
হুমায়ুন কবির, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ:
শব্দের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও রং-তুলির আঁচড়ে জীবনের গল্প বলেন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী কিশোরী সাদিয়া সুলতানা। তাঁর তুলির স্পর্শে ফুটে ওঠে আবু সাঈদের আত্মত্যাগ, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, গ্রামীণ জীবন, নদী, মেঠোপথ, কৃষকের ঘরসহ বাংলার অপরূপ দৃশ্যপট।
১১ বছর বয়সী সাদিয়া ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মধুগঞ্জ বাজারের বনানীপাড়ার বাসিন্দা মশিউর রহমান ও শাহনাজ পারভীন দম্পতির কন্যা। জন্মের দুই বছর পর জানা যায়, সে শুনতে ও বলতে পারে না। চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করেন, সে আজীবন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীই থাকবে।
কিন্তু তার এই প্রতিবন্ধকতা দমিয়ে রাখতে পারেনি প্রতিভাকে। ঢাকার মহাখালীতে শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর সাদিয়া সেখানে থাকা চিত্রগুলোর প্রতি গভীর মনোযোগী হয়ে ওঠে। বাড়ি ফিরে কলম দিয়ে দৃশ্য আঁকতে শুরু করে। মেয়ের আগ্রহ দেখে বাবা-মা রং-তুলি ও কাগজ কিনে দেন। এরপর থেকেই শুরু হয় তার ছবি আঁকার পথচলা।
মাত্র ছয় বছর বয়সে ঢাকা শিশু একাডেমির এক প্রতিযোগিতায় চিত্রাঙ্কনে প্রথম হয়ে সাদিয়া জয়ী হয়। বর্তমানে সে ঝিনাইদহ শিল্পকলা একাডেমীর নিয়মিত ছাত্রী এবং বিভিন্ন জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার অর্জন করেছে।
বন্ধুদের ভালোবাসা ও শিক্ষকের প্রশংসা
শহরের সলিমুননেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়ার সহপাঠীরা তাকে দারুণ বন্ধু হিসেবে জানে। তার বন্ধু সিথি, আনিকা ও সুমনা জানায়, “সাদিয়া কথা বলতে না পারলেও আমরা ইশারা ভাষায় বুঝি। সে খুব ভালো ছবি আঁকে, তার প্রতিভা দেখে আমরা মুগ্ধ।”
ঝিনাইদহ শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “সাদিয়ার চিত্রাঙ্কনের প্রতি একাগ্রতা ও ভালোবাসা অসাধারণ। সে প্রচণ্ড মেধাবী, ভবিষ্যতে অনেক দূর যাবে।
পরিবারের ভালোবাসা ও স্বপ্নপূরণের লড়াই
সাদিয়ার মা শাহনাজ পারভীন আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, “আমার মেয়ে কথা বলতে না পারায় অনেকে তাকে এড়িয়ে চলে, এতে সে কষ্ট পায়। কিন্তু সে খুব শান্ত ও দায়িত্ববান। ছবি আঁকা নিয়েই তার স্বপ্ন। দেশের বাইরে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায়। আমরা তার পাশে আছি, সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।”
পরিবার, শিক্ষক ও বন্ধুদের সহযোগিতায় সাদিয়া এগিয়ে চলেছে সাফল্যের পথে। তার প্রতিভা যেন প্রতিবন্ধকতার দেয়ালে আটকে না যায়—এটাই সবার প্রত্যাশা।