স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ
জাতীয় ন্যূনতম মূল মজুরি ৩০ হাজার টাকা ঘোষণা, গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বানে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় যশোর জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে দিনব্যাপী খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের যশোর জেলা সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং
জেলা সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণা সরকার ও যুগ্ম-সম্পাদক কামরুজ্জামান রাজেসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সভায় ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের অন্তর্ভূক্ত সেক্টর ফেডারেশন, বেসিক ইউনিয়ন ও সংগঠনসমূহের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রতিনিধি সভায় বক্তারা বলেন, দেশের শ্রমিক ও শ্রমজীবী জনগণ আজ অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছেন। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্দ্ধগতির পর শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়নি। শুধু তাই দশ মাসের পর মাস কাজ করেও গার্মেন্টস শ্রমিক, চা-বাগানের শ্রমিকসহ বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমিকরা মজুরি ও উৎসব বোনাস পাচ্ছে না। গত ঈদের আগে থেকে গার্মেন্টস শ্রমিকরা বকেয়া মজুরির দাবিতে আন্দোলন করলেও শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করা হয় না। উপরন্তু আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন সময়ে বিগত সরকারের ন্যায় অন্তর্বর্তী সরকারও শ্রমিকদের উপর চড়াও হয়েছে। কোন রকমের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে সরকার যখন-তখন ব্যাটারি চালিত রিকশা ও হকারদের উচ্ছেদ তৎপরতা চালিয়ে লাখ লাখ শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।
শ্রমিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার জনগণও প্রতিদিনই জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছেন। শ্রমিক আন্দোলন দমনে শিল্প পুলিশ গঠন, অত্যাবশকীয় পরিষেবা বিলের খড়গ ঝুলিয়ে রাখার পাশাপাশি সরকারি কর্মচারী (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশ জারী দ্বারা ৮ দিনের নোটিশে যে কোন সরকারি কর্মচারীকে আত্মপক্ষ জবাবের সুযোগ না দিয়েই চাকুরিচ্যূত করা যাবে। কৃষকরাও মাথার ঘাম ফেলে আলু, পিয়াজ, টমেটো, ধানসহ ফলস উৎপাদন করেও ন্যায্য মুল্য পাচ্ছে না। দেশের শ্রমিক-কৃষক-পেশাজীবী জনগণের এই কঠিন সময়ে ’গদের উপর বিষ ফোঁড়া’র মতো বাংলাদেশকে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে। মায়ানমারে ‘মানবিক করিডোর বা চ্যানেল’ প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানা যাচ্ছে।
নয়াউপনিবেশিক ও আধাসামন্তবাদী বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থলসংযোগ সেতু এবং প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগর সংযোগকারী মালাক্কা প্রণালী সংলগ্ন বঙ্গপোসাগরীয় দেশ হওয়ায় এদেশকে নিয়ে ভূরাজনৈতিক ও রণনীতিগত সামগ্রিক গুরুত্ব হিসেবে সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে বিবেচিত হচ্ছে। তারই প্রেক্ষাপটে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের সাথে প্রতিপক্ষ সাম্রাজ্যবাদী চীন-রাশিয়ার প্রতিযোগিতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েই চলেছে। কারণ উভয়েরই জন্যে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মালাক্কা প্রণালীকে কেন্দ্র করে প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরের উপর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্ব বাণিজ্য ও বিশ্ব আধিপত্যের জন্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
এই তৎপরতার অংশ হিসেবে মিয়ানমারকে চীনা প্রভাব মুক্ত করার লক্ষ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার বার্মা অ্যাক্ট চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ধারাবাহিক তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এই তৎপরতার সাথে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ধারাবাহিক কার্যক্রম ও ষড়যন্ত্রের অংশ হচ্ছে তথাকথিত মানবিক করিডোর বা ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণের চ্যানেল।
সুতরাং মানবিক করিডোর বা চ্যানেল প্রদান, চট্টগ্রামের সমুদ্র বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার যে তৎপরতা তা হচ্ছে ডঃ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জাতীয় ও জনস্বার্থবিরোধী নগ্ন ভূমিকা। মানবিক করিডোর বা চ্যানেলের প্রশ্নসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক সাংস্কৃতিক যে সংকট চলছে তা বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়। এটা হচ্ছে বিশ্ব বাজার-প্রভাব বলয় পুনর্বণ্টন নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে তার সাথে সম্পর্কিত। চলমান বৈশ্বিক মন্দার প্রেক্ষিতে বাণিজ্যযুদ্ধ, মুদ্রাযুদ্ধ, প্রযুক্তিযুদ্ধ, স্থানিক ও আঞ্চলিক যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারসহ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদ মূর্ত হয়ে সামনে আসছে।
এর ফলে বিশ্বযুদ্ধ আর বিশ্ববিপ্লব দুটোই অনিবার্য হয়ে বিশ্ব শ্রমিক শ্রেণি, নিপীড়িত জাতি ও জনগণের সামনে আসছে। সাম্রাজ্যবাদী এই সামগ্রিক সংকটের প্রতিফলন হিসেবে অবিশ্বাস্য মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতি, বেপরোয়া শোষণ-লুন্ঠন, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, বেকারত্ব, ধন বৈষম্য, শ্রেণি বৈষম্য তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে চলেছে। এই সামগ্রিক সংকটের প্রতিফলন বাংলাদেশেও পড়ছে। তার ফলে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাড়ছে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা, শ্রমিকদের নামমাত্র মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হওয়া। শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি কমে যাওয়া, সামগ্রিক অর্থনীতি স্থবির হওয়াসহ জাতীয় ও জনজীবন আজ ভয়াবহ সংকট ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে।
ড. ইউনুস জাতীয় ও জনজীবনের সংকটকে পাশ কাটিয়ে জাতীয় ঐক্য ও সংস্কারের নামে সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা অগ্রসর করার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। তারই অংশ হিসেবে জনগণকে অন্ধকারে রেখে মানবিক করিডোর বা চ্যানেল প্রদান, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া ইত্যাদি পদক্ষেপ অগ্রসর করে চলেছে। তাই আজকে ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের নেতাকর্মীদের ১০ দফা দাবিতে জীবিকার সংগ্রামের পাশাপাশি আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে বাংলাদেশকে জড়িত করার বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামও অগ্রসর করে নিতে হবে। নেতৃবৃন্দ সাম্রাজ্যবাদের মদদে ইসরাইল কর্তৃক ইরানে হামলার