অতিক্রমের সময় গুমগুম ও ঝনঝন শব্দ, তার সাথে ড্রাইভারদের বিব্রতকর অশ্লীল ভাষার অভিযোগ কর্তৃপক্ষের গায়ে না লাগলেও সচেতন মহলের দৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে আছে মণিরামপুর বাসী সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সুবিধা বঞ্চিত জনগন।
যশোর সড়ক ও জনপদ(সওজ) এর তথ্য মোতাবেক, ২০২০-২১ অর্থ বছরে যশোরের রাজারহাট থেকে মনিরামপুর হয়ে চুকনগর পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জন্য সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে চারজন ঠিকাদার কাজ করেন বলে জানা যায়। এর মধ্যে মনিরামপুর থেকে চিনেটোলা পর্যন্ত কাজটি সম্পন্ন করে মেসার্স কপোতাক্ষ এন্টারপ্রাইজ। তবে এই ঠিকাদারী কাজের সরেজমিন ও অফিসিয়াল ডকুমেন্টসের সাথে পাওয়া গেছে গড়মিল।
তথ্য অনুসন্ধানে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের খোজ নিতে গেলে জানা যায়, যশোর জেলা আ"লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক যশোর-৬ আসনের এমপি শাহীন চাকলাদের ভাই যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র রেন্টু চাকলাদার ও ঠিকাদার বাবু পাটোয়ারী একক সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত ভাবে দীর্ঘ ৩৮ কিঃ মিঃ রাস্তার ঐ কাজে করেছিলেন নয়-ছয়।
যশোর সড়ক ও জনপদ(সওজ) বিভাগের আওতাধীন রাজারহাট-চুকনগর মহাসড়ক প্রশস্তকরণ এ কাজের মধ্যে মনিরামপুর পৌর শহরের নির্মানকৃত ঢালায় রাস্তার বেশ কয়েক জায়গায় বড় বড় গর্ত ও ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটলের স্থানে ঢালাইয়ের নিচে রডের মাথা বেরিয়ে এসেছে। অসংখ্য গর্ত, ফাটল এবং রাস্তায় পানি জমে গাড়ি ও দূরপাল্লার চলাচলকারী যাত্রীদের ভোগান্তির সাথে বের হয়ে আসা রডের মাথায় লেগে দূর্ঘটনায় সম্প্রতি বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মনিরামপুর বাজারের কুলটিয়া মোড়, থানা মোড়, ফল বাজার, কালী মন্দির, প্রেসক্লাব গেট ও পূরবী সিনেমা হলের সামনে, ভেনাস পয়েন্টের সামনে,লিবার্টির সামনে,বড় বড় গর্ত সহ ফাটলে সড়কের অবস্থা বর্তমানে খুবই নাজুক।
রাস্তার পার্শবর্তী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ,শুরু থেকেই ঠিকাদার এই সড়কে কাজে গড়িমসি করেছেন। বাজারের ভেতর সড়কের দুই পাশে পানি নিষ্কাশনের জন্য কোনো ড্রেন নির্মাণ করা হয়নি। বাজারের বাইরে সড়কের দুই পাশে ড্রেন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হলেও তাতে ময়লা জমে থাকায় পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টির সময় ড্রেনে ময়লা পানি জমে মশার বংশ বিস্তারও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এছাড়া, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার ফলে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। রাস্তায় বড় বড় ফটল হতে বের হওয়া রডের মাথা যে কোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারে এমনই আশংকা করছেন অনেকেই।
এ বেপারে ২০২৩ সালে কাজের বছর না পেরোতেই ফাটল ও গর্ত দেখা দিলে সে সময়,সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরিচালক প্রকৌশলী মাসুদ রানা দাবি করেছিলেন ‘কংক্রিটের সমস্যা থাকায় সড়কের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটল দ্রুত মেরামত করে দেয়া হবে।
পরবর্তীতে সওজের কোন রকম জোড়া-তালিতে চলছিলো মহসড়কের ব্যস্ততম যানবাহন।
যশোর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া জানালেন,সড়কটি ব্যাস্ততম হওয়ায় জমাট প্রক্রিয়া নির্ধারিত সময়ের আগেই যান চলাচলে স্ট্রং না হয়ে নিচেই হাওয়া ঢোকাতে এ বেহাল দশা।
স্থায়ী সমাধানকল্পে একনেকের হস্তক্ষেপ ছাড়া কোন উপায় নাই জানিয়ে আজ-কালের মধ্য মেরামতের বিষয়টি এই প্রতিনিধির কাছে চলতি তথ্য নিশ্চিত করেছেন মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না।
এদিকে সওজ কর্মকর্তারা বলছেন,সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারের জামানতের বিল আটকে রাখা হয়েছে। পরপর ৪টা নোটিশ দিলেও যোগাযোগ করেনি কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।এমতাবস্থায় জনসাধারণের ভোগান্তি লাগবে মেরামত করার কথা জানিয়েছেন সড়ক ও জনপদ(সওজ) কর্তৃপক্ষ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কারচুপি,সড়ক ও জনপদ (সওজ) কর্তৃপক্ষের জোড়াতালি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শমূলক ধারাবাহিক মন্ত্যব্য নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাময়িক নড়েচড়ে বসলেও সংবাদ প্রকাশের পত্রিকা জমা পড়ে দৈনিক সংখ্যার হিসাবের তলানীতে আর পত্রিকার পাতার মতো জনগন চিরচেনা সেই ভোগান্তির চাপেই পড়ে আছে।
এমনকি এ প্রতিবেদন প্রস্তুতকালে তথ্য সংগ্রহের আলোচনা ও জনজরীপে মত প্রকাশে ভুক্তভোগী জনসাধারণ থেকে সচেতন মহলেরও দাবী মণিরামপুর বাজারের রাস্তা অতিদ্রুত প্রশস্থ্যকরনের মাধ্যমে এই জনদূর্ভোগ হতে মণিরামপুর উপজেলা সহ সংশ্লিশ্ট সেবা হতে সুবিধা বঞ্চিতদের মুক্তি দেওয়া হোক।