
এমদাদুল হক, মনিরামপুর :
যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় ইতিহাসের সাক্ষ্য বহনকারী এক প্রাচীন নিদর্শনের সন্ধান মিলেছে। উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়নের পাঁচকাটিয়া গ্রামের খইতলা এলাকায় রাস্তার পুনঃনির্মাণ কাজের সময় মাটি খননের মধ্য দিয়ে আবিষ্কৃত হয়েছে পোড়ামাটির তৈরি হরিচাঁদ ঠাকুরের একটি জোড়া মূর্তি। মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে এই অমূল্য নিদর্শনটি উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলজিইডি’র অধীনে পাঁচকাটিয়া এলাকায় একটি কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ কাজ চলছিল। খইতলা মোড় এলাকায় মাটি কাটার সময় শ্রমিকদের চোখে পড়ে একটি ভিন্ন রঙের বস্তু। খুঁড়ে তোলা হলে দেখা যায়, সেটি দুটি মূর্তির সংযুক্ত রূপ — অর্থাৎ জোড়া মূর্তি, যা পোড়ামাটির তৈরি এবং ওজনে প্রায় ১০ কেজি।
উদ্ধার হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন ছুটে এসে মূর্তিটি দেখেন এবং পূজা-অর্চনার ব্যবস্থা করেন। অনেকেই এটিকে অলৌকিক আবিষ্কার হিসেবে গণ্য করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সুশান্ত মন্ডল জানান, উদ্ধার হওয়া মূর্তিটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজনীয় শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জোড়া মূর্তি। তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি এটি বহু পুরনো, সম্ভবত ব্রিটিশ আমলের সময়কার। মূর্তির অবস্থা দেখে বোঝা যায়, এটি বিসর্জনের পূর্বে পূজার অংশ ছিল।”
আরেক স্থানীয় প্রহ্লাদ বক্সী বলেন, “খবর পেয়ে আমরা এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে যাই। মূর্তির আকৃতি ও নির্মাণশৈলী দেখে মনে হয়েছে এটি সাধারণ কোনো মূর্তি নয়, বরং ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন কিছু।”
মণিরামপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সদস্য ও সাংবাদিক দিপু মন্ডল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, “মূর্তিটি নিঃসন্দেহে পোড়ামাটির তৈরি এবং অনেক পুরনো। স্থানীয় প্রবীণদের মতে, খইতলা এলাকায় ব্রিটিশ আমলে বার্ষিক পূজা অনুষ্ঠিত হতো। পূজার শেষে প্রতিমা বিসর্জনের রীতি ছিল। এটি সেই সময়কারই কোনো মূর্তি হতে পারে। এই উদ্ধার কেবল একটি প্রতিমা পাওয়া নয়, বরং মণিরামপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত একটি নিদর্শন।”
মূর্তিটির রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা। তাঁদের মতে, এই ধরনের প্রাচীন নিদর্শন সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ জরুরি।
প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ব্যক্তিবর্গ আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে এ ধরণের আরও নিদর্শন উদ্ধার হলে মণিরামপুর অঞ্চলটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ববহ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হবে।