
মোঃ ওয়াজেদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ঘুড়ি উড়ানো। একসময় গ্রীষ্মকাল এলেই আকাশ রঙিন হয়ে উঠত বিভিন্ন আকৃতির ও রঙের ঘুড়িতে। অথচ প্রযুক্তির আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও সময়ের পরিবর্তনে সেই ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
শনিবার (১৭ মে) পড়ন্ত বিকেলে যশোরের বিভিন্ন মাঠে দেখা মিলেছে কিছু শিশু-কিশোরের ঘুড়ি উড়ানোর চিত্র। যেন একটুকরো পুরনো দিনের স্মৃতি ফিরে এসেছে। তবে স্থানীয়দের মতে, এমন দৃশ্য এখন আর সচরাচর দেখা যায় না। তবে এক সময়ের জনপ্রিয় খেলাটি আজ শুধুই স্মৃতির পাতায়। গ্রামবাংলার প্রতিটি এলাকায় মেলা হলেই শিশু-কিশোরদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ঘুড়ি কেনা ও উড়ানো। ঘুড়ি বানানো, নাটাইয়ে সুতা জড়ানো, আর প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ছিল তাদের আনন্দময় শৈশবের অংশ। কিন্তু বর্তমানে মোবাইল ফোন, ফেসবুক, ইউটিউব ও ভিডিও গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ায় শিশুরা মাঠ ছেড়ে ঘরের ভেতরে বন্দি হয়ে পড়েছে। পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ
কামালপুর গ্রামের আব্দুল হানিফ বলেন,
“যুবক বয়সে জের ঘুড়ি, চিল ঘুড়ি, পতেঙ্গা ঘুড়ি বানিয়ে উড়াতাম। ঘুড়ি বানানো ছিল আমাদের গর্বের বিষয়। এখনকার শিশুরা হয়তো ‘ঘুড়ি’ শব্দটিই চিনবে না।” তিনি আরও বলেন,
ছোটবেলায় গ্রামেই ঘুড়ি বানিয়ে উড়াতাম। ধান কাটা শেষ হলেই খোলা মাঠে ঘুড়ি উড়াতাম বন্ধুরা মিলে। ঘুড়ির সঙ্গে সুতা বেঁধে বাতাসে যে মধুর শব্দ হতো, তা এখনও কানে বাজে। ঘুড়ির সাথে যেন মিশে থাকত আমাদের শৈশবের প্রাণ।” সমাজসেবক আব্দুল হাই বলেন, “ঘুড়ি উড়াতে উড়াতে স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে যেতাম। এখন আর সে দৃশ্য নেই। আমি মনে করি, বছরে অন্তত একবার গ্রামে ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা হলে নতুন প্রজন্ম এ ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হতে পারবে।”
পুরনো কবিতার চরণে স্মৃতি জেগে ওঠে
সুফিয়া কামালের কবিতার লাইন—
“আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি, তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।” আজও স্মরণ করিয়ে দেয় ফেলে আসা শৈশবের রঙিন দিনগুলোর কথা।
ঘুড়ি শুধুমাত্র একটি খেলাই নয়, এটি ছিল একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, শৈশবের আনন্দময় স্মৃতি। এখন সময় এসেছে এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার, নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার। গ্রামের মাঠে আবার যেন উড়তে পারে রঙিন ঘুড়ি, ছুঁতে পারে শৈশবের আকাশ।