
এমদাদুল হক মনিরামপুর প্রতিনিধিঃ
যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া গ্রামে ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। প্রায় চার মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছে ১১ বছর বয়সী এক শিশু, মামুন হোসেন। হতভাগ্য এই শিশুর পিতা শিমুল হোসেন আজ ভেঙে পড়েছেন সন্তান হারানোর বেদনায়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মামুনের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
মামুন ঢাকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ ইদ্রিস আলীর নাতি এবং শিমুল হোসেনের একমাত্র পুত্র। শিশুটির মা সোনিয়া বেগম বহু আগেই স্বামী শিমুল হোসেনের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। মায়ের না থাকায় মামুন প্রায়ই তার নানাবাড়িতে যাতায়াত করতো। কিন্তু সর্বশেষ যাত্রা যেন ফিরে আসার নয়।
জানা যায়, মামুন তার বাবার বাড়ি থেকে হঠাৎই নানাবাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে যায় এবং এরপর থেকেই নিখোঁজ। এ নিয়ে এলাকায় চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
শিশুটির নানি সাহিদা বেগম, যিনি শিমুল হোসেনের প্রাক্তন শ্বাশুড়ি, যশোর কোর্টে একটি গুমের মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে মনিরামপুর থানার এএসআই শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে শিমুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে চারদিন পর জামিনে মুক্তি পান তিনি।
শিমুল দাবি করেন, তার ছেলে মামুন এর আগেও একাধিকবার বাড়ি থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। তিনি জানান, প্রথমবার খুলনার একটি পুলিশ ফাঁড়ি থেকে মামুনকে উদ্ধার করা হয়,
দ্বিতীয়বার মনিরামপুরের সুন্দলপুরে এক ধানের চাতাল থেকে, তৃতীয়বার বসুন্দিয়া রেলস্টেশন থেকে ঢাকায় পৌঁছে গেলে সেখান থেকে উদ্ধার,
চতুর্থবার ময়মনসিংহ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়।
এই নিয়ে মামুন পাঁচবার নিখোঁজ হয়েছে, তবে সববারই ফিরে এসেছে—কিন্তু এবার আর ফেরেনি।
এদিকে মামুনের মায়ের অতীত জীবন নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। সোনিয়া বেগম বিচ্ছেদের পর তার খালাতো ভাইয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং আবারো গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে ঢাকায় গিয়ে তৃতীয় বিবাহ করেন।
এক বছর পর ব্রেইন স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার মৃত্যুর পর থেকেই তার মা সাহিদা বেগম শিমুল হোসেনকে দায়ী করে আসছেন। শিমুল বলেন,
আমার জীবনের একমাত্র অবলম্বন আমার ছেলে মামুন। ওর আগেও হারিয়ে যাওয়ার অভ্যাস ছিল কিন্তু এবার সে আর ফেরেনি । আমি সন্দেহ করছি কোন শত্রুতা থেকে তোমার ছেলেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি মামুনের নানী সাহিদা বেগম সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক। আমি বিশ্বাস করি সঠিক তদন্ত হলে আমার ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাবে।
এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণ, সমাজসেবক ও মানবাধিকারকর্মীরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শিশুটিকে খুঁজে বের করার দাবী জানিয়েছেন। শিমুল হোসেনের আকুতি,
আপনারা কেউ যদি আমার ছেলের খবর পেয়ে থাকেন, অনুগ্রহ করে জানাবেন। আমি একজন অসহায় বাবা, আমার সন্তান ছাড়া আমি কিছুই চাই না।
নিখোঁজ মামুন হোসেনের গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা, উচ্চতা প্রায় ৪ ফুট, পরনে ছিলো সাদা কালো চেক থ্রি কোয়াটার তার গায়ে ছিলো আকাশি রং এর সোয়েটার। যদি কোনো সহৃদয় ব্যক্তি তার সন্ধান পান, অনুগ্রহ করে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
যোগাযোগ:
মনিরামপুর থানা: 01320-143232
শিমুল হোসেন (পিতা): 01618269777