
মোঃ লুৎফর রহমান লিটন, সিরাজগঞ্জ :
সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল-নলকা মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা বেড়েই চলেছে। যমুনা বহুমুখী সেতু পার হওয়ার পর থেকে এই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রায় প্রতিদিনই ডাকাতি হচ্ছে। বিশেষ করে রাতের বেলা ডাকাত চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক ঘটনায়, ৬ মার্চ ২০২৫ রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ি কোনাপাড়া এলাকা থেকে শেরপুরগামী এসএসআরএম কোম্পানির ১৪ টন রড নিয়ে দুটি ট্রাক রওনা দেয়। পথে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার শোলমাইল এলাকায় ডাকাতরা দুটি প্রাইভেটকার নিয়ে এসে র্যাব পরিচয়ে ট্রাক থামিয়ে চালক ও সহকারীকে হাত-পা বেঁধে তুলে নেয়। পরে তারা ট্রাক ছিনতাই করে এবং ৮ মার্চ ভোরে সলঙ্গা থানার সাতটিকরি এলাকায় চালক ও সহকারীকে ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনায় রডের মালিক রায়হান আলী ও ট্রান্সপোর্ট মালিক রবিউল আওয়াল রায়গঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তে নেমে রায়গঞ্জ থানা পুলিশ পাঁচলিয়া বাজারের রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী এরশাদুল ইসলামের দোকান থেকে লুট হওয়া রড উদ্ধার করে। পুলিশের অভিযানে দোকানের ম্যানেজার সাদ্দামকে আটক করা হয়। এছাড়া, সলঙ্গা থানা পুলিশ আশরাফুলের একটি চোরাই গুদামে অভিযান চালিয়ে ডাকাত চক্রের আরও এক সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং লুটের রড উদ্ধার করে। তবে এখনো পলাতক রয়েছে মূল অভিযুক্ত এরশাদুল ইসলাম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এরশাদুলের ভাই ভাটা রফিক দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কের চোরাই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে বিএনপি পরিবারের সদস্য বলে পরিচয় দিচ্ছেন। ভাটা রফিকের ছত্রচ্ছায়ায় এরশাদুল চোরাই রড-সিমেন্টের ব্যবসা চালাতেন। মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতদের লুট করা মালামাল রাতের আঁধারে তার দোকানে নিয়ে যাওয়া হতো।
ভাটা রফিকের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে চাঁদাবাজি, জমি দখল, চেক জালিয়াতি, এমনকি মামলার বাদীকে অপহরণের অভিযোগও রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, তার প্রভাবের কারণে এলাকার কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না।
এ বিষয়ে সলঙ্গা থানার ওসি মো. মোখলেছুর রহমান জানান, তিনি এই ডাকাতির বিষয়ে এখনো জানেন না। তবে ১২ তারিখে যোগদানের পর থেকে ঈদ সামনে রেখে ৯টি টিম মাঠে কাজ করছে এবং এ ধরনের ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রায়গঞ্জ থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দোকান মালিক এরশাদ পলাতক রয়েছে এবং তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
স্থানীয়রা মনে করছেন, এরশাদুল ইসলাম গ্রেপ্তার হলে হাটিকুমরুল-নলকা মহাসড়কের চুরি ও ডাকাতির ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে। তারা দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।