মোঃ ওয়াজেদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া এক শিক্ষার্থী, নাম পরিবর্তন করে এখন আয়েশা খাতুন। প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে এসে ধর্মান্তরিত হয়ে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখলেও শেষ পর্যন্ত বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন এই তরুণী। হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে যশোরের কুয়াদা বাজারে। বর্তমানে তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালের বারান্দায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থী ও তার প্রেমিক দু’জনেই অপ্রাপ্তবয়স্ক। দু’দিন আগে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে বিয়ে করেন এবং আশ্রয় নেন যশোরের কুয়াদা গ্রামের মোল্লাডাঙ্গা ছেলের আত্মীয়ের বাড়িতে। প্রেমের সম্পর্ক, ধর্মান্তর ও বিয়ে—সবকিছু মিলিয়ে যখন নতুন জীবনের স্বপ্ন বুনছিলেন তারা, তখনই আঘাত হানে মেয়েটির পরিবার। মেয়েটির বাবা ও ভাই স্থানীয় লোকজন নিয়ে ছুটে যান সেখানে। এরপরই ঘটনাস্থলে আসে ডিবি পুলিশের একটি দল।
সন্ধ্যায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে কুয়াদা বাজারের আখতারুজ্জামানের হার্ডওয়্যার দোকানে বসে সালিশি বৈঠক। সালিশে মেয়েটির পরিবার তাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জোর চেষ্টা চালায়, কিন্তু আয়েশা খাতুন এক কথাই বলতে থাকেন: “আমি জেনে-বুঝে বিয়ে করেছি, আমি স্বামীকে ছেড়ে যাব না।
তবে পরিবারের চাপ এবং ডিবি পুলিশের প্রশ্নবাণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তরুণী। একপর্যায়ে বলেন, “আমাদের মানসিকভাবে টর্চার করবেন না, না হলে আমি বিষ খাব বা গলায় দড়ি দেব।” পরে ‘বাথরুমে যাব’ বলে সরে গিয়ে বিষপান করেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আখতারুজ্জামানের দোকানে বিষের বোতলসহ অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা ও ডিবি পুলিশ তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
পরে জানা যায়, এই শিক্ষার্থীর পূর্ব নাম সোহাগী দাস। তিনি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ২০ জুন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নতুন নাম রাখেন আয়েশা খাতুন। সেদিনই তিনি আব্দুর রহিম নামক মুসলিম যুবকের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে তার পরিবার এ বিয়ে মানতে নারাজ। মেয়েটির বাবা দাবি করেন, তারা নকল জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বিয়ে করেছেন এবং দু’জনেই এখনো প্রাপ্তবয়স্ক নন। তিনি আরও বলেন, “আমার মেয়ে এখনো এইচএসসি শিক্ষার্থী, ওর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার বয়স হয়নি।
এ বিষয়ে ডিবি পুলিশের এসআই অলোক কুমার দে জানান, মেয়েটির পরিবার কেশবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল। সেই সূত্র ধরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালানো হয়। সালিশ চলার সময় হঠাৎ করেই মেয়েটি বিষপান করে বসেন বলে তিনি জানান।
ঘটনাস্থলে থাকা কেশবপুর এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী সম্রাট হোসেন বলেন, “এই মেয়েটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় নেত্রী ছিলেন। তার নেতৃত্বে অনেক শিক্ষার্থী অনুপ্রাণিত হয়েছে। এমন একজন সাহসী কিশোরীর জীবনে এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত।” তিনি আরও জানান, মেয়েটির অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ধর্মান্তর ও প্রেমবিয়ে নিয়ে ঘটনাটিকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে একটি মহল। সাংবাদিকদের ক্যামেরা চালাতে বাধা, সালিশে একতরফা চাপ এবং ডিবি পুলিশের আচরণ ঘিরে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। সালিশ চলাকালীন বিএনপির এক স্থানীয় নেতার ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ডিবি পুলিশের এক সদস্যের বিরুদ্ধে।
ঘটনার পর কুয়াদা জুড়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকাবাসী মেয়েটির সুস্থতা কামনা করার পাশাপাশি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।