ইমদাদুল হক মনিরামপুর:
চলতি বছরের ৭ই মে, রাত আনুমানিক ১০টা ৩০ মিনিটে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মুন্সিখানপুর গ্রামে এক যুবকের গলা কেটে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা চাউর হয়।
মুহূর্তেই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
স্থানীয় সাংবাদিক সংগঠন ‘মণিরামপুর রিপোর্টার্স ক্লাব’-এর কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের সময় সন্দেহের তীর ঘুরে যায় ঘটনাটির তথাকথিত ভিকটিম হাসান আলীর (১৮) দিকে, যিনি মুন্সিখানপুর গ্রামের সাত্তার আলীর ছেলে এবং একটি কোম্পানির পণ্য সরবরাহকারী ভ্যানচালক।
তদন্তে উঠে আসে, হাসান আলী দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল ভিত্তিক ক্যাসিনো জুয়ায় আসক্ত ছিলেন এবং ৫টি নগদ এজেন্টের মাধ্যমে নিজের একাউন্টে বারবার টাকা নিয়ে জুয়া খেলতেন।
ধারণা করা হচ্ছে, আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পেতেই তিনি নিজেই নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে ঘটনাটিকে ছিনতাই আখ্যা দেন। অথচ ওই টাকার প্রকৃত মালিক ছিলেন কোম্পানির ডিলার মোঃ আজহারুল ইসলাম, যিনি বলেন, "এর আগেও হাসান আমার আর্থিক ক্ষতি করেছে। তার মায়ের অনুরোধেই তাকে কাজে নিয়েছিলাম।"
আজহারুল আরও জানান, "ঘটনার দিন খুব বেশি কাজ না থাকলেও হাসান অযথা মার্কেটে দেরি করে। রাত ৯টা ৩৯ মিনিটে তার সঙ্গে আমার কথা হয়। কিছুক্ষণ পরেই শুনি সে ‘গলাকাটা’ নাটক সাজিয়েছে।”
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনার রাতে হাসানকে বারবার কোম্পানির ভ্যান নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার গলার ক্ষত গুরুতর ছিল না এবং তা ইচ্ছাকৃতভাবে সাবধানে করা হয়েছে বলেই ধারণা করছেন তারা।
এই ঘটনা ফাঁস হতেই হাসান আলী আত্মগোপনে চলে যান। একইসঙ্গে তার পক্ষ নেন স্থানীয় ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আঃ আলেক। অভিযোগ রয়েছে, তিনি মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করে হাসানের অনুপস্থিতিতেই শালিসে তার পক্ষ নেন এবং নিজেই ‘আসামির’ চেয়ারে বসেন! পরে ১১ই মে গভীর রাতে ৩৮,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ আজহারুল ইসলামের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এই ক্ষতিপূরণের কথা স্বীকার করেছেন ডিলার আজহারুল ইসলামও।
উল্লেখ্য, এর আগে সাভারে এক তরুণী সমকামিতার অভিযোগে নিজের বাবাকে হত্যা করে ধর্ষণের অপবাদ দিয়েছিল। তদন্তে তার মিথ্যাচার ফাঁস হলে বর্তমানে সে কারাগারে। দুটি ঘটনাতেই অপরাধী নিজেই 'ভিকটিম' সেজে আইন ও সমাজকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, যা গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে মণিরামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ইমদাদুল হক জানান, "ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।