নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৪০টি। এর মধ্যে ২০টিই খালি। রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদেরও সংকট। অথচ ১০০ শয্যার বিপরীতে প্রায় নয় গুণ রোগী ভর্তি থাকে।
গত রবিবার (১০ আগস্ট) ১০০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯০৮জন। ওই দিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন ৯৯৯ জন রোগী মধ্যে পুরুষ ২৭৪ জন, মহিলা ৪৭৪ জন, শিশু ১৩৬ জন, গর্ববতি ৫১ জন, ডেন্টাল ৬৪ জন। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। নানান সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালের কার্যক্রম।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় রূপান্তরিত করা হয়। ১০০ শয্যার হাসপাতালে বিশেষজ্ঞসহ মোট চিকিৎসক থাকার কথা ৪০ জন। কিন্তু বর্তমানে আছেন ২০ জন। দীর্ঘদিন ধরেই সিনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজি, সার্জারি ও অবেদনবিদ নেই। শুধু চিকিৎসকই নন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদেরও সংকট রয়েছে। সহসেবক, হিসাবরক্ষক, কার্ডিওগ্রাফার, চালকসহ তৃতীয় শ্রেণির ৪০ জন কর্মচারী থাকার কথা কিন্তু আছেন ২৩ জন। অর্থাৎ ১৭টি পদ ফাঁকা।
চতুর্থ শ্রেণির অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, স্ট্রেচার বহনকারী ও ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট পদে ২৩ জন থাকার কথা, আছেন মাত্র ৬ জন। গত রবিবার (১০ আগস্ট) ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন। চার থেকে পাঁচজন চিকিৎসক বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাড়াতে হচ্ছে রোগীদের। দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে না পেরে অনেকেই বসে পড়েছেন মেঝেতেই।
তাদের মধ্যে একজনের নাম রেক্সোনা (৩৪)। তিনি নড়াইল সদর উপজেলার কাগজিপাড়া থেকে এসেছেন চিকিৎসা নিতে। তিনি বলেন, জ্বর, মাথায় যন্ত্রণা ও কাশির সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসছি। দুই আড়াই ঘণ্টা ধরে বসে আছি এখনো সিরিয়াল পাইনি, অনেক ভিড়। আরও মনে হয় এক-দেড় ঘণ্টা লাগবে সিরিয়াল পেতে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রবিবার ১০০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯০৮, যা শয্যাসংখ্যার প্রায় নয় গুণ। ওই দিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন ৯৯৯ জন রোগী। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা দেখা যায়, একেকটি শয্যায় দু-তিন জন করে সেবা নিচ্ছেন। মহিলা ওয়ার্ডের বারান্দার দুই পাশে লাইন দিয়ে মেঝেতে বিছানা পেতেছেন রোগীরা।
ভিতরে ডুকতেই দেখা যায় মেঝতে বেডপেতে শুয়ে আছেন কয়েকজন রোগী। মহিলা ওয়ার্ডের ইনচার্জ জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স শাহিনুর খাতুন বলেন, প্রতিদিন রোগী থাকে শয্যাসংখ্যার অনেক বেশি, যা সামলানো তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। তারপরও তারা চেষ্টা করেন সবাইকে ভালোভাবে সেবা দিতে।
হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আলিমুজ্জামান সেতু বলেন, শিশু ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যার বিপরীতে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি রোগী থাকে। আমাদের কষ্ট হলেও চেষ্টা করছি ভালো সেবা দেওয়ার। এদিকে হাসপাতালের শৌচাগারগুলো অপরিষ্কার, কয়েকটি ব্যবহারের অনুপযোগী।
বিভিন্ন সমস্যার সার্বিক বিষয়ে আরএমও সুজল কুমার বকশী বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের মারাত্মক জনবল সংকট চলছে। প্রতিদিন ধারণক্ষমতার প্রায় তিন গুণ রোগী সামলাতে হচ্ছে, এখানে জনবল অর্ধেকের কম। প্রতিটা সেক্টরেই জনবলের স্বল্পতা।
এই জনবল নিয়েই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু অল্প জনবল নিয়ে আমরা যে সেবা দিতে চাই বা জনগণ যা চায়, সেটা আমরা দিতে পারছি না।