মোঃ ওয়াজেদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার:
যশোরের রাজারহাটে চামড়া ব্যবসায়ীরা ভালো নেই, তবে চাপের মুখে পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ মৌসুমি চামড়া বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু।
খুলনা বিভাগের ১০টি জেলা ছাড়াও গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী ও নাটোর থেকে হাজার হাজার ব্যবসায়ী প্রতি বছর এই হাটে ভিড় করেন। ঈদুল আজহা পরবর্তীতে আজ মঙ্গলবার ছিলো প্রথম চামড়ার হাট আর এই হাটে প্রায় শত কোটি টাকার কাঁচা চামড়া কেনাবেচা হয়।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিস্থিতি বদলে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারি নীতি নির্ধারণ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বকেয়া আদায় না হওয়া ও অতিরিক্ত খরচের কারণে তারা দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছেন।
সরকার ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করেছে। খাসি ও বকরির চামড়ার দাম নির্ধারিত হয়েছে যথাক্রমে ২২-২৭ টাকা এবং ২০-২২ টাকা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রাজারহাটে চামড়া মানভেদে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০০ থেকে ৯০০ টাকা পিস দরে, যা সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় অনেক কম।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম চামড়া হাট রাজারহাটের ব্যবসায়ীরা চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। সরকারের নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি না হওয়া, ট্যানারি মালিকদের বকেয়া পরিশোধে অনীহা, লবণের দাম বৃদ্ধি এবং শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে ব্যবসায়ীরা অনেকেই চামড়া বিক্রি করতে দ্বিধায় পড়েছেন, কেউ কেউ আবার চামড়া ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
এক সময় রাজারহাটে হাজারো মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া সংগ্রহ করতেন। এখন সেই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। স্থানীয়রা বলেন, চামড়া ব্যবসায় এখন আর লাভ নেই। বড় ব্যবসায়ীরা দামে চাপে ফেলে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই হাটে ব্যবসা করছেন। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে গত বছরের চামড়ার পাওনা এখনও পাননি। এ অবস্থায় এবারও চামড়া কেনার ক্ষেত্রে অনেক হিসাব-নিকাশ করতে হচ্ছে। তার মতে, ৩০০–৪০০ টাকার চামড়ায় লবণ, শ্রমিক ও পরিবহন খরচ যোগ করলে খরচ দাঁড়ায় ৬০০–৭০০ টাকা, অথচ ট্যানারিরা বেশি দামে কিনতে চায় না।
চামড়ার বাজার স্থিতিশীল রাখতে যশোর জেলা প্রশাসন ৩৭৭টি লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে ২.৫ মেট্রিক টন লবণ বিনামূল্যে দিয়েছে। যশোর রাজারহাট চামড়া হাটের ইজারাদার খুরশিদ আলম বাবু বলেন, গত রবিবারের দিন বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন আহমেদ বৃহত্তম রাজারহাট চামড়ার হাট পরিদর্শন করেন,এবং ব্যবসায়ী ও মালিকদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। খুরশিদ আলম বাবু অভিযোগ করে বলেছেন এই লবণ অনেকেই চামড়ায় ব্যবহার না করে আলাদা ভাবে বিক্রি করেছেন। তবে এই বিষয় জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা ছিল যে ১০ দিনের মধ্যে চামড়া বাইরে কোথাও যাবে না। কিন্তু চামড়া লবণ প্রয়োগ না করে কিভাবে দিনের দিন চামড়া বাইরে চলে যাচ্ছে এটা কিন্তু ভাবার বিষয়।
তিনি আরও বলেন, ট্যানারি মালিকরা বাছাই করে চামড়া কেনে এবং ঠিকমতো মূল্য পরিশোধ করে না। বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এখনও তাদের কাছে কোটি টাকার মতো বকেয়া পায়। তাই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ দিতে হবে। কিন্তু সরকার কেবল ট্যানারি মালিকদের এই সুবিধা দিয়ে আসছে।
ঈদের পরবর্তী সময়ে এখানে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ব্যবসায়ী চামড়া বেচাকেনায় অংশ নেন এবং প্রায় শত কোটি টাকার লেনদেন হয়। কিন্তু বর্তমানে বকেয়া আদায় না হওয়া, খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারে অস্থিরতা থাকায় অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন।