
মুন্না ইসলাম আগুন, রাজশাহী (দুর্গাপুর) প্রতিনিধি :
২০২৪ সালের কথা মনে হলেই মনে পড়ে যায় জুলাই আগস্ট আন্দোলনের কথা। জুলাই শেষ হতেই আগস্ট মাসের শুরুতেই শুরু হল রক্তক্ষয় যুদ্ধ। কোটা আন্দোলন পরবর্তীতে রূপ নেয় সরকার পতন আন্দোলনে ।
এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের জনতা । বিএনপি’র হাই কমান্ড থেকে নির্দেশনা বিএনপি’র অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দকে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ।
শুরু হলো এক দফা দাবি আদায়ের মহাযুদ্ধ ।
আন্দোলনের শুরুটা খুব সহজ ছিল না ।
রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর উপজেলার দুর্গাপুর পাইলট মাঠে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী ও পুঠিয়া দুর্গাপুরের সাবেক সংসদ আব্দুল ওয়াদুদ দ্বারা নির্দেশনা প্রদান করেন বিএনপি জামাত এদের ছেলেদেরকে যেখানে দেখবেন হাত পা ভেঙ্গে দিবেন ।
একদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভয় অন্যদিকে স্বৈরাচারের পোষা পুলিশ বাহিনী।
এরমধ্যে আন্দোলন থেমে থাকে নি ।
৪ ই আগস্ট ২০২৪ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাবার পথে পুলিশি বাধায় আটক হন ধোকড়াকুল ডিগ্রী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ও পানানগর ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা মুন্না ইসলাম আগুন । সেখানে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব ও ছাত্রদের আন্দোলনে মিছিল নিয়ে পুলিশের দিকে আসতে দেখে পুলিশ সেখান থেকে পালিয়ে যায় পরবর্তীতে সেখান থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী জেলা ছাত্রদের মিছিলে অংশগ্রহণ করেন।
সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত তীব্র আন্দোলন চালিয়ে অচল করে দেওয়া হয় রাজশাহী শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো।
এর মধ্যে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অতিষ্ঠ নগরবাসী। আন্দোলন চলছিল আন্দোলনের এক পর্যায়ে ছাত্রদলের মিছিলের নেতৃত্ব প্রদান করেন সেই সময় সর্বোচ্চ জীবনে ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করা রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক আব্দুর সবুর বুলেট। হঠাৎ ফোন আসলো রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজারের পাশে আলোপট্টি মোড়ে ছাত্রলীগের গুলির আওয়াজ আর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার দৃশ্য।
মিছিল তখন রাজশাহীর প্রবেশপথ তালাইমারিতে সেখানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করা বলেন আমাদের আন্দোলন আজকের মত এখানেই স্থগিত আগামীকাল আবার আন্দোলন হবে।
কিন্তু এই দাবি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান সেখানে উপস্থিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সঙ্গে যোগ দেন ছাত্র শিবির সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা । সেই সময় তাদের একটাই কথা শেখ হাসিনার পতন না করে ঘরে ফিরবো না । বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা আন্দোলন শেষ করে বাড়ি আসলেন ছাত্রদল নেতা মুন্না ইসলাম আগুন ।
কিন্তু বাড়ি এসে যেন তার শান্তি নেই ।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে কথা পৌঁছে গেছে যে মুন্না রাজশাহী শহরে সরকার পতন আন্দোলনে গিয়েছিল । শুরু হলো তার ওপর অমানবিক নির্যাতন । তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে একটি বাড়িতে রাখা ছিল তার মোটরসাইকেল ।
আওয়ামী লীগ কুলাঙ্গাররা সেই খবর পেয়ে তাকে দুই মিনিট টাইম দেয় সেখান থেকে মোটরসাইকেল সরিয়ে নেয়ার জন্য অন্যথায় পুরিয়ে ফেলার হুমকি প্রদান দেয়া হয় ।
সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে মোটরসাইকেলটি সরিয়ে নেওয়া পরে খবর আসে তার বাড়িতে পুলিশের অভিযান হবে ।
তখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এদিকে পেটে খাবার নেই পুলিশের ভয়। তাৎক্ষণিক সে ফলো করে তার পিছনে কিছু ছাত্রলীগ বাহিনী নজরদারি করছে ।
বিষয়টি বুঝতে পেরে তাৎক্ষণিক ফোন দেন তার এক ছোট ভাইকে খবর পেয়ে সে সেখানে পৌঁছায় এবং রাত্রি দুইটা পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে ঘোরাফেরা করেন । রাত যত গভীর হচ্ছিল টেনশন যেন বেড়েই চলছিল । তার পর রাত্রি দুইটা ৫০ মিনিট নিরাপদ স্থানে আত্মগোপনে চলে যান তিনি । সেখানে থাকাকালীন মোবাইল ফোন বন্ধ থাকার কারণে কোন খবর পান না তিনি ।
পরবর্তী বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে সেখান থেকে বেরিয়ে মোবাইল ফোন চালু করলে শেখ হাসিনা পতনের খবর পান । এদিকে ফোন বন্ধ থাকায় বিভিন্ন নেতাকর্মী তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে তারা মনে করেন তিনি কঠিন কোন বিপদে পড়েছেন ।
পরবর্তীতে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পোলানোর আনন্দে পানান নগর ইউনিয়ন ছাত্রদলের উদ্যোগে একটি বিশাল আনন্দ মিছিল বের করেন ।
এই সমস্ত ত্যাগ তিতিক্ষার পরেও আজ দলের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন এই সমস্ত ক্ষুদ্র কর্মী ।
তবে তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান অবশ্যই বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামীর রাষ্ট্রনায়ক জনাব তারেক রহমান দেশে ফিরলে এই ক্লান্তি কেটে যাবে। তিনি অবশ্যই ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবেন এই প্রত্যাশা রাখি ।
তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া ও ভালবাসা চান।