এমদাদুল হক মনিরামপুর (যশোর):
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার জয়পুর কোচ বিলে কৃষিজমি রক্ষায় এবং সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশনের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী চাষিরা।
বুধবার সকাল ১১টায় কোচ বিল সংলগ্ন এলাকায় এই মানববন্ধনে শতাধিক কৃষক অংশ নেন।
চাষিদের অভিযোগ, একসময় এই কোচ বিল ছিল তিন ফসলি জমি—যেখানে বছরের তিন মৌসুমেই ধানসহ নানা ফসল উৎপাদন করা হতো। কিন্তু বর্তমানে কিছু প্রভাবশালী ও লোভী ঘের মালিকের কারণে সেই উৎপাদন আজ হুমকির মুখে।
কৃষকরা বলেন, এলাকার সহজ-সরল চাষিদের মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখিয়ে ১০ থেকে ২০ বছরের চুক্তিনামা করিয়ে নিচ্ছে কিছু অসাধু ঘের ব্যবসায়ী। পরে সেই জমিগুলোতে মাছ চাষের জন্য ঘের খনন করে, যা সম্পূর্ণ কৃষি আইন পরিপন্থী। ঘের তৈরির ফলে চারপাশের আবাদি জমিতে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে—আষাঢ় ও শ্রাবণে—বৃষ্টির পানি জমে থেকে যায়, ফলে সেই জমিতে আর ধান চাষ করা সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়ে চাষিদের অতিরিক্ত খরচ করে সেচ পাম্প ভাড়া করে পানি নিষ্কাশন করতে হয়। এতে করে একদিকে যেমন সময় নষ্ট হয়, অন্যদিকে খরচ বেড়ে যায় বহুগুণ।
চাষিরা বলেন, অনেক সময় একমাত্র ফসলটুকুও ঘরে তুলতে পারি না। পরিবার চালানো, সন্তানদের পড়াশোনা, ঋণ শোধ—সবকিছুতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ এই জমিগুলো আমাদের পূর্বপুরুষের হালচাষ করা ফসলি জমি। আজ সেই জমিতে দখলের রাজত্ব কায়েম করেছে কিছু লোভী ঘের মালিক।
সম্প্রতি কোচ বিলে নতুন করে একটি ঘের খননের চেষ্টার খবর পেয়ে চাষিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্নার কাছে অভিযোগ জানান। ইউএনও ঘটনাস্থলে এসে সরেজমিনে পরিদর্শন করে আপাতত ঘের খননের কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন।
কৃষকরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন—অবৈধ ঘের অপসারণ করে কৃষিজমির স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। একই সঙ্গে যারা জোর করে কৃষিজমি দখল করে ঘের বানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
চাষিরা বলেন, আমরা আর ঘের চাই না, চাই আমাদের ফসলি জমি ফেরত। চাই বাঁচার অধিকার।