আবদুল কাদির জীবন, সিলেট:
সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার দুহালিয়া জমিদার পরিবারের কৃতি সন্তান দেওয়ান মাহদি যুক্তরাজ্যের ঐতিহ্যবাহী দি অনারেবল সোসাইটি অব লিংকন্স ইন থেকে ‘বার অ্যাট ল’ অর্জন করেছেন। গত বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ ২০২৫) তিনি ‘কল টু দ্যা বার’ নেন, যা তার দীর্ঘদিনের পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের এক অনন্য স্বীকৃতি।
দেওয়ান মাহদি কেবল আইন পেশায় নয়, ব্রিটেনে ব্যবসায়ী ও আইনজীবীদের সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। তিনি বর্তমানে ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র ২০২৪-২০২৬ মেয়াদের নির্বাচিত ডাইরেক্টর জেনারেল। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৪০০-এর বেশি আইটেম ইংল্যান্ডে রপ্তানি হয়, যা বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের বর্তমান ট্রেড ভ্যালুকে ৪ বিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি করেছে। ব্যবসায়িক খাতে তার অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
আইন পেশায়ও তিনি ব্রিটেনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ২০২১-২০২২ সেশনের জন্য তিনি ‘দি সোসাইটি অব ব্রিটিশ-বাংলাদেশী সলিসিটরস’ (এসবিবিএস)-এর নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন। প্রায় ১৬ বছর আগে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস-এর দি ল সোসাইটি হলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি লর্ড ফিলিপসের উপস্থিতিতে সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়।
গণমাধ্যমেও তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ২০১১-২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি ব্রিটেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল এস-এর লিগ্যাল অ্যাডভাইজরি প্রোগ্রামের উপস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তাকে ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।
দেওয়ান মাহদি শুধু আইন ও ব্যবসায় নয়, ব্রিটেনের মূলধারার রাজনীতিতেও সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। ২০১৮ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় তার পক্ষে ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এবং হাউস অব লর্ডস-এর সদস্য লর্ড মাইকেল বেটস প্রচারণায় অংশ নিলে বিষয়টি ব্রিটেনে আলোড়ন তোলে। বর্তমানে তিনি ডেগেনহাম ও রেইনহাম নির্বাচনী এলাকায় কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
দেওয়ান মাহদি জন্মগ্রহণ করেছেন সুনামগঞ্জের দুহালিয়া জমিদার পরিবারে। তিনি আসাম পার্লামেন্টের সাবেক এমপি (১৯৩৭) ও ভাষাসৈনিক দেওয়ান আহবার চৌধুরী বিদ্যাবিনোদের নাতি এবং কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান এ এইচ মাহমদ রাজা চৌধুরীর চাচাতো ভাই।
তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় সিলেট দি এইডেড হাই স্কুলে। কর্মজীবনে বিলেতে যাওয়ার আগে তিনি স্কলারহোম কলেজ ও সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত ছিলেন।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। তিনি কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট মোবাইল পাঠাগার, সিলেট লেখক পরিষদ, সিলেট ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি ও সিলেট রেড ক্রিসেন্টের আজীবন সদস্য। এছাড়া তিনি ‘কেমুসাস-দেওয়ান আহবাব স্বর্ণপদক’ প্রবর্তন করেন, যা তার পারিবারিক ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতার অংশ।
২০০৬-২০০৭ সালে তিনি রোটারেক্ট ক্লাব অফ সিলেট সুরমার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার নেতৃত্বে সিলেট সুরমা সে বছর বাংলাদেশের সেরা ক্লাবের স্বীকৃতি লাভ করে। একই বছর তিনি ভারতে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়া ইয়ুথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড রাইলা-তে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের টিম লিডার হিসেবে নেতৃত্ব দেন।
দেওয়ান মাহদির এই সাফল্য সিলেটসহ গোটা বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়। তার অর্জন নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং ব্রিটেন ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা, আইন ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আরও দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।