
মোঃ ইমদাদ মনিরামপুর প্রতিনিধি:
ঢাকুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার নতুন সভাপতি মাওলানা আব্দুল জলিল: অতীতের ছায়া সরিয়ে জনগণের আস্থার পরীক্ষায়
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকুরিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা-র এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মাওলানা মোঃ আব্দুল জলিল। রাজনৈতিকভাবে তিনি জামায়াতে ইসলামীর ঢাকুরিয়া ইউনিয়ন শাখার সভাপতি হিসেবেও সুপরিচিত।
তাঁর এই দায়িত্ব গ্রহণকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর মধ্যে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও আলোচনার ঢল। কারণ, এই মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির অতীত রেকর্ড এলাকায় বেশ বিতর্কিত হিসেবে পরিচিত।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে মাদ্রাসাটির সভাপতি ছিলেন মোঃ সাইদুর রহমান সাইদ হোসেন। তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে ১০-১২ লক্ষ টাকার আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ছিল—নিয়োগপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল এবং মাদ্রাসার ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
এই প্রেক্ষাপটে নতুন সভাপতি মাওলানা আব্দুল জলিল দায়িত্ব নেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে—তিনি কি পূর্বসূরির মতো বিতর্কিত পথে হাঁটবেন, নাকি গড়ে তুলবেন এক আদর্শ ও স্বচ্ছ ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান?
একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“সাইদ হোসেনের সময়ে আমরা কী দেখেছি, তা সবাই জানে। নতুন সভাপতি যেন সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকেন এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেন কেউ আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে।”
একজন অভিভাবক বলেন,
“আমরা চাই মাদ্রাসা হোক নৈতিকতার প্রতীক। আবার যদি নিয়োগ বাণিজ্যের মতো ঘটনা ঘটে, তাহলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভয়ংকর পরিণতি বয়ে আনবে।”
স্থানীয় জনগণের দাবি—মাওলানা আব্দুল জলিল রাজনৈতিকভাবে জামায়াতপন্থী হলেও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে তাঁর হতে হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও নৈতিকতায় অনড়। তাঁরা চান, নতুন সভাপতি যেন অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে মাদ্রাসাটিকে রূপান্তরিত করেন একটি আদর্শ শিক্ষা কেন্দ্রে, যেখানে থাকবে না কোনো আর্থিক লেনদেন, দলীয় প্রভাব বা অনিয়মের সুযোগ।
এলাকার সচেতন নাগরিকরা আরও বলছেন
“শুধু মাদ্রাসাই নয়, এখন যারা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হচ্ছেন, তাঁদের প্রতিও আমাদের অনুরোধ—আগের মতো যেন আর নিয়োগ বাণিজ্য দেখতে না হয়। আওয়ামী লীগ আমলে যেমন অনিয়ম ঘটেছে, নতুন নেতৃত্ব যেন সেটি শুধরে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করেন।”
সব মিলিয়ে, ঢাকুরিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার নতুন সভাপতি মাওলানা মোঃ আব্দুল জলিলের ওপর রয়েছে জনগণের কড়া নজর ও গভীর প্রত্যাশা। এলাকাবাসী আশাবাদী—তিনি ধর্মীয় শিক্ষা, জনআস্থা ও স্বচ্ছ নেতৃত্বের মূল্য বুঝে অতীতের বিতর্কিত পথে হাঁটবেন না, বরং গড়ে তুলবেন একটি আদর্শ শিক্ষার বাতিঘর।